স্কুল বন্ধ করিয়া শিক্ষকদের পিকনিক!
দীর্ঘকাল ধরিয়া দেশের শিক্ষক সমাজের গাফিলতি, অনিয়মিত ক্লাসে উপস্থিতিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রহিয়াছে। সেই অনিয়মের সহিত দেখা যায় শিক্ষকসুলভ দায়িত্বজ্ঞানের অভাব যাহা কমনসেন্সসম্পন্ন বলিয়া গ্রহণ করিতেও কষ্ট হয়।
এক রিপোর্ট হইতে জানা গিয়াছে, গত বৃহস্পতিবার ঝিনাইদহের মহেশপুরের ১৫২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সবগুলি বন্ধ রাখিয়া শিক্ষক ও শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা মিলিয়া উপজেলার তালতলা দরগা নামক স্থানে পিকনিক করিতে গিয়াছিলেন। এই উপলক্ষ্যে উপজেলার ৮০০ শিক্ষকের নিকট হইতে ৪০০ টাকা করিয়া চাঁদাও উত্তোলন করা হইয়াছে। স্বভাবতই এই দিনটিতে গোটা মহেশপুর উপজেলার শিক্ষার্থীরা পাঠ গ্রহণ হইতে বঞ্চিত হয়।
পিকনিক তাহারা করিতেই পারেন। বিনোদনের প্রয়োজন আছে। আর সেই জন্যই তো সাপ্তাহিক ছুটির আয়োজন রহিয়াছে রাষ্ট্রের; কিন্তু তাহারা সাপ্তাহিক ছুটির দিনটি ব্যবহার করেন নাই। বাছিয়া লইয়াছেন এমন দিন, যেই দিনটিতে ছোটো ছোটো শিক্ষার্থীদের পাঠ গ্রহণ করিয়া পরের দিন ছুটি ভোগ করিবার কথা।
স্থানীয় শিক্ষা কর্মকর্তারা জানাইয়াছেন, ঐসব শিক্ষক একদিনের ঐচ্ছিক ছুটি লইয়া পিকনিকে গিয়াছেন। এখন কথা হইল, ঐচ্ছিক ছুটিও তাহারা গ্রহণ করিতে পারেন। তাহা নিয়মবহির্ভূত নহে; কিন্তু ইহার সহিত গোটা উপজেলার সকল শিক্ষক ঐচ্ছিক ছুটি লইয়া সকল স্কুল বন্ধ রাখিবেন তাহা কোন নিয়মে আছে? যেইসকল শিক্ষা কর্মকর্তারা তাহাদের সহিত ঐ পিকনিকে অংশগ্রহণ করিয়াছেন, অথবা যাহারা করেন নাই তাহারাই বা গোটা উপজেলার শিক্ষকদের এই ধরনের পিকনিকের অনুমতি দিলেন কেন, কোন চিন্তা হইতে?
দেশের যাহারা সরকারি বা বেসরকারি চাকরি করেন তাহারা যে কোনো ধরনের ব্যক্তিগত কাজ অথবা বিনোদনের ব্যবস্থা করিয়া থাকেন সাপ্তাহিক ছুটির দিনে। সেই ছুটির দিন সামনে রাখিয়া স্কুল খোলার দিনটি তাহারা বাছিয়া লইলেন কেন? অন্যদিকে জেলা প্রশাসন ইত্তেফাককে জানাইয়াছেন, তাহারা এই বিষয়ে তাহাদের কিছু জানান নাই। ইহা আরো একটি হতাশার কথা। একটি উপজেলায় কী হইতেছে তাহা জেলা প্রশাসন জানিবে না কেন?
স্কুলশিক্ষকদের এই ধরনের অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত কোনো অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নহে। অপরাধী চক্রের সদস্য হইলে আমরা পুলিশ প্রশাসনকে বেত্রাঘাত করিয়া শায়েস্তা করিবার পরামর্শ দিতে পারিতাম; কিন্তু তাহারা অপরাধী চক্রের সদস্য নহেন। বরং তাহারা সমাজের সবচাইতে মহান ও সম্মানজনক পেশায় নিয়োজিত শিক্ষক।
এই শিক্ষকদেরই দায়িত্ব এহেন কিছু না করা যাহাতে দেশের জনগণ তাহাদের প্রতি ক্ষুব্ধ হয় এবং তাহাদের প্রাপ্য সম্মান প্রশ্নবিদ্ধ হয়। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিকট প্রত্যাশা থাকিবে, তাহারা এই বিষয়টি লইয়া দোষীদের জবাবদিহিতার মুখোমুখি করিবেন, যাহাতে দেশের অন্যান্য স্থানেও এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়। পাশাপাশি জেলা প্রশাসনকেও সার্বিক নজরদারির বিষয়ে সতর্ক করিতে হইবে। -ইত্তেফাক