ডিমলা: দুর্নীতির হোতা সুপার হাফিজুল এখন অন্য মাদরাসার ভাইস প্রিন্সিপ্যাল
সুভাষ বিশ্বাস, নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর অঞ্চলঃ ভুয়া ছাত্রছাত্রী দেখিয়ে উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ,মাদরাসার সম্পত্তি তছরুপ, নিয়োগ বাণিজ্য এবং নানা অনিয়ম করে মাদরাসা ছেড়ে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে গোপন নিয়োগে অন্য মাদরাসায় চাকরি নিলেন এক মাদরাসার সুপার। এমন অভিযোগ নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার তিতপাড়া বড় জুম্মা দারুস সালাম দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো. হাফিজুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে।
শিক্ষাবার্তা'র অনুসন্ধানে জানা গেছে, তিতপাড়া বড় জুম্মা দারুস সালাম দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো. হাফিজুল ইসলাম গত জুন মাসে একই উপজেলার খালিশা চাপাণী বেপারীটোলা আলিম মাদরাসার ভাইস প্রিন্সিপ্যাল পদে নিয়োগ পেয়েছেন। শুধু তিনি নন মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে অতি গোপনে এই মাদরাসায় নিয়োগ পেয়েছেন মোট ছয় জন। তিতপাড়া বড় জুম্মা দারুস সালাম দাখিল মাদ্রাসার সুপার থাকাকালীণ মো. হাফিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে তদন্তে প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয় তদন্ত প্রতিবেদনে।
আরও পড়ুনঃ
- খালিশা চাপাণী আলিম মাদরাসায় গোপনে ৬ পদে নিয়োগ, জানেই না এলাকাবাসী
- ডিমলার খালিশা চাপাণী মাদরাসায় ৬ পদে গোপন নিয়োগ: নয় দপ্তরে অভিযোগ
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মো. হাফিজুল ইসলাম তিতপাড়া বড় জুম্মা দারুস সালাম দাখিল মাদ্রাসার ইবতেদায়ী শাখার সহকারি মৌলভী পদে যোগদান করেন ১৯৯৮ সালে। যার ইনডেক্স নং- ৫৩৮৯৩১, গ্রেড-১৬। ২০০৭ সালে মাদরাসাটির তৎকালিন ভারপ্রাপ্ত সুপারকে সরিয়ে কৌশলে সুপার এর দায়িত্ব গ্রহণ করেন হাফিজুল। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তার অনিয়মের যাত্রা শুরু। সুপারের দায়িত্ব নেওয়ার পর ০৬/০৭/২০০৭ তারিখে মাদ্রাসার বহিরাগতদের হাজিরা খাতায় ছাত্রছাত্রী হিসাবে নাম দেখিয়ে ১১ জন শিক্ষার্থীর উপবৃত্তি টিউশন ফি ৬,০৭০/= টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন।ডিমলা উপজেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা তদন্তপূর্বক গত ১৩/১১/২০০৭ ইং তারিখে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর ঘটনার সত্যতা পেয়ে তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণ করেন। এই তদন্তের আলোকে প্রেক্ষিতে যুগা সচিব, প্রকল্প পরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, ঢাকা, প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয়ের নং- এফএসএসএপি- ২/ডিম/নীল/উ-৯২/২০০৬/৮৭ স্বারকে হাফিজুলের বেতন ভাতার সরকারি অংশ কর্তনের নির্দেশ প্রদান করেন। তৎকালিন ডিমলা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ২০০৯ সালের ০২ ডিসেম্বর হাফিজুলকে কেন বেতন ভাতা বন্ধ করা হবে না মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে আজ পর্যন্ত তাঁর বেতন ভাতা বন্ধ হয়নি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সুপার হিসাবে দায়িত্ব পেয়ে মাদরাসার শুন্যপদে কম্পিউটার শিক্ষক পদে জাল সনদধারী মোঃ আতিকুর রহমান বাবুকে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ প্রদান করেন। মাদ্রাসার ৪.৭৯ একর জমির বার্ষিক ২,২০,০০০/= টাকা সুপার হাফিজুলের আত্মীয় 'জিজুল ইসলাম, মোকলেছার রহমানকে কোন রকম ডাক ছাড়াই নিজ ইচ্ছামত মাদ্রাসার জমি লিজ প্রদান করেন। মাদ্রাসার ভিতরের দীর্ঘদিনের একটি কড়ই গাছ যাহার মুল্য ১,০০,০০০/= টাকা বিক্রি করিয়া তছরুপ করেন। কম্পিউটার শিক্ষকসহ চারজন শিক্ষক নিয়োগে ডি,জির প্রতিনিধির স্বাক্ষর জালিয়াতী করে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ প্রদান করেন।নিয়োগ পাওয়া এই চারজনের মধ্যে অফিস সহকারী আইরিন আক্তার হাফিজুলের নিকটাত্মীয়।
জানা যায়, অবৈধভাবে সুপারের দায়িত্ব গ্রহণ, অর্থের বিনিময়ে মনগড়া কমিটি করে জাল নিবন্ধনধারীদের নিয়োগ প্রদান, ভুয়া ছাত্রছাত্রী দেখিয়ে উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ, মাদরাসাটির ২৪ বিঘা জমির ফসলের অর্থ আত্মসাৎসহ মাদ্রাসার কয়েক লাখ টাকার মেহগনি গাছ কেটে আত্মসাতের ঘটনায় জেলা প্রশাসক থেকে শুরু করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দফতরগুলোতে লিখিত অভিযোগ দেন তিতপাড়া বড়জুম্মা দারুস সালাম দাখিল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও দাতা সদস্য এর পুত্র আবুল কালাম আজাদ।
তিনি জানান, ভারপ্রাপ্ত সুপার আবু তাহেরকে সরিয়ে অবৈধভাবে হাফিজুল ইসলাম সুপারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দায়িত্ব গ্রহণের পরেই অবৈধ ছাত্রছাত্রী দেখিয়ে ১১ জন শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ করেন। বিভিন্ন সময়ে হাফিজুলের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছিল সেসব অনিয়ম তদন্তে তার বিরুদ্ধে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বেতনভাতা স্থগিত করার আদেশ দেয় তদন্ত কমিটি। তবে অজ্ঞাত কারণে তার বেতন ভাতা বন্ধ হয়নি।
তিতপাড়া বড় জুম্মা দারুস সালাম দাখিল মাদ্রাসাটিকে শিক্ষার পরিবেশ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে রেখে সুকৌশলী খালিশা চাপাণী বেপারীটোলা আলিম মাদরাসায় অতি গোপনে ভাইস প্রিন্সিপ্যাল পদে মোটা অংকের ঘুষ বাণিজ্যের বিনিময়ে নিয়োগ লাভ করেন। যার এমপিও চালু প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত হাফিজুল ইসলাম বলেন, কেউ যদি সুযোগ পায় অন্যখানে বড় পদে যাবে , ওখানে ছিলাম মাদ্রাসা সুপার হিসেবে এখানে ভাইস প্রিন্সিপাল । আর আগের মাদ্রাসায় অনিয়ম করে মেরে খেয়েছি এখন কেউ যদি বলে, তো ওদের ভালো হয়েছে । মানুষ এসব কথা বলতে পারে।
এ বিষয়ে তিতপাড়া বড় জুম্মা দারুস সালাম দাখিল মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বলেন, দুর্নীতি করেছেন কিনা তা তদন্ত প্রতিবেদনেই উল্লেখ আছে। সে আমার আত্মীয় নয় আমার এলাকায় বাসা এখানে থাকাকালীন ওই মাদ্রাসায় নিয়োগ হয়েছে উনি চলে গেছেন । তদন্ত প্রতিবেদনেই উল্লেখ আছে উনি দুর্নীতি করেছেন কিনা ।
জানতে চাইলে ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নুর-ই-আলম সিদ্দিকী শিক্ষাবার্তা’কে বলেন আমার কাছে এখনো অভিয়োগের কাগজ আসেনি। খতিয়ে দেখব।
এ বিষয়ে নীলফামারী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান এর মুঠোফোনে কল করে এবং কার্যালয়ে গিয়েও তাকে না পাওয়ায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সংশ্লিষ্ট খবরঃ
- ডিমলায় তোপের মুখে স্কুলের নিয়োগ বাতিল
- ডিমলায় গোপনে দাতা সদস্য নেওয়ার পাঁয়তারা প্রধান শিক্ষকের
- ডালিয়া দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়: এডহক কমিটিতেই চলছে বছরের পর বছর
- ডিমলায় জাল সনদে শিক্ষক বিশ্ব নাথের বিশ্ব জালিয়াতি
- নিয়োগ ও সনদ জালিয়াতি করে শিক্ষক বিশ্ব নাথের ২১ বছর ধরে শিক্ষকতা
- নিয়োগ ও সনদ জালিয়াতি করেও স্বপদে বহাল শিক্ষক বিশ্বনাথ
- ফেঁসে যাচ্ছেন এমপিওভুক্ত ৮১৪ শিক্ষক, আমলনামা মন্ত্রণালয়ে
- ডিমলায় ৯ম স্কেলে ৫ বছর ধরে সহকারী প্রধান শিক্ষক, নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/৩১/০৮/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়