প্রসংগত: শিক্ষকনেতার বক্তব্য বনাম বেশিকদের মাথা ব্যাথা
সারা বিশ্ব জুড়ে যখন করোনা ভাইরাসের জ্বরে অাক্রান্ত ঠিক তখনই সাজু স্যারের ফেসবুকের একটি পোষ্ট নাড়া দিয়েছে বেসরকারি শিক্ষক সমাজকে। তিনি অনেক বড় মাপের মানুষ। বড় মনের কিনা জানিনা। কথা টা এজন্য বল্লাম যে তিনি ৪% কর্তনের জন্য তার কোন জনমত জরিপ লাগলনা। তিনি বিভিন্ন দোহাই দিয়ে ৪% বহাল করতে পারলেন। তিনি সাফাই গাইলেন যে ৪% কর্তন বিষযটি অবসর সুবিধা বোর্ড মিটিং এ অনুমোদিত হয়েছে এবং যারা মূলত এ মিটিং এ উপস্থিত ছিলেন তারা অনারিয়াম গ্রহন করেছেন এবং ৪% কর্তনে বিষয়ে এজেন্ডায় স্বাক্ষর ও করেছেন। তখনকার বোর্ড মিটিং এ যারা উপস্থিত ছিলেন তারা ও ৪% কর্তনের বিষয়টি প্রতিবাদ করেছিলেন। তারা বলেছিলেন বিষয়টি বিস্তারিত মিটিং এ আলোচনা হয় নাই। এক- আধবার উঠেছিল বটে কিন্তু কর্তনের জন্য স্থির সিদ্ধান্ত আসেনাই।
তুমুল বিতর্ক চলে এ নিয়ে দেশজুড়ে বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে যা আজও বিরাজমান ।
দেশের সবচেয়ে বড় পেশাজীবী সংগঠন বিমর্ষিত, হতচকিত ও হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ে তখন । একি হচ্ছে এক এক সময়ে এক এক ধরণের বার্তা। ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮ বিভিন্ন অন লাইন পত্রিকায় প্রকাশিত নিউজ থেকে জানা গিয়ছিল যে তৎকালীন মাননীয় সচিব মহোদয় জানিয়েছিলেন যে "বেসরকারি শিক্ষকদের অবসর ও কল্যাণের কর্তন বাড়ছেনা", আগের মত ৬ শতাংশই থাকছে। তিনি আরও বলেছিলেন শিক্ষকদের সাথে আলোচনা ছাড়া চাঁদার হার বাড়ানো হবেনা"।
সচিব মহোদয়ের এমন বক্তব্যের পর শিক্ষক সমাজ আশা নিয়ে বসেছিলো। নির্বাচনের আগেও আরও একটি প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছিল। তৎকালীন সচিব মহোদয় জানিয়েছিলেন যে প্রজ্ঞাপনটি ভুল ক্রমে ওয়েব পেজে এসেছে,প্রজ্ঞপনটি প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু আজ তারা হাতাশাগ্রস্থ ।১৫ এপ্রিল২০১৯ এর প্রজ্ঞাপন তাদের আবারও ভাবিয়ে তুলেছিল।সারাদেশে শিক্ষক শিক্ষকসমাজ প্রতিবাদ মুখর হয়েছিল। একই দেশে একই যোগ্যতায়,একই ছাতার তলে একই সিলেবাস পড়িয়ে বেসরকারিদের অবসরের পরে কিছু অার্থিক সুযোগ প্রদান করার জন্য তাদের বেতন থেকে কেটে ফান্ড গঠন করতে হচ্ছে কিন্ত যতদূর জানা যায় সরকারিদের এরকম বিধি বিধান পালন করতে হয়না। ।
গত ১৮ এপ্রিল ২০১৯ খ্রি বরিশালে অতিরিক্ত ৪% এর প্রতিবাদে বরিশাল শিক্ষক সমাজকর্ম মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছিল। অনুষ্ঠানের সভাপতি সহ অন্যান্য বক্তারা অতিরিক্ত ৪% কর্তনের তীব্র প্রতিবাদ জানান। সংগ্রাম কমিটির যুগ্ম- আহবায়ক মো রেজাউল করিম সাহেব বলেন যে " বেসরকারি শিক্ষৃকরা মানবেতর জীবন যাপন করেন। এ অবস্থায় তাদের বেতন থেকে ৪% অতিরিক্ত কর্তন মানে তাদের জীবন যাত্রার উপর বাড়তি চাপ।
এ অবস্থায় অতিরিক্ত ৪% কর্তন প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার করতে হবে ""। ভোলা ও নরসিংদী জেলার শিক্ষক কর্মচারীরা অতিরিক্ত ৪% কর্তনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। সভায় বক্তারা এ প্রজ্ঞাপন বাতিল করার আহবান জানান। এর আগে ২৬ এপ্রিল ২০১৮ তৎকালীন ডিজি মহোদয় মো মহাবুবুর সাহেব ঢাকা শহরের খ্যতনামা স্কুল ও কলেজে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নিয়ে ৪% কর্তনের বিষয়ে একটি মিটিং করেছিলেন। উক্ত মিটিং এ প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষ মহোদয়গন সাফ জানিয়েদেন" মরার পর টাকা দিয়ে কী করবে। তারা আরও বলেন সরকারি তরফ থেকে ফান্ড বানানো হোক "।
