সম্প্রতি ঢাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে বান্ধবী সুমাইয়া রহমানের বিয়ের দাওয়াতে অংশ নেন শান্তা আক্তার। সঙ্গে ছিল তার একমাত্র ছেলে সেজান (৬) ও স্বামী রফিকুল ইসলাম। সেজানের বয়সী সেখানে অনেক শিশু ছিল। অথচ সেদিকে সেজানের আগ্রহ নেই। সে বারবার মায়ের কাছ থেকে স্মার্টফোন এনে অনুষ্ঠানের এক কোনায় বসে গেম খেলা ও ইউটিউবে নানা ধরণের ভিডিও দেখায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
অনুষ্ঠানে অংশ নেন জাগরণ প্রতিবেদক। এ দৃশ্য দেখে শান্তা আক্তারকে এ প্রতিবেদক কিছু প্রশ্ন করেন। তিনি বলেন, আসলে দোষটা আমারই। আমিও কর্মজীবী, ওর বাবাও কর্মজীবী। সেজান স্কুল টু বাসার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বাসায় আমাদের অনুপস্থিতিতে সময় কাটানোর জন্য ওকে ট্যাব কিনে দিয়েছিলাম। এখন দেখছি এমন অবস্থা- পড়াশোনা, খাওয়া-দাওয়া এবং আমাদের চেয়েও সেজান বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে মোবাইল ফোন ও ট্যাবকে।
তবে শুধু সেজানই নয়, বর্তমান যুগের অধিকাংশ সংখ্যক শিশু আসক্ত হয়ে পড়েছে স্মার্টফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ কম্পিউটারসহ নানা ধরণের ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসে। যা তাদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে স্বভাবসুলভ শিশুকাল। পড়াশোনা, সমবয়সীদের সঙ্গে মেলামেশা, দৌঁড়ঝাঁপ করে খেলাধুলা, পরিবারের সংস্পর্শসহ বহু কিছু থেকে তারা ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। এমন পরিবেশের মধ্য দিয়ে যখন একটি শিশু প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে উঠে, তখন তার মধ্যে সামাজিকতা, পারিবারিক দায়িত্ববোধ, নৈতিকতা, কর্মস্পৃহা পরিপক্কভাবে গড়ে উঠে না বলে শিশু ও মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন।
এক সময় পরিবারের প্রধান উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন বাবা। কিন্তু হালআমলে বাবার পাশপাশি মা-ও পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হয়ে গড়ে উঠেছেন। ফলে সন্তান বাসায় বাবা-মায়ের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সময় না পেয়ে সময় কাটানোর বিকল্প বস্তু হিসেবে ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রীর দিকে আত্মনিয়োগ করে ফেলেছে। এছাড়া কিছু মা গৃহিণী হিসেবে থাকা সত্বেও খেলাধূলার সামগ্রী তুলে দেয়া বা কোথাও ঘুরাতে নিয়ে যাওয়ার বদলে সন্তানের হাতে তুলে দিচ্ছেন ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী। এ চিত্র উচ্চ থেকে নিম্ন আয়ের পরিবার পর্যন্ত।
অন্যদিকে, এক সময় ঢাকার পাড়ামহল্লায় প্রচুর খেলাধূলার মাঠ থাকলেও এখন নেই। এতে কিছু অভিভাবক ইচ্ছে থাকা সত্বেও সন্তানকে মুক্তমাঠে খেলাধূলার সুযোগ করে দিতে না পেরে হাতে তুলে দিচ্ছেন ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী।
এ বিষয়ে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ দৈনিক বলেন, এসব ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইসে শিশুদের আসক্তিকে একটা রোগ হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। অভিভাবকরা যদি সন্তানের ব্যাপারে এদিক থেকে সচেতন না হোন, তাহলে শিশুর ভবিষ্যতে অনেক দিক থেকে নেতিবাচকতা আসতে পারে।
তিনি বলেন, এসব বিষয় থেকে শিশুর আসক্তি দূর করার উপায় অভিভাবককেই খুঁজতে হবে। প্রয়োজনে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সহযোগিতা নিতে হবে।
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.