এক হাতে ১৩০০ কিডনি প্রতিস্থাপন
নিউজ ডেস্ক।।
আন্তরিকতা ও পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাবে যখন দেশের সরকারি হাসপাতালে নিভু নিভু কিডনি প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া, সেখানে একের পর এক মাইলফলক ছুঁয়ে চলেছেন স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত চিকিৎসক অধ্যাপক কামরুল ইসলাম ও তার প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি (সিকেডি) হাসপাতাল। এবার ১৩শ কিডনি প্রতিস্থাপনের মাইলফলকে পৌঁছালেন তিনি। গতকাল বুধবার রাতে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ১৩শ তম কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। মাইলফলকের বিষয়টি অধ্যাপক কামরুল ইসলাম নিজেই জানিয়েছেন।
চব্বিশ বছর বয়সী ফাহিম হোসেনের কিডনি প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে এই কীর্তি গড়ল সিকেডি। ফাহিমের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলায়। ছয় মাস আগে তার কিডনিজনিত সমস্যা দেখা দেয়। একটি নয়, পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দুটি কিডনি বিকল পাওয়া যায় এই যুবকের। কিডনিদাতা সংকটে শুরুতে ডায়ালাইসিসে ভরসা রাখলেও ছেলের জীবন বাঁচাতে এগিয়ে এসেছেন মা ফাতেমা বেগম। রাজধানীর শ্যামলীতে অবস্থান সিকেডির। সরকারি হাসপাতালে যেখানে কিডনি প্রতিস্থাপনের
সংখ্যা অতি নগণ্য, সেখানে সিকেডিতে বর্তমানে প্রতি সপ্তাহে পাঁচটি কিডনি প্রতিস্থাপন হচ্ছে। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী অধ্যাপক কামরুল ইসলাম। বেসরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে যেখানে পাঁচ লাখের নিচে কিডনি প্রতিস্থাপন হচ্ছে না, সেখানে মাত্র দুই লাখ ১০ হাজার টাকায় প্রতিস্থাপন করছে সিকেডি। কোনো ধরনের পারিশ্রমিক নিচ্ছেন না অধ্যাপক কামরুল।
প্রতিষ্ঠানটির চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রোগীদের ফলোআপ পরীক্ষার ব্যাপারে উৎসাহিত করতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচ ও রিপোর্ট দেখার ফিও নেওয়া হয় না হাসপাতালটিতে। এ ছাড়া খরচ কমাতে কিডনি সংরক্ষণের জন্য বিদেশ থেকে আমদানি করা একধরনের দামি তরলের বিকল্পও তেরি করেছেন সেখানকার চিকিৎসকরা।
বুধবার একান্ত সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক কামরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিবছর বহু মানুষের কিডনি বিকল হচ্ছে। কিন্তু চিকিৎসার আওতায় আসছে খুবই কম। বহু মানুষ জানেই না তারা কিডনি সমস্যায় ভুগছেন। অধিকাংশই আসছেন শেষ সময়ে। আবার চিকিৎসা ব্যবস্থার অপ্রতুলতা আমাদের অনেক বেশি। যেসব রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন বেশিরভাগই ডায়ালাইসিসে নির্ভরশীল। কারণ, আমাদের অধিকাংশ রোগী মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের। যাদের প্রতিস্থাপনের খরচ ও পরবর্তী চিকিৎসায় ব্যয় বহন করা অনেক কঠিন। তবে বিদেশে একটি কিডনি প্রতিস্থাপনে যে পরিমাণ খরচ হয়, তার তুলনায় বাংলাদেশে অনেক কম। আমরা মাত্র দুই লাখ ১০ হাজার টাকায় করছি, অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে এর চেয়ে কিছুটা বেশি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই মানুষ চিকিৎসা পাক। অনেকেই দেশের চিকিৎসায় আস্থা রাখতে পারেন না, এটি আমাদের ফিরিয়ে আনতে হবে। আমাদের চিকিৎসায় গুণগতমানের কিছুটা সংকট আছে, এটির উন্নতি দরকার। আমাদের এখানে সফলতার হার ৯৫ ভাগের বেশি।’
শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অধ্যাপক কামরুল ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ৪০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। ১৯৯৩ সালে স্বাস্থ্য ক্যাডারে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। সরকারিতে নানা অব্যবস্থাপনায় যখন কিডনি প্রতিস্থাপন হচ্ছিল না, তখন সেখান থেকে বেরিয়ে নিজেই গড়ে তোলেন প্রতিষ্ঠান। ২০১১ সালে সরকারি চাকরি ছেড়ে প্রতিষ্ঠা করেন সিকেডি হাসপাতাল। চিকিৎসাবিদ্যায় অবদান রাখায় গত বছর স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন এই চিকিৎসক।