প্রাথমিক শিক্ষা পরিবারের প্রতি ভালোবাসা থেকেই লিখছি
মো.শরিফুল ইসলাম, প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা :
এগিয়ে যাচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা, এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কারণ সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের। আর কেউ মানুক আর নাই মানুক। আমি কিন্তু এমনটাই মানি। তাই প্রাথমিক শিক্ষা পরিবারে কোন ছন্দপতন হলে আমারই বেশি গায়ে লাগে। ক্লাসের শিক্ষার্থীরা সাবলীলভাবে ইংরেজি পড়তে না পারায় আমাদেরই একজন সহকর্মী (জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার) আরেকজন সহকর্মী (সহকারী শিক্ষক) কে সাময়িক বরখাস্ত করেছেন। এই নিয়েই বেঁধেছে যতো কান্ড। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। যেন রীতিমতো কাদা ছোড়াছড়ি হচ্ছে নিজেদের মাঝে। এমন প্রেক্ষাপটেই আজ কিছু লিখছি। প্রাথমিক শিক্ষা পরিবারের প্রতি ভালোবাসা থেকেই লিখছি তাই সকলের ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টি কামনা করছি।
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় মাতৃভাষা হিসেবে বাংলা ও বিদেশি ভাষা হিসেবে ইংরেজি ভাষার মৌলিক দক্ষতা অর্জন এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে বাংলা ও ইংরেজি ভাষার যথাযথ ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আর এ কারণে প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে বাংলা ও ইংরেজি ভাষা দুটি আলাদা বিষয় হিসেবে শিক্ষাক্রমে স্থান করে নিয়েছে। যার প্রধান উদ্দেশ্য হলো ভাষার দক্ষতা অর্জন। বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের কারণে বর্তমান সময়ে সব শিশুকেই সাবলীল পাঠক হিসেবে গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহের বেশিরভাগ শিশুর পঠন দক্ষতা প্রত্যাশিত মানে পৌঁছতে পারছে না। এখন প্রশ্ন থাকতে পারে—কীভাবে শিক্ষার্থীদের সাবলীল পাঠক হিসেবে গড়ে তোলা যায়?
প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে রাতারাতি শিক্ষার মান গুণগতভাবে পরিবর্তন করার কোনও যাদুমন্ত্র আছে বলে আমার জানা নেই। এই লক্ষ্য অর্জন করতে হলে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং প্রাথমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। এ জন্য সকলের চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন ঘটিয়ে সচেতনভাবে বাস্তব কাজ করতে হবে। গতানুগতিক চিন্তা-চেতনা নিয়ে সমাজের মৌলিক পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। ব্যক্তি স্বার্থ ও নেতিবাচক চিন্তা পেছনে ফেলে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য কাজ করতে হবে। আবার এর ফলাফল দৃশ্যমান করতে সময়ও দিতে হবে। এক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণি থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শিশুদের পাঠগত অবস্থান নির্ণয় করার জন্য শ্রেণিভিত্তিক মূল্যায়ন-উপকরণ/টুলস তৈরি করে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেতে পারে। শিক্ষার্থীদের পাঠগত অবস্থান নির্ধারণের পাশাপাশি তাদেরকে সাবলীল পাঠকে রূপান্তর করতে করণীয় বিষয়েও অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে এবং দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলমান সফল উত্তম চর্চাগুলো (ইনোভেশন) অনুকরণ করা যেতে পারে। প্রাথমিক স্তরের প্রারম্ভিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পঠন দক্ষতা উন্নয়নে `রিডিং হাব` স্থাপন করা যেতে পারে।
শুধুমাত্র সহকারী শিক্ষকের ওপর সমস্ত দায়ভার না চাপিয়ে সহকারী শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসারগণকে সম্পৃক্ত করে পরিকল্পনা প্রনয়ণ করতে হবে যেখানে উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও ইন্সট্রাক্টরকে মনিটরিং ও মেন্টরিং এর দায়িত্ব প্রদান করা যেতে পারে। প্রাথমিক শিক্ষা পরিবাবের সবাইকে একই লক্ষ্যে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে যাতে আমাদের লক্ষ্য অর্জিত হয়। সফলতার অংশীদারিত্ব যেমন সকলকে দিতে হবে, ব্যর্থতার দায়ও সকলকেই নিতে হবে। প্রত্যেককেই সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব পালন করতে হবে। আর এজন্য সবসময় সবাইকেই জবাবদিহি করতে হবে।
পরিশেষে এতটুকুই বলবো, সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে আসুন সবাই ঐক্যের ছন্দে উদ্ভাসিত হই, মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিশুতে মনোনিবেশ করি। কারণ, শিশুর সফলতাই যে প্রাথমিক শিক্ষা পরিবারের সত্যিকারের সফলতা।