কারিকুলাম পরিবর্তন করে কি শিক্ষার মানের পরিবর্তন আদৌ সম্ভব?
অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন: নতুন শিক্ষাক্রম নাকি ফিনল্যান্ডের মডেলকে অনুসরণ করে বানানো হয়েছে। O really? You must be kidding madam Dipumoni! ফিনল্যান্ডে শিক্ষকতা পেশাকে সর্বোচ্চ সম্মান দেওয়া হয়। শিক্ষকতা পেশা মর্যাদাপূর্ণ, চাহিদাপূর্ণ, সবচেয়ে মেধাবী এবং কঠোর পরিশ্রমীদের জন্য সংরক্ষিত। ফিনল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘প্রাইমারি টিচার এডুকেশন’ নামে বিভাগ আছে এবং এই বিভাগে পড়ার সুযোগ পাওয়া বেশ কঠিন। যারা দরখাস্ত করে তাদের প্রতি ৫ জনের মধ্যে একজন প্রাথমিক শিক্ষকএডুকেশন কার্যক্রমে পড়ার সুযোগ পায়। ফিনল্যান্ডে প্রাথমিক শিক্ষকদের গড় বেতন ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এইটা হলো গড় বেতন। অনেকের বেতন এর চেয়ে অনেক বেশি কিন্তু। শিক্ষকদের মূল্যায়ন করে বলেই ফিনল্যান্ডের মানুষ জগতের সবচেয়ে সুখী মানুষদের দেশ। কারণ শিক্ষকরা সুখে থাকলে দেশের মানুষ সুখে থাকে। ফিনল্যান্ড তারই প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
এইবার ভাবুন তো আমাদের দেশে কারা প্রাথমিক বিদ্যালয় কিংবা উচ্চ বিদ্যালয়ে কারা শিক্ষকতা করেন? যাদের কোনো আশা নেই তারা! তারা অন্যত্র চেষ্টা করে সর্বত্র ব্যর্থ হয়েছেন তারা। সর্বত্র ব্যর্থদের দিয়ে আমাদের সোনামনিদের পড়ানোর দায়িত্ব দিচ্ছি। এর কারণ ক?ি কারণ খুব সহজ। এটি হলো হলো প্রজাতন্ত্রের তৃতীয় শ্রেণির চাকরি। বেতনও সেই মানের। কিন্তু রাষ্ট্রের অনেক তৃতীয় শ্রেণির চাকরি আছে যেখানে ঘুষ, দুর্নীতির সুযোগ আছে। ঠিক যেমন রাষ্ট্রের বিসিএস প্রশাসন, পুলিশ বা ট্যাক্স কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে ঘটে। তাই তারা বেতন কম পেলেও জীবন তাদের ভালোই চলে। কিন্তু শিক্ষকদের জীবন? জাহান্নামের জীবন। একটি বিভীষিকাময় ও ভয়ঙ্কর জীবন। যেই জীবনে শিক্ষকদের কোনো আত্মসম্মানবোধ থাকতে পারে না। সরকার শিক্ষকদের সঙ্গে ভৃত্যের মতো আচরণ করে। তাদের দিয়ে রাষ্ট্রের অনেক করিয়ে নেয়। তাদের দৈনিক টিফিন দেয় কতো জানেন? সংখ্যাটা বলতেও লজ্জা লাগে।
একই কথা উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সুতরাং কারিকুলাম পরিবর্তন করে কি শিক্ষার মানের পরিবর্তন আদৌ সম্ভব? উত্তর হলো, একেবারেই অসম্ভব। পরিবর্তন আনা দরকার ছিল শিক্ষকতা পেশাতে। এই পেশাকে আকর্ষণীয় করা উচিত ছিল। যেন স্বপ্নবান মানুষেরা এই পেশায় আসতে স্বপ্ন দেখে। এই স্বপ্নবান শিক্ষকরাই পারে আপনার সন্তানদের স্বপ্ন বুনতে। দিনশেষে স্বপ্নই মানুষের সফলতার সীমানা নির্ধারণ করে কারণ মানুষ সর্বোচ্চ তার স্বপ্নের সমান বড় হতে পারে। জীবন কোনো লটারী নয়। শুধু দক্ষিণ এশিয়ার কথা বিবেচনা করলেও বাংলাদেশের শিক্ষকদের বেতন ও সম্মান সবচেয়ে কম। শুধু দক্ষিণ এশিয়ার কথা বিবেচনা করলেও শিক্ষায় বাংলাদেশের বরাদ্দ সবচেয়ে কম। এই দুটো জিনিসই প্রমাণ করে সরকার আসলে শিক্ষার মানের উন্নতির জন্য নতুন শিক্ষাক্রম চালু করেনি। এই সহজ কথাটি বুঝতে কি বড় দার্শনিক হওয়ার দরকার আছে? চারিদিকে দেখেন না? দেখুন না স্কুলের অবকাঠামো, স্কুলের শিক্ষকদের জীবনাচার।
জিডিপির মাত্র ১.৭৬ শতাংশ বরাদ্দ দেন আবার বড় বড় কথা বলেন। সর্বনিম্ন বেতনের শিক্ষক দিয়েও আমরা মেধাবী মানুষ তৈরি করছিলাম। কারণ আমাদের কারিকুলামটা খুব একটা খারাপ ছিল না। এখন সেটাকেও ধ্বংস করে ধ্বংসের ষোলোকলা পূর্ণ করা হলো। শিক্ষার মানের উন্নতিতে এই সরকার বা মন্ত্রণালয়ের বিন্দু মাত্র আগ্রহ নেই। নতুন শিক্ষাক্রম করা হয়েছে প্রজেক্টের অংশ হিসাবে। কারিকুলাম পরিবর্তন মানে বিশাল কর্মযজ্ঞ। সব কিছু নতুন করে হবে। এতে অনেক টাকার খেলা।
লেখক: শিক্ষক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৮/১০/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়