শিক্ষায় প্রবেশের সুযোগ নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখা
নিজস্ব প্রতিনিধি।।
সাধারণ ও মাদ্রাসা শিক্ষা ধারার অষ্টম শ্রেণি থেকে ‘কর্মমুখী’ শিক্ষায় প্রবেশের সুযোগ থাকছে নতুন শিক্ষাক্রমে। অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ কিংবা ঝরে পড়া শিক্ষার্থীরা কারিগরি শিক্ষা ধারায় ভর্তি হতে পারবে। ধাপে ধাপে নির্বাচিত কারিগরি বিষয়ে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখায়। এ শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হবে ২০২৪ সালে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) দায়িত্বশীল সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
এনসিটিবি প্রণীত এ শিক্ষাক্রমে সাধারণ ও মাদ্রাসা শিক্ষায় টিভিইটি বিষয় অন্তর্ভুক্তি এবং কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ধারার ষষ্ঠ থেকে মাধ্যমিক-উত্তর (ডিপ্লোমা) স্তর পর্যন্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের রূপরেখা দেওয়া হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির লক্ষ্যে শিক্ষার সব ধারার প্রাথমিক স্তর থেকে প্রাক-বৃত্তিমূলক এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি শিক্ষার অন্তর্ভুক্তি হবে।
অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী যারা মূলধারার শিক্ষায় থাকবে না তাদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ নিয়ে জাতীয় কারিগরি ও বৃত্তিমূলক যোগ্যতা কাঠামো অনুযায়ী জাতীয় যোগ্যতা সনদ লেভেল-১ প্রাপ্তির সুযোগ এবং পরবর্তীতে বিটিইবি নিবন্ধনকৃত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আরও প্রশিক্ষণ নিয়ে লেভেল ২ ও ৩ অর্জনের সুযোগ থাকবে।
কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ধারার নবম, দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণি সমাপ্ত করেও একজন শিক্ষার্থীর জাতীয় কারিগরি ও বৃত্তিমূলক যোগ্যতা কাঠামো অনুযায়ী যথাক্রমে জাতীয় যোগ্যতা সনদ লেভেল-২, ৩ ও ৪ অর্জনের সুযোগ পাবে। এ ক্ষেত্রে দশম
শ্রেণি উত্তীর্ণ এবং জাতীয় যোগ্যতা সনদ ৩ অর্জনকারী শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ থাকবে ডিপ্লোমা কোর্সে। এর পর কারিগরি ডিপ্লোমা পর্যায়ের উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা যাচাই করে ক্রেডিট সমন্বয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট স্নাতক পর্যায়ে উচ্চশিক্ষায় ভর্তির সুযোগ হবে।
এ প্রসঙ্গে এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, একজন শিক্ষার্থী যদি অষ্টম শ্রেণির পর সাধারণ শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ে, তা হলে সে কী করবে? তার তো একটা কর্মের মাধ্যমে জীবিকানির্বাহ করতে হবে। সে যদি একটি তিন-চার মাসের প্রশিক্ষণ নিয়ে কর্মমুখী দক্ষতা অর্জন করে, সেও ভালো আয়ের কর্মে প্রবেশের সুযোগ পাবে। একইভাবে এ কারিকুলামে সুযোগ রাখা হয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা থেকেও কারিগরি শিক্ষায় প্রবেশের।
তিনি বলেন, এসডিজি অর্জন করতে হলে ১০ বছরের শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা ছাড়া বিকল্প নেই। নতুন কারিকুলামে প্রি-প্রাইমারি দুই বছরের; ফলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষার বয়স হয় ১০ বছর। সুতরাং এর আগে কোনোভাবেই শিক্ষাজীবন থেকে ঝরে পড়তে দেওয়া যাবে না। বৃত্তি, উপবৃত্তি বাবা-মা কে উদ্বুদ্ধ করে হলেও তাকে শিক্ষার সঙ্গে রাখতে হবে।
অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, দেশের প্রতিটি জেলার উপজেলা পর্যায়ে একটি করে ‘টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ’ স্থাপন করা হচ্ছে। এগুলোয় সাধারণ ও মাদ্রাসা শিক্ষায় অষ্টম শ্রেণিতে যারা আর লেখাপড়ায় এগিয়ে যেতে পারবে না, তাদের জন্য ‘অকুপেশনাল ট্রেনিং’ ব্যবস্থা থাকবে। আবার ৯ম-১০ম শ্রেণির পরও ‘অকুপেশনাল ট্রেনিং’ নিয়ে কর্মজীবনে প্রবেশের সুযোগ থাকবে। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি থেকে সরাসরি ট্রেড কোর্স রাখার কথা ভাবা হচ্ছে। যাতে করে কেউ এসব স্তর থেকে শিক্ষাজীবন শেষ হলে তারা দক্ষতা অর্জন করে কর্মে যেতে পারে।
তিনি বলেন, সাধারণ ও মাদ্রাসা শিক্ষায় টিভিইটি বিষয় অন্তর্ভুক্তি এবং কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ধারার ষষ্ঠ থেকে মাধ্যমিক-উত্তর (ডিপ্লোমা) স্তর পর্যন্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের রূপরেখা আছে নতুন কারিকুলামে।
এনসিটিবির এ কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অগ্রাধিকার বিবেচনায় একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে শিক্ষার্থীদের জীবন ও জীবিকার জন্য প্রস্তুত করতে সব ধরনের শিক্ষা ধারায় মৌলিক, পরিবর্তনশীল ও কর্মসংশ্লিষ্ট দক্ষতার অন্তর্ভুক্তি ও যথাযথ প্রতিফলন জরুরি। পাশাপাশি এক ধরনের সংগঠিত পথ-নির্দেশনাও প্রয়োজন যেন, যে কোনো ধারার শিক্ষার্থী তাদের অবস্থান, যোগ্যতা, দক্ষতা ও প্রেক্ষাপট অনুযায়ী পরস্পর পথ পরিবর্তন করে যথাযথ সহায়তা প্রাপ্তির মাধ্যমে কাক্সিক্ষত ধারার শিক্ষার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে।
কারিকুলামে উল্লেখ করা হয়েছে- সাধারণ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা ধারায় ১ম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি বা সমমান পর্যন্ত সব স্তর ও শ্রেণিতে সমন্বিত ও সুবিন্যস্তভাবে মৌলিক ও পরিবর্তনশীল দক্ষতার যথাযথ অন্তর্ভুক্তি ও প্রতিফলন নিশ্চিত করা হবে।
বাংলাদেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণকে জাতীয় ও বৈশি^ক প্রেক্ষাপট ও চাহিদা বিবেচনায় যুগোপযোগী করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টিসহ শ্রমের মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাতীয় শিক্ষা নীতিতেও বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে।