সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক বেলায়েত ইউপি চেয়ারম্যান
নোয়াখালীঃ জেলার সুবর্ণচরের সৈকত সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক তিনি। যদিও তিনি নিজেকে অধ্যাপক বলে দাবি করেন। অথচ অধ্যাপক পদটি সহকারী অধ্যাপকের দুই ধাপ ওপরে। তার নাম বেলায়েত হোসেন। সরকারি কলেজের শিক্ষক হিসেবে সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা ১৯৭৯ অনুযায়ী তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতে পারেন না। অথচ বিধিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে জয়ী হন তিনি। এখন চেয়ারম্যান হিসেবেই ব্যস্ত সময় পার করছেন। ব্যস্ততার কারণে কলেজে ক্লাস নেন না। অথচ নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলে নিচ্ছেন। আইনের লঙ্ঘন করে চেয়ারম্যান পদে বসে থাকা বেলায়েতের বিষয় নিয়ে কলেজের শিক্ষকদের পাশাপাশি এলাকার সচেতন মানুষের মধ্যেও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা-১৯৭৯-এর ২৫ ধারায় বলা হয়েছে, ‘সরকারি কর্মচারী কোনো রাজনৈতিক দলের বা রাজনৈতিক দলের কোনো অঙ্গসংগঠনের সদস্য হইতে অথবা অন্য কোনোভাবে উহার সহিত যুক্ত হইতে পারিবেন না, অথবা বাংলাদেশে বা বিদেশে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করিতে বা কোনো প্রকারেই সহায়তা করিতে পারিবেন না। এ ছাড়া সরকারি কর্মচারী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করিতে অথবা নির্বাচনী প্রচারে অংশগ্রহণ করিতে বা অন্য কোনোভাবে হস্তক্ষেপ করিতে বা প্রভাব খাটাইতে পারিবেন না।’
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমপিওভুক্ত কলেজ সরকারি হয়ে গেলে শিক্ষক-কর্মচারীরা পুরোপুরি সরকারি কর্মচারী হয়ে যান। সুতরাং সরকারি কর্মচারী হিসেবে কোনোভাবে তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে এবং ভোটে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। এটা আইনের সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯৩ সালে নোয়াখালীর সুবর্ণচরের চরবাটা ইউনিয়নে সৈকত কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার তিন বছর পর ১৯৯৬ সালে পৌরনীতি বিষয়ের প্রভাষক পদে চাকরি হয় বেশিরভাগ তৃতীয় শ্রেণির সনদধারী বেলায়েত হোসেনের। কোনো পরীক্ষায় তিনি প্রথম শ্রেণি পাননি। এসএসসিতে দ্বিতীয় শ্রেণি, এইচএসসিতে তৃতীয় শ্রেণি, বিএ-তে তৃতীয় শ্রেণি আর এমএ-তে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পাস করেন বেলায়েত।
চাকরিতে যোগদানের পর প্রথম কয়েক বছর তিনি নিয়মিত কলেজে ক্লাস নিতেন। কিন্তু ২০০৩ সালে প্রথমবার সুবর্ণচরের চর আমান উল্যাহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। পরপর দুইবার জয়ী হয়ে ২০১১ সাল পর্যন্ত ‘চেয়ারম্যানগিরি’ করেন এই শিক্ষক। এরপর সর্বশেষ ২০২১ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি ফের ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। কিন্তু ২০১৮ সালেই সৈকত কলেজ জাতীয়করণ হয়। অর্থাৎ এমপিওভুক্ত কলেজটি সরকারি হয়। সরকারি কলেজের শিক্ষক হিসেবে তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতে পারেন না। কিন্তু তিনি আইনের তোয়াক্কা না করেই চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে ‘চেয়ারম্যানগিরি’ চালিয়ে যাচ্ছেন।
নিয়মিত কলেজে না এলেও হাজিরা খাতায় বেলায়েতের নিয়মিত স্বাক্ষর রয়েছে। মাস শেষে বেতন-ভাতাও তুলে নেন তিনি। নিজে ক্লাসে না গিয়ে নিজাম উদ্দিন নামে একজনকে দিয়ে ভাড়া করে তাকে দিয়ে ক্লাস নিচ্ছেন বেলায়েত হোসেন। নিজামকে মাসে হাজার দশেক টাকা দেন তিনি। এ নিয়ে সৈকত সরকারি কলেজের অন্য শিক্ষকরা চরম ক্ষুব্ধ। স্থানীয় সচেতন নাগরিকরাও বেলায়েতের চেয়ারম্যান পদ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
কলেজের একাধিক শিক্ষক জানান, বেলায়েত হোসেন চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে কলেজে নিয়মিত আসেন না। এলেও তিনি ক্লাস নেন না। অবশ্য তিনি তার পরিবর্তে নিজাম উদ্দিন নামে একজনকে বদলি খাটাচ্ছেন। নিজামকে মাসে প্রায় ১০ হাজার টাকা দেন বেলায়েত। বাদ বাকি বেতন-ভাতা তিনি ভোগ করেন। সরকারি কর্মচারী হয়েও বেলায়েত চেয়ারম্যান পদে থেকে নৈতিকতাবিরোধী কাজ করছেন বলেও অভিযোগ অন্য শিক্ষকদের।
এ প্রসঙ্গে বেলায়েত হোসেন চেয়ারম্যান বলেন, আমি নিয়ম মেনেই চেয়ারম্যান পদে আছি। নিয়মটি সরকারি চাকরি আইনের কোথায় আছে—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সেটি সময় হলে বলব। এরপর ফোন কেটে দেন তিনি।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/০৬/০৫/২০২৪