ঢাকাঃ রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের উন্নয়ন খাতে গত কয়েক মাসে ১০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। চলতি মাসে এ বিষয়ে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরে (ডিআইএ) লিখিত অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, আর্থিক অনিয়মের মূলে রয়েছেন মতিঝিল আইডিয়ালের অধ্যক্ষ ফাওজিয়া রাশেদী, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. মিজানুর রহমান ও সহকারী প্রধান শিক্ষক রুকুনুজ্জামান শেখ। মতিঝিল আইডিয়ালে ভর্তি বাণিজ্যসহ আর্থিক দুর্নীতির বিষয়ে আগে থেকেই তদন্ত করছে ডিআইএ।
ভর্তি ও বদলি বাণিজ্য
কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, গভর্নিং বডির শিক্ষক প্রতিনিধি (সংরক্ষিত) মাকসুদা আক্তার তিনজন শিক্ষার্থী ভর্তির তদবির করেছেন। অভিভাবক সদস্য (উচ্চ মাধ্যমিক) সোহেল আহমদ সিদ্দিকী আট শিক্ষার্থীকে ভর্তির তদবির করেছেন। এ ছাড়া অভিভাবক সদস্য (মাধ্যমিক) অধ্যাপক মো. আমজাদ হোসেন পাঁচজন, অভিভাবক সদস্য (সংরক্ষিত) আজিজা বেগম দুজন, শিক্ষক প্রতিনিধি (স্কুল) রুকুনুজ্জামান শেখ দুজন, শিক্ষক প্রতিনিধি (কলেজ) মো. মিজানুর রহমান তিনজন, গভর্নিং বডির সদস্য মো. শাহাদাত ঢালি ছয়জন, দাতা সদস্য খন্দকার মুশতাক আহমেদ ছয়জন, সদস্য গোলাম আশরাফ তালুকদার সাতজন ও বিভিন্ন মাধ্যমে আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী ভর্তির তদবির করা হয়েছে।
সম্মানী বাবদ অর্থ ভাগাভাগি
অভিযোগে আরো বলা হয়, ২০২২ ও ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের বিভিন্ন শ্রেণিতে ভর্তি ফরমের টাকা বাবদ মোট প্রায় ৫০ লাখ টাকা অধ্যক্ষ এবং গভর্নিং বডির অন্য সদস্যরা ভাগ-বাটোয়ারা করেন।
বিষয়টি তদারকি করেছেন রুকুনুজ্জামান শেখ। আবার ২০২১ সালে শিক্ষকদের জন্য বরাদ্দকৃত তহবিল থেকে সাংবাৎসরিকের টাকা বাবদ মোট ছয়টি ভাউচার ও পে স্লিপের মাধ্যমে ৩৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। জিবি সভাপতি (ডাক ও টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব) আবু হেনা মোরশেদ জামান ও বিদ্যোৎসাহী সদস্য শহিদুল ইসলাম ছাড়া সব সদস্য এই সম্মানীর অর্থ তুলেছেন।
দেখা গেছে, ২০২২ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি বাবদ সম্মানী নিয়েছেন অধ্যক্ষ ফাওজিয়া রাশেদীসহ গভর্নিং বডির সদস্যরা।
এই খাতে বরাদ্দ ৬৮ হাজার টাকার মধ্যে অধ্যক্ষসহ জিবি সাধারণ সদস্যরা পাঁচ হাজার টাকা হারে তুলেছেন। এ ছাড়া ২০২২ শিক্ষাবর্ষে সাংবাৎসরিক (বছরব্যাপী) পরীক্ষার সম্মানী হিসেবেও ভাগাভাগি করেছেন ছয় লাখ ৩৩ হাজার ৫০০ টাকা। অধ্যক্ষসহ জিবি সাধারণ সদস্যরা ৫০ হাজার টাকা হারে সম্মানী নিয়েছেন।
অধ্যক্ষ ফাওজিয়া রাশেদী বলেন, ‘অভিযোগ থাকলে বলেন সব ডকুমেন্ট নিয়ে আসতে।’ ১০ কোটি টাকা আত্মসাতের বিষয়ে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি কল কেটে দেন।
সহকারী প্রধান শিক্ষক রুকুনুজ্জামান শেখ বলেন, ‘শিক্ষার্থী ভর্তি বাবদ সম্মানী আগে আরো বেশি পাওয়া যেত। এখন এই অর্থ অনেক কমে গেছে।’ জিবি সদস্যদের মধ্যে সাংবাৎসরিক অর্থ ভাগাভাগির বিষয়ে তিনি বলেন, শিক্ষকদের অর্থ শিক্ষকরা নেবেন এটাই স্বাভাবিক।
ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, ‘শুধু ভর্তি কমিটিতে যুক্ত সদস্যরা ভর্তি বাবদ সম্মানী নিতে পারেন। শিক্ষকদের সাংবাৎসরিক বরাদ্দ থেকে জিবি সদস্যদের সম্মানী নেওয়া যায় কি না, বিষয়টি আমার জানা নেই।’
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) কলেজ শাখার পরিচালিক অধ্যাপক মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী বলেন, ‘গভর্নিং বডির নিজস্ব কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আছে। তবে শিক্ষকদের জন্য সাংবাৎসরিক বরাদ্দ বিষয়ে আমার জানা নেই।’
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৬/১০/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.