এমপিওভুক্ত শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো দরকার

জাতীয়করণ সম্ভব না হলে

নীলকণ্ঠ আইচ মজুমদারঃ  মানসম্মত শিক্ষার প্রথম ধাপ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি যারা করে থাকেন তারা হলেন শিক্ষক। শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড-এটা হলো আমাদের কমন একটি বাক্য। কিন্তু মেরুদণ্ডকে সোজা রাখার জন্য যা করার প্রয়োজন তা আমরা আদৌ করতে পারছি কি না? অথবা এটা বাস্তবায়নে কতটুকু চেষ্টা করছি সেটা ভেবে দেখেছি কি?

আমরা এখনও শিক্ষার ব্যবহৃত অর্থকে ব্যয় হিসেবেই দেখছি কিন্তু ভেবে দেখছি না-এটা বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার স্তরে আবার রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ধাপ। শিক্ষাব্যবস্থাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে প্রতিটি স্তরের দিকেই নজর দিতে হবে। আমরা কেবল সরকারিকরণ এবং বেতনভাতাদি ও অবকাঠামো নির্মাণকেই শিক্ষার উন্নয়ন হিসেবে ভাবছি।

এটা মেনে নিতে হবে যে এসব সুযোগ-সুবিধা শিক্ষার মানগত পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করে। একটা সময় ছিল দেশের মেধাবীরা শিক্ষাকে শ্রেষ্ঠ পেশা হিসেবে গ্রহণ করত আর্থিক সুবিধা ছাড়াই। কিন্তু সময় অনেক পরিবর্তন হয়েছে, বদলে গেছে সমাজব্যবস্থা। পরিবর্তন এসেছে মানুষের জীবনযাত্রায়।

অন্যদিকে সমস্যাটা হলো আমাদের দেশের শিক্ষার সব স্তরে সরকারি এবং বেসরকারি শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর সুযোগ-সুবিধার মাঝে ব্যাপক ব্যবধান। দেশের মাধ্যমিক স্তরে প্রায় ৯০ শতাংশ শিক্ষাই সরকারি এবং প্রাইভেট শিক্ষার মধ্যভাগে অবস্থান, যাকে আমরা বলছি এমপিওভুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা।

যে শ্রেণিটিতে শিক্ষকরা বেশি বঞ্চিত হচ্ছেন, যার ফলে সে জায়গায় মেধাবীরা আসতে আগ্রহ প্রকাশ করছে না। এখনও মাঠ পর্যায়ে শিক্ষকদের জরিপ করলে দেখা যাবে শিক্ষকতা চাকরিটা নেহাত বিপদে পড়ে এবং বয়সের শেষ পর্যায়ে অন্য চাকরি না পেয়ে। অনেক পরিচিত জনকে দেখেছি এমপিওভুক্ত কলেজের চাকরি ছেড়ে প্রাথমিক স্কুলে যোগ দিয়েছেন কেবল সরকারের কোঠায় নাম লিখিয়ে সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্য। তবে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকতার ক্ষেত্রে আবার ভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। তবে শিক্ষকতার যেসব বিষয়ে প্রাইভেট পড়ানোর ব্যবস্থা রয়েছে তারা আবার আর্থিক দিক দিয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে-এ কথা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চল ও শহরের শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। যার ফলে শিক্ষা এখন শহরমুখী।

শহরের শিক্ষাব্যবস্থায় অভিভাবকরা অধিক পরিমাণে বিনিয়োগ করাতে শিক্ষকরাও শহরমুখী। ফলে গ্রামে প্রচণ্ড পরিমাণে মানসম্মত শিক্ষক সংকট বিদ্যমান। অন্যদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সংকট থাকায় শিক্ষার্থীরা অধিক পরিমাণে প্রাইভেটের দিকে ধাবিত হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও শিক্ষকের অনুপাতের বিষয়টি অনেক জটিল। প্রাইভেট প্রবণতা বৃদ্ধির জন্য এটি একটি অন্যতম কারণ। রাষ্ট্র থেকে সব ধাপেরই সমান সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা রয়েছে। পাঠ্যক্রম এবং ব্যক্তিজীবনে চলার জন্য শিক্ষক হচ্ছে শিক্ষার্থীর কাছে মডেলস্বরূপ। তাই এসব শিক্ষকের জীবনমানের উন্নয়ন ছাড়া শিক্ষার উন্নয়নও সম্ভব নয়।

মানের দিক দিয়ে কেবল এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পিছিয়ে তা বলা যাবে না। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা সরকারি, এমপিওভুক্ত ও প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা একই সিলেবাসে পাঠদান করে থাকে। এ ছাড়াও সরকার কর্তৃক বিভিন্ন সময় রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করে থাকে তারপরও সুযোগ-সুবিধা ভিন্ন রকমের একটা এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পীড়া দিয়ে থাকে।

এখন নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হচ্ছে। যার ফলে কিছু মেধাবীর শিক্ষাব্যবস্থায় আগমন হচ্ছে। তাই সময় হয়েছে এখন সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে মেধাবীদের শিক্ষাকে প্রথম পছন্দ হিসেবে বিবেচনা করানো। নিজেদের উন্নয়নের লক্ষ্যে শিক্ষকরা শিক্ষাব্যবস্থাকে সরকারিকরণের দাবি জানিয়ে আসছে অনেক দিন ধরেই কিন্তু সরকার এতে সায় দিচ্ছে না বিভিন্ন সমস্যা দেখিয়ে। তাই সরকারিকরণ সম্ভব না হলে এমপিওভুক্ত শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো দরকার।

লেখক, শিক্ষক 

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২১/০৫/২০২৩     

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তা’য়