বিটিএ এর সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মো: কাওছার আলী স্যার বলেছে " প্রধান মন্ত্রীর নির্দেশে এটি বন্ধ হবে। বিটিএ অতিরিক্ত ৪% কর্তন বন্ধে জন্য অবসর সুবিধা প্রদানকারি অফিস ঘোরাও কর্মসূচি ও দিয়েছিলো, অদৃষ্ট কারনে সেটি স্থগিত হয়ে যায়। অধ্যক্ষ পরিষদের সভাপতি মো; মজাহারুল সাহেব স্যার বলেছেন " সময় এসেছে পরিবর্তনের।তাই অবসর ও কল্যান বাদ দিয়ে পেনসনের ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
সেদিন এত প্রতিবাদ হওয়া সত্ত্বেও ৪% কর্তন রহিত হয় নাই যা নিয়ে এখনও বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। সেদিন যদি এরকমভাবে ফেসবুক বা সংবাদপত্রে জনমত জরিপ নেওয়া হতো তাহলে ৯৯.৯% জনমত মনে হয় ৪% কর্তনের বিরুদ্ধে যেত। আজ যেমন সাজু স্যারে ফেসবুকে "বেতন ও বৈশাখী ভাতা কর্তনের "স্ট্যাটাসে সকলেইপ্রতিবাদ মূখর হয়েছে। বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারী ফোরাম এর সভাপতি মো: সাইদুল হাসান সেলিম স্যার এমপিও ও নন এমপিও ভুক্ত শিক্ষদের জন্য " ৬ মাসের রেশনিং এর ব্যবস্থা করতে সরকারের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন"।
ফোসবুক পেজে ইয়াকুব আলী স্যার তার পোস্টে লিখেছেন বেসরকারি শিক্ষকদের " স্থায়ী রেশনের ব্যবস্থা করা হউক "। নাবিল ওয়াকফার তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন"বেসরকারি শিক্ষকদের সামান্য অনুদানের দিকে নজর দেয় তারা বিবেকহীন এবং লুন্ঠনকারীদের দোসর,"। প্রধানমন্ত্রী করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সহ অন্যান্য অানষংগিকতার জন্য গত ২৫ মার্চ ২০২০ খ্রিস্টাব্দ জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষনে ৫০০০কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন সেখানে বেসরকারি শিক্ষকদের কাছথেকে এভাবে অর্থকেটে নেওয়ার কোন যুক্তি আছে বলে শিক্ষক সমাজের মনে করে না, যেখানে গ্রাজুয়েট শিক্ষকের বেতন একজন সরকারি পিওনের চেয়েও কম।
মানীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেসরকারি শিক্ষদের ৫% প্রবৃদ্ধি ও ২০% নববর্ষ ভাতা দিয়েছেন যেটা কিছু কিছু শিক্ষক নেতা একান্তই নিজেদের আন্দোলনের ফসল বলে আত্মতৃপ্তির ঢোকুর তোলেন। কিন্তু বৈশাখীভাতা অর্জন কারো কোন ব্যক্তিগত আন্দোলনের ফসল নয়। এটি আদায়ে সকল সংগঠন মাঠে ছিলো মাননীয় শেখ হাসিনার দৃষ্টিআকর্ষন করতে সমর্থ হয়েছিল বলে, এটি অর্জিত হয়েছে। আগামীতে আমাদের জাতীয়করণসহ অমিমাংসিত দাবীগুলো নিয়ে সকলে এগুতে পারলে তা অর্জিত হবে বলে বোধ করি।
জাতির ক্রান্তিলগ্নে শিক্ষকসমাজ অবশ্যই দুর্দশাগ্রস্থ জনগনের পাশে দাড়াবে জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথায়, যদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এমন কথা বলেন। কোন শিক্ষক নেতার কথায় নয় বা কোন ফেসবুকে স্ট্যাটাস বদদৌলতে নয়। আর একটি ও টাকা দিতে রাজি নয় শিক্ষক সমাজ।
লেখকঃ শিক্ষক, বিশ্বজিৎ রায়
মৃজাপর মাধ্যমিক বিদ্যালয়
তালা, সাতক্ষীরা।