দীর্ঘ মহামারিতে সংকটে দিন কাটছে বাংলাদেশের কওমি এবং নূরানি মাদ্রাসাগুলো
ফিরোজ আলম ।।
করোনার যেন ক্লান্তি নেই।অবিরাম শুধু ভোগাচ্ছে সাধারন মানুষকে।বাদ যায়নি কওমি ও নূরানি মাদ্রাসা গুলো ও। শিক্ষালয়ের প্রতিষ্ঠানে পনের মাসের টানা লকডাউনের কারণে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাংলাদেশের কওমি এবং নূরানি মাদ্রাসাগুলোতেও।
একাধিক মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে লকডাউন শুরু হওয়ার পর তাদের মাদ্রাসার আয় কমে গেছে। ফলে অনেক প্রতিষ্ঠানই শিক্ষকদের ঠিকমতো বেতন দিতে পারছেন না।
সরকারি হিসাবে বাংলাদেশে ১৪ হাজার ৩৯৭ কওমি মাদ্রাসা রয়েছে।এবং সম সংখ্যক নূরানি মাদ্রাসা। তবে কওমি সংশ্লিষ্টদের দাবি, সারা দেশে নূরানি এবং কওমী মাদ্রাসার সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। এসব প্রতিষ্ঠানে ২২ লাখের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে বলে তারা বলছেন।
বাংলাদেশে ছয়টি পৃথক আঞ্চলিক বোর্ডের মাধ্যমে এসব মাদ্রাসা পরিচালিত হয়।
বাংলাদেশের কওমি ও নূরানি মাদ্রাসাগুলো মূলত স্থানীয় সাহায্য, অনুদান ও শিক্ষার্থীদের বেতনের ওপর নির্ভর করে পরিচালিত হয়। দারুল উলুম দেওবন্দের রীতিনীতি অনুসরণ করে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সরকারি কোন সহায়তা গ্রহণ করেনা এসব মাদ্রাসা।
সাধারণত এসব মাদ্রাসার অনুদানের সবচেয়ে বড় অংশটি আসে রমজান মাসে। কিন্তু গত বছরের মত এই বছর ও রমজানে লকডাউনের ফলে বেশিরভাগ মানুষের আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় মাদ্রাসাগুলোরও আয় হচ্ছে না, ফলে সেগুলো পরিচালনা করাও কঠিন হয়ে পড়ছে।
লক্ষীপুরের আয়েশা রা: মহিলা কামিল মাদ্রাসার অনার্স শাখার বিভাগীয় প্রধান এবং উত্তর দূর্গাপুর তালিমুল কোরান নূরানি মাদ্রাসার পরিচালনা পর্ষদের সাধারন সম্পাদক জনাব ফিরোজ আলম বলছেন, ''করোনাভাইরাসে আমাদের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো সংকটে পড়েছে, সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই।আমাদের মত অনেক প্রতিষ্ঠান শিক্ষকদের বেতন দিতে পারছে না । আগে যারা সাহায্য সহযোগিতা করতেন, তাদের ইচ্ছা থাকলেও তারা সেভাবে করতে পারছেন না।''ফলে অনিশ্চতায় তাদের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী এবং সংশ্লিষ্ঠ শিক্ষকরা। তাদের এই প্রতিষ্ঠানে ২০০ শিক্ষার্থী আর শিক্ষক-কর্মচারী মিলে ৬ জন রয়েছেন।
১৮৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত কওমি মাদ্রাসা ২০১৭ সালের আগে সরকারি স্বীকৃতি ছিল না। তবে ২০১৭ সালে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে স্বীকৃতি দিয়েছে বাংলাদেশের সরকার। তবে সেই সময়েও আলোচনায় দেওবন্দের আদলে স্বতন্ত্র ও স্বকীয়তা বজায় রাখতে সরকারের আর্থিক সহযোগিতা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল কওমি নেতারা।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বাসসের খবর অনুযায়ী, গত বছর রমজান উপলক্ষে দেশের ছয় হাজার ৯৫৯টি কওমি মাদ্রাসার জন্য আট কোটি ৩১ লাখ ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে বাংলাদেশের সরকার। গত বছরের মে মাসের প্রথম সপ্তাহে সেসব অর্থের বিতরণও শুরু হয়।
কিন্তু কওমি মাদ্রাসার ছয়টি বোর্ডই সিদ্ধান্ত নেয় যে, রীতি মেনে তারা সরকারি এই অনুদান গ্রহণ করবেন না।তবে, জানা যায় যে দেশের বিভিন্ন স্থানের অনেক কওমি মাদ্রাসা এই অনুদান গ্রহণ করেছিলেন। একেকটি প্রতিষ্ঠান ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার করে টাকা পেয়েছে।তবে নূরানি মাদ্রাসা গুলিকে সরকার কোন বরাদ্দ দেয়নি।ফলে অর্থ সংকটে নূরানি মাদ্রাসার শিক্ষক কর্মচারিরা। কিন্তু এ বছর করোনার প্রকোপ আবারো বাড়লেও কওমী কিংবা নূরানি কোন খাতেই সরকারি বরাদ্দ লক্ষ্যনীয় হয়নি।
বিবিসি বাংলার তথ্য থেকে জানা যায় আর্থিক অনুদানের অপর্যাপ্ততার কথা মেনে নিয়ে বাংলাদেশের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বলছেন, ''কওমি ও নূরানি মাদ্রাসাগুলোকে সাহায্য দিতে যে তালিকা এসেছিল সেটা সম্পূর্ণ তালিকা ছিল না। ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে মাদ্রাসাগুলোকে সাহায্য দেয়ার নতুন একটি তালিকা দেয়া হয়েছে, সেটা এখন বিবেচনায় রয়েছে।তবে নূরানি মাদ্রাসাকে সাহায্যের বিষয়ে তিনি কিছুই বলেন নি তিনি। এমতাবস্থায় অনেকটা মানবেতর জীবন যাপন করছে কওমী ও নূরানী মাদ্রাসার শিক্ষকরা।
তাই বলব কত দান- অনুদান ই তো সরকার দিচ্ছে।৫৬০ টি মডেল মসজিদের ৫০ টি প্রধানমন্ত্রী কতৃক উদ্বোধন হয়েছে।হাজার কোটি টাকার দান সেখানে লক্ষ্যনীয় হয়েছে।মসজিদ ভিত্তিক ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে পরিচালিত ধর্ম শিক্ষা খাতে কোটি কোটি বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।তাহলে ইসলামি ও কোরানি শিক্ষার কেন্দ্রস্থল কওমি ও নূরানি মাদ্রাসায় কেন বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না।এটি কি কর্তা ব্যাক্তিদের নলেজে নেই নাকি নলেজে নিতে চাচ্ছেনা তারা এটিই এখন সাধারন মানুষের মনে দোল খাওয়া প্রশ্ন।তাই মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নিকট উদাত্ত আহ্বান অবিলম্বে নেতিক শিক্ষা তৈরির বাতিঘর কওমি ও নূরানি মাদ্রাসায় আর্থিক বরাদ্দ দিয়ে সমাজ আলোকিত করার রাস্তা প্রসারিত করুন।
লেখক - কলামিস্ট