শুধু স্পট পরিবর্তন, থামেনি কর্মচারি হারুনের মাদক সেবন
নিজস্ব প্রতিবেদক, দিনাজপুরঃ দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড কর্মচারী হারুন অর রশিদের মাদক সেবনের ভিডিও ভাইরাল এবং সংবাদ প্রকাশের পরও কোন ধরনের ব্যবস্থা না নেওয়ায় শুধু মাদক সেবনের স্পট পরিবর্তন হয়েছে। চলছে নিয়মিত মাদক সেবন। নিশ্চুপ দিনাজপুর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড। এ ঘটনাকে বোর্ড কর্মচারীদের মধ্যে মাদকের উৎসাহ বাড়াতে পারে বলে মত দিয়েছেন বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী। বোর্ডের একাধিক কর্মচারী শিক্ষাবার্তা'কে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, মাদক সেবনের ভিডিও ভাইরাল এবং সংবাদ প্রকাশের পর কয়েকদিন নিশ্চুপ থেকে তিনি পুনরায় মাদক সেবন শুরু করেছেন।
আরও পড়ুনঃ শিক্ষা প্রশাসনে বড় বদলি, ওএসডি
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বোর্ডের বিদ্যালয় অনুমোদন শাখায় উচ্চমান সহকারী পদে কর্মরত হারুন অর রশীদের মাদক সেবনের ভিডিও ভাইরাল ও শিক্ষাবার্তায় সংবাদ প্রকাশ হবার আগে অফিস সময় চলাকালীন প্রকাশ্যে ও বিভিন্ন সময়ে শিক্ষা বোর্ড সংলগ্ন গোপালগঞ্জ বাজারের পূর্ব পার্শ্বে মাদক ব্যবসায়ী হামিদের বাড়িতে গিয়ে তার স্ত্রীর কাছ থেকে মাদক ক্রয় করে ঐ বাড়িতে এবং শিক্ষা বোর্ডের আশে পাশে নিয়মিত ফেন্সিডিল সেবন করে আসছিলেন। ভিডিও ভাইরাল এবং সংবাদ প্রকাশের পর এই স্পটগুলোতে দিনাজপুর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও স্থানীয় পুলিশের আনাগোনা বৃদ্ধি হওয়ায় তিনি এই স্পট পরিবর্তন করে বর্তমানে শিক্ষা বোর্ডের পার্শ্ববর্তী রাণীগঞ্জ বাজার থেকে দুই কিলোমিটার পূর্ব দিকে এক মাদক ব্যবসায়ীর বাড়িতে এবং রাণীগঞ্জ বাজার থেকে দক্ষিণে তিন কিলোমিটার দক্ষিণে মাদক ব্যবসায়ী একরামুলের কাছ থেকে এবং শহরের মাতাসাগর মোড় হতে পূর্ব দিকে বড়দিঘী নামক স্থানে মাদক ব্যবসায়ী রবিউলের নিকট থেকে নিয়মিত মাদক ক্রয় করে তা সেবন করছেন।
আরও পড়ুনঃ ৭ দফা দাবিতে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের কর্মচারীদের আলটিমেটাম
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বোর্ডের এক কর্মচারী বলেন, তিনি বলে বেড়ান দিনাজপুরের সাংবাদিকদের ম্যানেজ করেছি। ঢাকার সাংবাদিক অনলাইন পত্রিকায় নিউজ করে কি করতে পারবে আমার।
দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ড কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মওদুদ করিম বাবু শিক্ষাবার্তা'কে বলেন, বিষয়টি আপনাদের পত্রিকার মাধ্যমেই আমার নজর এসেছে। আসলে ওটা তার ব্যক্তিগত বিষয় হলেও তিনি একজন সরকারি কর্মচারি। আমরা এটা নিয়ে অচিরেই বসব দেখি কি করা যায়।
মাদক সেবনের ভিডিও ভাইরাল এবং শিক্ষাবার্তায় দুইটি সংবাদ প্রকাশ হলেও ব্যবস্থা নেয়নি দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড
গত ১৫ জানুয়ারি শিক্ষাবার্তায় 'দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড কর্মচারীর মাদক সেবনের ভিডিও ভাইরাল' শিরোনামে এবং ২৪ জানুয়ারি 'দিনাজপুরের সেই মাদকসেবী কর্মচারীর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি শিক্ষা বোর্ড' শিরোনামে দুইটি সংবাদ প্রকাশিত হলেও কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ।
দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক মোঃ আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, বিষয়টি আমি তার কাছে জিজ্ঞেস করেছিলাম সে অস্বীকার করে। বাইরে যদি কেউ খায়ও সেটা প্রশাসনের দেখার কথা। আমার বিষয়টি নজরে আসায় আমি তাকে সতর্ক করেছি। এরপরও যদি কেউ না সুদরায় তাহলে প্রশাসনের উচিত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। আমি তো সর্বচ্চ কর্তৃপক্ষ না।
আরও পড়ুনঃ চা খরচ না পেলে শিক্ষকদের ফাইল ধরেন না শিক্ষা বোর্ডের কর্মচারী
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের সচিব প্রফেসর মোঃ জহির উদ্দিন শিক্ষাবার্তা'কে বলেন, বিষয়টি নজরে আসার পর আমরা তাকে ডেকে সতর্ক করেছি। সে বলেছে এমন কর্মকান্ড আর করবে না। একই কর্মকান্ডে সে আবার লিপ্ত হলে তখন আমরা আর কনসিডার করব না।
পুলিশ বা অন্য কোন সরকারি কর্মচারীর যদি মাদক সেবনের বিষয়টি ফেসবুকে ভাইরাল এবং গণমাধ্যমে প্রকাশ পায় তখন তাদের সাময়িক বরখাস্ত কিংবা যে ক্লোজ করে নেওয়া হয়। এই বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, আমরা যদি এর বিরুদ্ধে পুনরায় এরকম অভিযোগ পাই অবশ্যই এরকম সিদ্ধান্ত আমরা নিব। আর কোন স্যার দিব না।
ভিডিও ভাইরাল এবং সংবাদ প্রকাশ হলে কর্মচারী হারুন মাদক সেবনের শুধু জায়গা বদল করেছে কিন্ত সেবন অব্যহত রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, এরকম যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাই তাহলে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোঃ কামরুল ইসলাম শিক্ষাবার্তা'কে বলেন, বোর্ডের বাইরে কোন কর্মচারী যদি মাদকের সাথে জড়িত থাকে তাহলে আমাদের করার কি আছে। এগুলো এই সংক্রান্ত প্রশাসনের দেখা উচিত। ভিডিও ভাইরালের বিষয়ে তিনি বলেন, আমিও ভিডিওটা দেখিনি। ভিডিওটা আমাকে দেন। আমরা ব্যবস্থা নেব। তিনি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে বিষয়টি দেখার জন্য দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
যা বলছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়
কর্মচারি হারুন অর রশিদের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) একেএম আফতাব হোসেন প্রামানিক বলেন, মাদকের ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সরকারি কোন কর্মকর্তা কিংবা কর্মচারী মাদক সেবনের সাথে জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হবে। দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের কর্মচারী হারুনের মাদক সেবনের ভিডিও ভাইরাল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অবশ্যই এই বিষয়টি আমরা শৃঙ্খলা সভায় উপস্থাপিত করব এবং নির্দেশনা দিব।