সিকি বোনাস নিয়ে হতাশ বেসরকারি শিক্ষক সমাজ
মুসলিম জনগোষ্ঠির উল্লেখযোগ্য দু’টি ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে দুই ঈদ। ঈদে সারাবিশ্বের মুসলমানেরা আনন্দ করেন, এদেশেও বয়ে যায় আনন্দের বণ্যা। উপরতলা থেকে গাছতলা পর্যন্ত সবাই যে যার স্ট্যাটাসে উৎসবে যোগ দেন। কিন্তু হতভাগা বেসরকারি শিক্ষক সমাজ এ দু’টি উৎসবে সবচেয়ে বেশি যন্ত্রণা ভোগ করেন! মিলিয়ে যায় আনন্দ গহীন অন্ধকারে।
বিদ্যমান বেসরকারি শিক্ষক সমাজের অধিকাংশই অর্থনৈতিক দিক থেকে বেশ দূর্বল। যে বেতন পান তা দিয়ে টেনে-হিচড়ে কোন রকমে মাসের দিনগুলো চালিয়ে নেন। ধার-দেনা তাদের নিত্য সঙ্গী। স্বপরিবারে অপুষ্টির শিকার। মলিন বস্ত্র দিয়ে স্ট্যাটাস বজায় রাখার ব্যার্থ চেষ্টা। উপরন্তু অধিকাংশ শিক্ষকই ব্যাংক কিংবা স্থানীয় সুদী মহাজনদের নিকট দায়বদ্ধ। লোন নিয়ে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন নয়তো বাড়ী-ঘর ঠিক করেছেন। লোনের কিস্তি শোধ দেয়ার পর মাসে যা পান তা দিয়ে সংসার চলতে চায় না। নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা।
স্বল্প আয়ের বেসরকারি শিক্ষক সমাজের নিকট দুই ঈদ যে কত বড় যন্ত্রণার, কত কষ্টের তা সাধারণ মানুষের বোঝার ক্ষমতার বাইরে। ঈদ-উল-ফেতর আসলে কাপড় কেনার একটি বিষয় সামনে এসে দাড়ায়। হতভাগা শিক্ষক সিকি বোনাস দিয়ে কার কাপড় কিনবেন? স্ত্রীর কিনলে সন্তানের হয় না, সন্তানের কিনলে স্ত্রীর হয় না; নিজের কথা না হয় বাদই দিলাম। শুরু হয় পরিবারে অশান্তি, বেচারা কি করবে? অনেকে ধার-দেনা করে কোন রকমে চালিয়ে নিলেও অনেকের ভাগ্যে নতুন কাপড় জুটেনা। ঈদের দিন দেখা যায় পাশের বাড়ীর দিন মজুরের সন্তানের গায়েও নতুন জামা, পরণে নতুন প্যান্ট। হতভাগ্য শিক্ষকের সন্তান চেয়ে চেয়ে দেখে আর নয়ন যুগল সিক্ত হয়ে ওঠে।
আসছে কোরবানীর ঈদ। ইতোমধ্যে হাটে গরু কেনা-বেচা শুরু হয়েছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে গত বছরের চেয়ে এ বছর দাম বেশি। বেসরকারি শিক্ষক সমাজ ঈদের আগে কিংবা পরে যে সিকি বোনাস পাবেন তা দিয়ে গরু কিংবা খাশি কোরবানী দেয়া সম্ভব নয়। গরুর হাটে গেলে, দরদাম করলে মনে হয় মালিক তো বটেই গরুও মনে মনে তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে বলে-সিকি বোনাস নিয়ে এখানে কেন? বয়লার মুরগীর খোঁজ কর! তুমি যে বোনাস পাও তা দিয়ে আমার এক ভাগেরও তো দাম হবে না। সত্যি পছন্দনীয় গরু কোরবানী দেয়া তো দুরের কথা একটি ভাগেরও টাকা তারা বোনাস পান না। বাধ্য হয়ে কয়েকজন মিলে হাড্ডিসার, রোগা, পটকা গরু কোরবানী দেন। না দিয়ে কি করবেন? ঈদের দিন সবাই মাংশ খাবে আর বেসরকারি শিক্ষকের সন্তানেরা কষ্ট পাবে। একজন শিক্ষক তো মাংশের জন্য বাড়ী বাড়ী ঘুরতে পারেন না। আল্লাহ তায়ালা যদি ব্রয়লার মুরগী কোরবানীর বিধান রাখতেন তাহলে বেসরকারি শিক্ষক সমাজের জন্য খুব ভাল হতো!
অনেক কষ্ট থেকে কথাগুলো লিখলাম। জানিনা কর্তৃপক্ষের নিকট পৌঁছবে কি না। শিক্ষার কারিগর মানেই দেশের কারিগর। এ সমাজকে এভাবে অবহেলিত রেখে কখনই কাংখিত উন্নয়ন সম্ভব নয়। বেসরকারি শিক্ষক সমাজকে খুশি রাখার জন্য খুব বেশি ব্যয়ের প্রয়োজন নেই। বিদ্যমান বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারীকরণে দেশের আয় কুলিয়ে যাবে। শুধু ইচ্ছার প্রয়োজন। মাননীয় প্রধান মন্ত্রী, মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি-হতভাগা শিক্ষক সমাজের আহাজারী শুনে আর কত দিন চুপ থাকবেন?
লেখক-
আইউব আলী
অধ্যক্ষ
চিলাহাটি গার্লস্ স্কুল এন্ড কলেজ
নীলফামারী।