গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন ১০ লাখ শিক্ষার্থীর
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার সময় নিয়ে এখনো উদ্বেগ কাটেনি। এগুলোর মধ্যে দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ থেকে বের হয়ে যাওয়া নিয়ে নতুন করে জটিলতা তৈরি হওয়ায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উৎকণ্ঠা রয়েই গেছে। তবে শিগগিরই এ বিষয়ে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একই সাথে নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনও এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে।
এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় ১০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। উত্তীর্ণ হওয়া এই শিক্ষার্থীরা কোনো না কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। তবে অধিকাংশ শিক্ষার্থী গুচ্ছ পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ নিতে চায়।
সূত্রমতে, এবারো শুরু থেকেই ২২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা হওয়ার কথা রয়েছে। গত মাসে শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনির সাথে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভিসিদের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছিল। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চলতি মার্চ মাসের শেষ দিকে গুচ্ছের অধীনে ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি (সার্কুলার) প্রকাশ করার কথা। তবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শিক্ষক সমিতি গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্তের ঘোষণায় ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম থেমে রয়েছে।
এ দিকে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) এক সভা থেকে জবি ও ইবিকে গুচ্ছে থাকতে হবে জানানোর পর নতুন করে আলোচনায় আসে সময়মতো এবছর গুচ্ছের সার্কুলার প্রকাশের বিষয়টি। তবে গুচ্ছ ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ বছর ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করার জন্য এখনো কোন কমিটি গঠন করা হয়নি। ফলে চলতি মার্চ মাসে গুচ্ছের সার্কুলার প্রকাশের সম্ভাবনা নেই।
গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি সূত্র জানিয়েছে, গত ফেব্রুয়ারিতে এক সভায় গুচ্ছ নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা এবং শিক্ষকদের নানা অসন্তোষের বিষয়গুলো আমলে নিয়ে শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে এবং গুচ্ছের চলমান বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের প্রতিশ্রুতি অব্যাহত রেখে গুচ্ছের অধীনে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা অব্যাহত রাখার এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর থাকা-না থাকার টানাপড়েনে আবারো একটি অনিশ্চিত গন্তব্যে এগোচ্ছে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার উদ্যোগটি।
গত মাসের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের আগামী জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে ক্লাস শুরুর পরিকল্পনা করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়নের জন্য মার্চের শেষ দিকে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এ ছাড়া এপ্রিলের শেষ দিকে অথবা মে মাসের শুরুর দিকে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের বিষয়েও আলোচনা করা হয়েছিল।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম বলেন, আগামী ২৯ মার্চ আমরা সাধারণ সভা ডেকেছি; সেখানে শিক্ষক সমিতি যে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে- তা আমরা জানিয়ে দেবো। সভায় গুচ্ছের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, গুচ্ছের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে না পারার কারণে অনিশ্চয়তায় রয়েছে লাখ লাখ শিক্ষার্থী। তাদের দায়ভার কে নেবে এমন জিজ্ঞাসাও তার।
তবে, এখনো নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকার কথা জানিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার বলেন, আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত জানিয়েছি; আপাতত তা থেকে সরে আসার কোনো সুযোগ নেই। আমরা একাডেমিক কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সিদ্ধান্ত বদলাতে হলে একাডেমিক কাউন্সিলেই তা নিতে হবে- আপাতত একাডেমিক কাউন্সিলে বসার কোনো পরিকল্পনা নেই বলেও জানিয়েছেন তিনি।
ইবি ভিসি অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, আমাদের শিক্ষকরা এরইমধ্যে একটি সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন, এখন আমার তাদের বোঝানো ছাড়া খুব বেশি কিছু করার নেই। আমি তাদের সাথে কথা বলব, তখন আমরা দেখব নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারি কি না। শিক্ষকদের বাদ দিয়ে বা তাদের ছাড়া ভিসি চাইলেও কিছু করতে পারবে না। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ভিসি অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক বলেন, সামনে আমাদের সিন্ডিকেটের সভা রয়েছে; সভার পর সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
এর আগেও গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে যেতে বেশ কয়েক দফা দাবি জানানোর পর জবি শিক্ষক সমিতি চলতি মাসে গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা জানায়। জবির পর একই সিদ্ধান্ত জানায় ইবি শিক্ষক সমিতি। এ ছাড়াও গুচ্ছ থেকে বের হয়ে যেতে আগ্রহী গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) শিক্ষক সমিতিও। বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গেল দুই বছরের ভর্তি পরীক্ষায় দীর্ঘসূত্রতা, ভর্তিতে কালক্ষেপণ, ভিসিদের সিদ্ধান্তহীনতা, ভর্তিতে জটিলতা ও হয়রানিসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়াও গুচ্ছে না থাকার দাবি জানানোর বিষয়ে খোদ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদেরই অনীহার কারণগুলোও এ দিন শিক্ষামন্ত্রীকে জানিয়েছেন সভায় থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক সমিতির প্রতিনিধিরা। তবে শিক্ষামন্ত্রী, উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও তিনি একটি ভর্তি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে ভর্তির ব্যবস্থা চান। প্রয়োজনে স্যাট (একজন শিক্ষার্থীর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষা গ্রহণের জন্য কতখানি তৈরি, তা এ পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করা হয়ে থাকে) এর মতো ব্যবস্থা তার সমাধান হতে পারে বলেও ইঙ্গিত করেন তিনি।
শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, বিভিন্ন উন্নত দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে একটি পরীক্ষা হয়। সেখানে হয়তো গণিত, বিজ্ঞান বা ভাষা এ জাতীয় বিষয় এবং সাধারণ জ্ঞানের ওপর পরীক্ষা হয়। সেই পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় পাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের দেশে যারা এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষা দিচ্ছে, তারাই বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে আবারো একই বিষয়ের ওপর পরীক্ষা দিচ্ছে। সেটি না করে ভাষা, গণিত, সাধারণ জ্ঞানের ওপর একটি পরীক্ষা হওয়া উচিত। আর যতক্ষণ না পর্যন্ত সেটিতে যেতে পারছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত বিদ্যমান গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষা ব্যবস্থাপনাকে আরো ভালো করতে হবে। ডা: দীপু মনি মনে করেন, গুচ্ছ পদ্ধতিতে যেতে যত সময় লেগেছে, নতুন পদ্ধতিতে যেতে তত সময় লাগবে না।
তিনি জানান, ভিসিদের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সাথে কথা বলে যে ধরনের মতামত পাওয়া গেছে, তাতে মনে হয়, হয়তো অনেক কম সময়েই নতুন পদ্ধতিতে যাওয়া যাবে।
উল্লেখ্য, দেশে বর্তমানে ৫৩টি সরকারি এবং ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। সবগুলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ঢাবি, রাবি, চবি ও জাবি এবং কয়েকটি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় বাদে অধিকাংশই গুচ্ছ ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। যাতে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একজন শিক্ষার্থী একটি পরীক্ষা দিয়েই ভর্তি হতে পারেন। আর ১৯৭৩ সালের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির সুযোগ থাকে আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৭/০৩/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়