শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করতে সরকারের আর কত মেয়াদ লাগবে?
।। সিমরান জামান।।
কত দফা আর কত দফায় যে আন্দোলন করলেন বেসরকারী এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা সেই দফার হিসেব করতে গেলে শিক্ষকদের রফাদফা হয়ে যাবে। তবুও হাল ছাড়তে নারাজ বেসরকারি শিক্ষকরা। চাতক পাখির মতো চেয়ে থাকে সরকারের স্বদিচ্ছার আশায়। সরকার আসে সরকার যায়।
সরকার আশ্বাস দেয় বিভিন্ন মাধ্যমে। বেসরকারি শিক্ষকরা সেই আশায় বুক বাধে। শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাজমান সরকারি-বেসরকারি বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে তারা অবস্থান ধর্মঘট সহ কত ঘট যে করলেন তার ইয়োত্তা নেই। তাদের বক্তব্য কারিকুলাম, সিলেবাস, একাডেমিক সময়সূচি, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন এবং উত্তরপত্র মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি কোনো পার্থক্য না থাকলেও আর্থিক সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে রয়েছে পাহাড়সম বৈষম্য। সরকারি একজন শিক্ষক বাড়িভাড়া পান মূল বেতনের ৪০-৪৫ শতাংশ আর বেসরকারি শিক্ষক পান মাত্র ১ হাজার টাকা। উত্সব ভাতা সরকারি শিক্ষক পান মূল বেতনের ১০০ ভাগ, বেসরকারি শিক্ষক পান মাত্র ২৫ ভাগ।
আমাদের দেশে মানুষ গড়ার কারিগরদের নিয়ে কারো যেন টেনশন নেই! বিশেষত এমপিওভুক্ত সবার যেন দ্রুত পরিবর্তনশীল চলমান বাস্তবতার সঙ্গে ছন্দপতন ঘটছে প্রতিনিয়ত। এমপিওভুক্তগণ বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট, পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল ও উৎসব ভাতা পান না। তারা পদোন্নতি, স্বেচ্ছাঅবসর, বদলি সুবিধাসহ অসংখ্য বঞ্চনার শিকার। এমপিওভুক্তগণ পাননি বৈশাখী ভাতা ও বার্ষিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি সুবিধা! নতুন বেতনস্কেলে সরকারিগণ ৫ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি সুবিধা পেয়েছেন অনেক আগেই। কিন্তু এমপিওভুক্তগণের ৫ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি অনিশ্চয়তায় অন্ধকারেই রয়েছে। এমপিওভুক্ত কেউই পদমর্যাদা অনুযায়ী বাড়িভাড়া পান না। চিকিৎসাভাতা ৫০০ টাকা যা নিতান্তই অপ্রতুল।
বেসরকারি শিক্ষকবৃন্দই সম্ভবত বিশ্বের একমাত্র পেশাজীবী যারা সিকিভাগ (২৫ শতাংশ) উৎসবভাতা পান। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় আমাদের দেশের শিক্ষকেরা এখনো তাঁদের প্রাপ্য মর্যাদা পান না।দেশের মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে ২২ হাজারের বেশি। এর মধ্যে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাদে, সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা মাত্র ৬৮৪টি। এই সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানর মাধ্যমিকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক কোটির বেশি। তাদের বিপরীতে শিক্ষক আছেন ৫ লাখের মতো।বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অধিকাংশ এমপিওভুক্ত হওয়ায় শিক্ষকেরা সরকার থেকে বেতনের পাশাপাশি কিছু নামমাত্র ভাতা পেয়ে থাকেন। সরকারি-বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে বিশাল বৈষম্য, অর্থাৎ একজন সরকারি শিক্ষক পূর্ণাঙ্গ বেতন, ভাতা পেলেও একজন বেসরকারি শিক্ষক তেমনটি পান না।
শিক্ষকেরা যদি তাঁর প্রাত্যহিক জীবন নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন, তাহলে শিক্ষা ও শিক্ষার্থী নিয়ে শিক্ষকদের বিশেষ কোনো অনুরক্তি কিংবা গুরুত্ব থাকবে না। যার ফলে দেশের শিক্ষা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তেমনি দেশও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে শিক্ষকরা রাতদিন কাজ করছেন। শিক্ষকদের প্রশিক্ষন হয়েছে কিন্তু শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ভাতা নিয়েও শিক্ষকরা খুশি হতে পারেননি বরং শিক্ষকেরা প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। শিক্ষকরা বলছেন এই সরকার প্রায় ১৭ বছর ক্ষমতায় ।
এই ১৭ বছরেও বেসরকারী শিক্ষকদের দাবি দাওয়া পূরন হয়নি। তারা বলছে এই সরকার আর কত বছর ক্ষমতায় থাকলে মাধ্যমিক শিক্ষকদের জাতীয়করণের দাবি মেনে নিবে এবং সব ধরনের বৈষম্য দূর করে তাঁদের দুশ্চিন্তামুক্ত করবে ?
শিক্ষাবার্তা ডট কম/জামান/১০/০৩/২০২৪