মাউশির কোন নির্দেশনা মানে না লায়ন ফেরদৌস আলম ফিরোজ কলেজ
নিজস্ব প্রতিবেদক, টাঙ্গাইলঃ জেলার কালিহাতির লায়ন ফেরদৌস আলম ফিরোজ কলেজ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে রোজার ছুটির মধ্যেই চলছে ক্লাস ও পরীক্ষা।
মাউশি সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ মার্চ থেকে সরকারি-বেসরকারি হাইস্কুল এবং কলেজে শুরু হয়েছে রমজানের ছুটি। এই ছুটির মধ্যে কোনভাবেই প্রতিষ্ঠান খোলা রেখে শিক্ষার্থীদের ক্লাস পরিক্ষা নেওয়া যাবে না বলেও নির্দেশনা দিয়েছি মাউশি।
লায়ন ফেরদৌস আলম ফিরোজ কলেজের একাধিক অভিভাবকদেরর সাথে কথা বলে জানা গেছে, রোজায় বাংলাদেশের সব কলেজ বন্ধ থাকলেও এই কলেজে শিক্ষার্থীদের জোর করে ক্লাস ও পরীক্ষায় উপস্থিতি হতে বাধ্য করছেন।
প্রতিবছর শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল কলেজের বাৎসরিক ছুটির তালিকা প্রকাশ করলেও তার কোন কর্ণপাত করেননা প্রতিষ্ঠানটি। সরকারি ছুটি তালিকাকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে নিজস্ব ছুটির তালিকা প্রণয়ন করেন কলেজের অধ্যক্ষ এবং প্রতিষ্ঠাতা ও গভর্নিং বডির সভাপতি।
কলেজের নিজস্ব বাৎসরিক ছুটির তালিকা থেকে দেখা গেছে, পবিত্র লায়লাতুল কদর, পবিত্র ঈদুল ফিতর এবং গ্রীষ্মকালীন অবকাশ মিলে মোট ৭ দিনের ছুটি। যেখানে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ছুটির তালিকা থেকে দেখা গেছে, ইস্টারসানডে, চৈত্র সংক্রান্তি, বাংলা নববর্ষ, জুমাতুল বিদা, স্বাধীনতা দিবস এবং ঈদুল ফিতরের বন্ধ মিলে ছুটি থাকবে ২৩ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল।
আগামী ৩০ মে থেকে চলতি বছরের উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের টেস্ট (নির্বাচনী) পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে। গত রবিবার (২ এপ্রিল) আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মো. আবুল বাশার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আসন্ন ২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানানো যাচ্ছে যে, ৩০ মে নির্বাচনী পরীক্ষা শুরু হবে। আগামী ২১ জুনের মধ্যে এ পরীক্ষা শেষ করতে বলা হয়েছে।
লায়ন ফেরদৌস আলম ফিরোজ কলেজ শুধু মাউশি কেই উপেক্ষা করেনি তারা মানে না ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনাও। যেখানে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ৩০ মে থেকে শুরু করে ২১ জুনের মধ্যে এইচএইচসি নির্বাচনী পরীক্ষা সম্পন্ন করতে বলেছে সেখানে প্রতিষ্ঠানটি আগামী ১৫ এপ্রিল থেকে শুরু করছে নির্বাচনী পরীক্ষা। সে মোতাবেক পরীক্ষার রুটিনও প্রননয়ন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে শুরু করেছে একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা। যা চলমান।
একাধিক অভিভাবক অভিযোগ করেন, ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হলেও এখনও প্রভাব রয়েছে প্রতিষ্ঠাতার, চলে ব্যক্তিমালিকাধীন প্রতিষ্ঠানের মত। নিজস্ব নিয়মে প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয়। কোন শিক্ষার্থী একদিন কলেজে আসতে না পারলে ৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা দিতে হয়। পরীক্ষায় ফেল করলে জরিমানা দিতে হয়। এ 'ফি' সে 'ফি' মিলে ইচ্ছে মত অর্থ আদায় করা হয়। এখানে দেখার কেউ নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে লায়ন ফেরদৌস আলম ফিরোজ কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ শাহজাহান কবীর শিক্ষাবার্তা'কে বলেন, আসলে রোজায় করোনার ক্ষতি পোষাতে অভিভাবকদের অনুরোধে আমরা ক্লাস পরীক্ষা নিচ্ছি যেন ফলাফল ভাল করতে পারে। ফলাফল ভালো করা এবং কভিডের ক্ষতি পোষানোই আমাদের লক্ষ্য। অভিভাবকদের অনুরোধে রোজার ছুটিতে মাউশির নির্দেশনা উপেক্ষা করে ক্লাস পরীক্ষা নিচ্ছেন তবে কলেজের বার্ষিক পঞ্জিকায় কিভাবে রোজার ছুটি ১৯ এপ্রিল থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত দেওয়া হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি প্রতিষ্ঠাতা ও গভর্নিং বডির সভাপতির সাথে কথা বলে আপনাকে জানাব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির সভাপতি ও প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠাতা লায়ন ফেরদৌস আলম ফিরোজের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লায়লা খানম শিক্ষাবার্তা'কে বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেওয়া ছুটির তালিকা অনুযায়ী সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। এখন কলেজ খোলা রাখার কোন সুযোগ নেই। বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি বিষয়টি দেখছি। এখনই বন্ধের নির্দেশ দিচ্ছি।
উল্লেখ্য, লায়ন ফেরদৌস আলম ফিরোজ কলেজের গভর্নিং বডির নির্বাচনে কোন ধরণের নির্বাচন প্রতিষ্ঠানটিতে উনুষ্ঠিত হয়নি। শুধুমাত্র খাতা কলমে নির্বাচন দেখিয়ে গত তিনবার কমিটি গঠন করা হয়েছে গর্ভনিং বডির সভাপতি এবং তাদের মদদ পুষ্ট ব্যক্তিদের দিয়ে। এ নিয়ে প্রতিবেদন দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৪/০৪/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়