শিক্ষকের অপরাধে শিক্ষক আটক সভাপতির ঘুষির অপরাধে কি হবে -শিসফো
মো. ফয়সল শামীম।।
পত্রিকার পাতা খুললেই চোখে পড়ে শিক্ষক নির্যাতনের খবর। দেশের কোথাও না কোথাও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভপিতি অথবা সদস্যদের দ্বারা শিক্ষক নির্যাতনের খবর। আমাদের দেশের পেক্ষাপটেে এটা যেন রুটিন কাজে পরিণত হয়েছে। গতকাল মোবাইল অন করতেই চোখে পড়ল বগুড়ার নন্দীগ্রামে কোশাস উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শামিম হোসেনের ঘুষিতে তেতুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাজ্জাদুল ইসলাম দুদুর তিনটি দাঁত ভেঙে যাওয়ার ঘটনা । শুক্রবার সকালে আহত প্রধান শিক্ষককে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নন্দীগ্রাম উপজেলার পন্ডিতপুকুর বাজারে এই ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে সাজ্জাদুলের স্ত্রী ও কোশাস উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মঞ্জুয়ারা বেগম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে কোশাস উচ্চ বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটির সভা হয়। ওই সভায় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শামিম হোসেন লিটন চারজন শিক্ষক নিয়োগের বিষয় নিয়ে উত্তেজিত হয়ে নোটিশ খাতা ছিঁড়ে ফেলেন।
এরপর তিনি সভা না করেই বিদ্যালয় থেকে চলে যান। ওই দিন সন্ধ্যায় মঞ্জুয়ারার স্বামী সাজ্জাদুল ইসলাম দুদু পন্ডিতপুকুর বাজারে যান। ওই বাজারে কোশাস উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শামিম হোসেন লিটনের কাপড়ের দোকান আছে।
দোকানে গিয়ে সাজ্জাদুল নোটিশ খাতা ছিড়ে ফেলার কারণ জানতে চান। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে তর্ক-বিতর্কের একপর্যায়ে শামিম হোসেন লিটন ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে মারধর করেন। একপর্যায়ে মুখে ঘুষি দিলে সাজ্জাদুলের সামনের তিনটি দাঁত ভেঙে যায় । পরে সাজ্জাদুলকে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শুক্রবার তাকে বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এই ঘটনায় কোশাস উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শামিম হোসেন লিটন বলেন, সাজ্জাদুল ইসলাম দুদুর সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় তিনি দোকান থেকে দ্রুত বের হয়ে যাওয়ার সময় কলাপসিবল গেটে ধাক্কা লেগে দাঁত পড়ে যায়। তাৎক্ষনাত আমি ভুক্তভোগি শিক্ষক সাজ্জাদুল এর সাথে কথা বলি । প্রায় ৫ মিনিট কথা বলি । উনার অত্যাচারের বর্ননা শুনে আমি বাকরুদ্ধ হয়েছিলাম কিছুক্ষনের জন্য।
দিতীয় ঘটনা
লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে ৬ ছাত্রের চুল কেটে দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত মাদ্রাসা শিক্ষক মঞ্জুরুল কবির মঞ্জুকে আটক করেছে পুলিশ।
'আটক মঞ্জু হামছাদী কাজির দিঘীরপাড় আলিম মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক ।
ঘটনার শিকার শিক্ষার্থীরা জানান, বুধবার তারা শ্রেণিকক্ষে পাঠ্য কার্যক্রমে অংশ নেয়। এক পর্যায়ে শিক্ষক মঞ্জুরুল কবির ৬ জনকে দাঁড় করিয়ে শ্রেণিকক্ষের সামনের বারান্দায় যেতে বলেন। এ সময় তিনি উত্তেজিত হয়ে তাদের সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে কেচি দিয়ে একে একে সবার মাথার সামনের অংশের চুল এলোমেলোভাবে কেটে দেন। পরে তারা লজ্জায় ক্লাস না করেই বেরিয়ে যায়।
এ ঘটনার এক মিনিট ১০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও শুক্রবার সকাল থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে কয়েকজন ছাত্রকে কাঁদতে দেখা গেছে।
একজন শিক্ষকের এইরকম আচরন কোনোভাবেই কাম্য নয়। তার শিক্ষক সুলভ ব্যবহার সকলে আশা করে এবং তার দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি দাবি করি। পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারলাম ঐ শিক্ষক আটক হয়েছে । আমি মনে করি এটা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে। অপরদিকে বগুড়ায় সভাপতির ঘুষিতে শিক্ষকের দাত ভাঙ্গার ৭২ ঘন্টা পার হলেও সভাপতির আটক না হওয়া আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে। আইন সবার জন্য সমান। একজন আটক হবে আর কেউ অপরাধ করে পার পাবে এটা হতে পারে না। তাই সরকারের কাছে দুইটা ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি ।
লেখক-
সভাপতি
শিক্ষক সুরক্ষা ফোরাম( শিসফো) ।