ছাত্রীকে প্রধান শিক্ষকের ধর্ষণ চেষ্টা: মামলায় আসামী ২১১
নিজস্ব প্রতিবেদক, কুমিল্লাঃ জেলার দেবীদ্বারে প্রধান শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রীর শ্লীলতাহানিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় দুই মামলায় আসামি ২১১ জন। গ্রেপ্তার হয়েছেন ১০ জন। এছাড়া গ্রেপ্তার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছে গ্রামবাসী। আতঙ্কে বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীরা কেউ বিদ্যালয়ে আসেনি। সংঘর্ষের পরেরদিন বুধবার দিবাগত রাতে পুলিশি অভিযানের পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পুরো এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। স্থানীয় মাশিকাড়া বাজারে খোলেনি অধিকাংশ দোকান-পাট।
বুধবার মাশিকাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোকতল হোসেন ওই স্কুলের ১০ম শ্রেণির ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির ঘটনায় ভিক্টিমের বাবা বাদী হয়ে দেবীদ্বার থানায় মাশিকাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ওই প্রধান শিক্ষককে একমাত্র আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন। অপর দিকে পুলিশের ওপর হামলা, পুলিশের কর্তব্য কাজে বাধা দানের ঘটনায় দেবীদ্বার থানার উপ-পরিদর্শক মুক্তার আহমেদ মলি বাদী হয়ে এজহারভুক্ত ১০ জন ও অজ্ঞাতনামা ১৫০/২০০ জনসহ ২১০ জনকে অভিযুক্ত করে থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
বৃহস্পতিবার সকালে সরোজমিনে ঘটনাস্থল মাশিকাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হাজী মো. বাহালুল হক, সহকারী শিক্ষক/ শিক্ষিকাসহ পরিচালনা সদস্যরা বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকলেও শিক্ষার্থী শূন্য পুরো বিদ্যালয়। পার্শ্ববর্তী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক থাকলেও হাতেগোনা কয়েকজন শিক্ষার্থী ছিল। বিদ্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষের দরজা-জানালা ভাংচুর করে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করা হয়।
মাশিকাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হাজী মো. বাহালুল হক জানান, ‘আজকে বিদ্যালয় খোলা থাকলেও গতকালের (বুধবার) ঘটনায় শিক্ষার্থীরা কেউ বিদ্যালয়ে আসে নাই।’
একাধিক শিক্ষক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য জানান, এর আগে প্রধান শিক্ষক শিক্ষক মো. মুক্তল হোসেন তিতাস উপজেলার দুলারামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরিক্ষার্থী (ছাত্রীকে) যৌন হয়রানির অভিযোগে ওই স্কুলে জুতার মালা পরিয়ে বিদায় দেয়া হয়, সর্বশেষ দেবীদ্বার উপজেলা মাশিকাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে আবেদন করলে স্থানীয়রা এ লম্পট শিক্ষকের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করে। পরে রাজনৈতিক প্রভাবে এবং ৩০০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে তার বিরুদ্ধে নারী ক্যালেঙ্কারি এবং অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পেলেই তাৎক্ষণিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ ও স্কুল থেকে অব্যাহতি পাওয়ার শর্তে তাকে নিয়োগ দেয়া হয় এবং স্কুল থেকে নিজ বাড়ি এক কিলোমিটার দূর হলেও তার পরিবারসহ ক্যাম্পাস সংলগ্নে বাসা ভাড়া করে দেয়া হয়।
দশম শ্রেণির একছাত্রীকে বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার মাশিকাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোকতল হোসেনকে অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনায় বুধবার দুপুরে প্রধান শিক্ষকের সমর্থকদের ওপর হামলা- মারধরের ঘটনায় অন্তত ২০/৩০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। ওই ঘটনার জেরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অভিভাবক ও এলাকাবাসীর যোগদানে বিকাল থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত পুলিশ- ছাত্র-জনতার দফায় দফায় সংঘর্ষে সংঘর্ষে ৭ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত অর্ধশতাধিক আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
তার ব্যবহৃত মোটর সাইকেল ও তার মেয়ের জামাইর আরেকটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। ওই সময় পুলিশের রাবার বুলেট ও শর্টগানের গুলিতে ১৫ শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী গুলিবিদ্ধসহ প্রায় ৫০জন আহত হয়। এছাড়াও দেবীদ্বার থানার ওসিসহ ৭ পুলিশ আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য, বুধবার (১৫ মার্চ) সকালে অনুমান পোনে ৯টায় প্রথমে প্রধান শিক্ষক তার কক্ষে দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ডেকে নিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয় এবং দ্বিতীয় দফায় সকাল পোনে ১০টায় প্রতিষ্ঠানের একটি শ্রেণিকক্ষে তিনি একই ঘটনা করে। ওই ঘটনার পর ছাত্রীর সহপাঠীরাসহ তাকে নিয়ে বাড়ি যেয়ে তার বাবার কাছে ঘটনা বর্ণনা দেয়।
বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যৌন হয়রানির অভিযোগে কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার মাশিকাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোকতল হোসেনকে অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনায় বুধবার দুপুরে প্রধান শিক্ষকের সমর্থকদের ওপর হামলা-মারধরের ঘটনায় অন্তত ১০-১২ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। ওই ঘটনার রেস ধরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অভিভাবক ও এলাকাবাসীর যোগদানে বিকেল থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত পুলিশ-ছাত্র-জনতার দফায় দফায় সংঘর্ষে দেবীদ্বার থানার ওসিসহ ৭ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত অর্ধশতাধিক আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে।
পরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবির, বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতিসহ সঅন্যান্য সদস্য, শিক্ষক ও এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের সহযোগিতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা করে পারেনি। বিক্ষুব্ধ জনতা প্রধান শিক্ষককে স্কুল মাঠে এনে বিচারের দাবি জানায়। এসময় পুলিশের উপস্থিতিতে বিদ্যালয়ের দরজা-জানালা এবং প্রধান ফটক ভাংচুরের চেষ্টা করে।
প্রধান শিক্ষককে রক্ষায় তারপক্ষে বহিরাগত কিছু লোকজন এসে ছাত্রদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ হামলায় অন্তত ৮-১০জন শিক্ষার্থী আহত হয়। আহত, নাঈম খন্দকার, মো. নাঈম ও জিহাদুল ইসলাম জানায় প্রধান শিক্ষকের ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। আহত শিক্ষার্থীদের দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। আহতরা সবাই ওই বিদ্যালয়ের নবম ও দশম শ্রেনীর ছাত্র। ছাত্রদের উপর হামলার পর পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠে। পরে তাকে প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ করে ছাত্র, অভিভাবক ও এলাকাবাসী। অবরুদ্ধ প্রধান শিক্ষক দেবিদ্বার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করছেন।
সংবাদ পেয়ে বুধবার বিকেলে দেবীদ্বার সার্কেল এএসপি আমিরুল্লাহ ও দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ কমল কৃষ্ণ ধরের নেতুত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে যেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনার চেষ্টা চালায়। এসময় পুলিশও অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে এবং রাতে স্কুল ক্যাম্পাসের সমস্থ বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে পুলিশ রাবার বুলেট ও সর্টগানের গুলি ছুড়লে এতে অন্তত ১৫জন গুলিবিদ্ধ হয়, গুলিবিদ্ধ মারাত্মক আহত ৮ জনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। অপরদিকে বিক্ষুব্ধ জনতা চকলেট বোমা বিস্ফোরণে এলাকা আতঙ্কতি করে তোলে এবং বিদ্যালয়ের দরজা জানালা ভাংচুর করে।
রাত পৌনে ৯টায় কুমিল্লা পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান ও দেবীদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডেজী চক্রবর্তী বিপুল সংখ্য আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে প্রধান শিক্ষকসহ পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে আনার পথে বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া করে। এসময় ডিবি পুলিশসহ ৩ পুলিশকে আটক করে মারধর করে এবং এক পুলিশ সদস্যকে আটক করে রাখেল রাত সাড়ে ৯টায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ তাকে উদ্ধারে এলাকায় অভিযান চালায়। ওই সময় রাত ১০ পর্যন্ত এলাকাবাসীর সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।
এদিকে রাতে পুলিশের রাবার বুলেট ও সর্টগানের গুলিতে আরো অন্তত ১৫-২০ জন গুলিবিদ্ধ হয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহতরা হলেন, সিয়াম (১৫), মিনহাজ (১৭), অলি (১৬), আকাশ (১৬) আরিফুল ইসলাম (২৬), সাব্বির (১৮) ও হৃদয় (১৭)। এদের প্রত্যেকেকে দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য বমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়াও পুলিশ সদস্য জহিরুল ইসলাম ও সারোয়ারসহ ৫ পুলিশ আহত হয়েছে বলে জানা যায়।
এ ব্যাপারে দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ কমল কৃষ্ণ ধর জানান, কি পরিমাণ শর্টগানের শিষা, রাবার বুলেট, গ্যাসগান ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়েছে তা গুনে বলতে হবে। তবে শ্লীলতাহানির ঘটনায় ভিক্টিমের বাবা বাদী হয়ে মামলা করেছেন এবং পুলিশের কর্তব্য কাজে বাধাদান এবং পুলিশের অস্ত্র ছিনতাইয়ের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়। উভয় মামলায় আটক অভিযুক্তদের বৃহস্পতিবার বিকেলে কোর্ট হাজতে চালান করা হয়েছে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৬/০৩/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়