অমুসলিমদের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় ইসলামের নির্দেশনা
কাসেম শরীফ।।
সম্প্রতি পূজামণ্ডপে কোরআন অবমাননাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু অমুসলিমদের উপাসনালয়, তাদের ঘরবাড়ি ইত্যাদির ওপর দুর্বৃত্তদের হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের খবরের সঙ্গে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল প্রমাণ ছাড়া একে অন্যকে দোষারোপ করছে। ইসলাম কখনো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা উসকে দেওয়াকে সমর্থন করে না। যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকে, তারা শুধু ইসলামের শত্রু নয়, বিশ্বমানবতার শত্রু। আমরা মনে করি, কোরআন অবমাননার অবশ্যই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার। কিন্তু উপযুক্ত ও বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণসহ অপরাধীকে খুঁজে বের করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সুনিশ্চিত প্রমাণ ছাড়া কাউকে হয়রানি করা গর্হিত অপরাধ। অন্যদিকে অন্যায়ভাবে কোনো অমুসলিমের উপাসনালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও ঘর-বাড়িতে আগুন দেওয়া অমার্জনীয় অপরাধ। যারা এসব কাজে জড়িত, তাদেরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। এসব কাজ দেশে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির নামান্তর। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ এসব কর্মকাণ্ডকে কঠোর ভাষায় নিষিদ্ধ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং পৃথিবীতে ফিতনা-ফ্যাসাদ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হয়, তাদের শাস্তি হলো, তাদের হয়তো হত্যা করা হবে, নয়তো শূলে চড়ানো হবে অথবা হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কেটে দেওয়া হবে কিংবা তাদের দেশান্তর করা হবে। এটা হলো তাদের পার্থিব লাঞ্ছনা আর পরকালে তাদের জন্য আছে আরো কঠোর শাস্তি।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত : ৩৩)
কোনো অবস্থাতেই তাদের জীবন ও সম্পদের ক্ষতি করা যাবে না। সর্বাবস্থায় তাদের প্রতি মহানুভবতা দেখাতে হবে। ন্যায়বিচার পাওয়া তাদের অধিকার। ইরশাদ হয়েছে, ‘দ্বিনের ব্যাপারে যারা তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদের নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত করেনি, তাদের প্রতি মহানুভবতা প্রদর্শন ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেন না। আল্লাহ তো ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন।’ (সুরা : মুমতাহিনা, আয়াত : ৮)
সব ধর্ম ও মতাদর্শের মানুষ ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোকে শ্রদ্ধার চোখে দেখে এবং কোনো উপাসনালয়ে হামলা যেকোনো আইনের চোখে অপরাধ। শান্তির ধর্ম ইসলাম এ বিষয়ে সর্বাধিক সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে। প্রয়োজনে অন্য ধর্মের উপাসনালয় রক্ষায় যুদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে। সব ধর্মের উপাসনালয় রক্ষা কোরআনের দাবি। এ বিষয়ে কোরআনের ভাষ্য এমন : ‘…আল্লাহ যদি মানবজাতির এক দলকে অন্য দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তাহলে বিধ্বস্ত হয়ে যেত খ্রিস্টান সংসারবিরাগীদের উপাসনাস্থল, গির্জা, ইহুদিদের উপাসনালয় ও মসজিদসমূহ, যার মধ্যে আল্লাহর নাম অধিক স্মরণ করা হয়…।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ৪০) অমুসলিমদের উপাসনালয় রক্ষায় ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমর (রা.) একটি রাজকীয় ফরমান জারি করেছিলেন। বায়তুল মুকাদ্দাসের খ্রিস্টানদের জন্য তিনি একটি সংবিধান রচনা করেছিলেন। তাতে লেখা ছিল, ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। এটি একটি নিরাপত্তাসংক্রান্ত চুক্তিনামা, যা মুসলমানদের আমির, আল্লাহর বান্দা ওমরের পক্ষ থেকে স্বাক্ষরিত হলো। এই চুক্তিনামা ইলিয়াবাসী তথা জেরুজালেমে বসবাসরত খ্রিস্টানদের জীবন ও সম্পদ, গির্জা-ক্রুশ ও খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের জন্য প্রযোজ্য। সুতরাং চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর তাদের উপাসনালয়ে অন্য কেউ অবস্থান করতে পারবে না। তাদের গির্জা ধ্বংস করা যাবে না এবং কোনো ধরনের ক্ষতি সাধন করা যাবে না। তাদের নিয়ন্ত্রিত কোনো বস্তু, তাদের ধর্মীয় প্রতীক ক্রুশ ও তাদের সম্পদের কোনো ধরনের ক্ষতি সাধন বা হামলা করা যাবে না। (তারিখুর রাসুল ওয়াল মুলুক, তারিখে তাবারি, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৪৯)
কোরআন-হাদিসের উপরোল্লিখিত উদ্ধৃতি দ্বারা এ কথা স্পষ্ট হয়েছে যে সংখ্যালঘু অমুসলিমদের ওপর হামলা করা, ঘর-বাড়ি বা উপাসনালয়ে আক্রমণ করা ইসলাম কোনোভাবেই সমর্থন করে না।