দেশের কয়েকটি জেলার কিছু কিছু গ্রামে রোববার উদযাপিত হবে ঈদুল আজহা। সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে এসব গ্রামে ঈদ উদযাপনের এই রেওয়াজ চলে আসছে বহুদিন থেকে। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত:
চাঁদপুর : জেলার ৪০ গ্রামে রোববার সাদ্রা দরবার শরিফের অনুসারীরা ঈদ উদযাপন করবেন। বিগত ৯১ বছর ধরে এসব গ্রামে এই রেওয়াজ চলে আসছে। সাদ্রা ছাড়াও একদিন আগে ঈদ উদযাপন করা গ্রামগুলো হচ্ছে- হাজীগঞ্জ উপজেলার বলাখাল, শ্রীপুর, মনিহার, বরকুল, অলীপুর, বেলচোঁ, রাজারগাঁও, জাকনি, কালচোঁ, মেনাপুর, ফরিদগঞ্জ উপজেলার শাচনমেঘ, খিলা, উভারামপুর, পাইকপাড়া, বিঘা, উটতলী, বালিথুবা, শোল্লা, রূপসা, গোয়ালভাওর, কড়ইতলী, নয়ারহাট; মতলবের মহনপুর, এখলাসপুর, দশানী, নায়েরগাঁও, বেলতলীসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে। এ ছাড়া চাঁদপুরের পার্শ্ববর্তী নোয়াখালী, ভোলা ও শরীয়তপুর জেলার কয়েকটি স্থানে মাওলানা ইছহাক খানের অনুসারীরা ঈদ উদযাপন করেন।
হাজীগঞ্জ উপজেলার বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়নের সাদ্রা হামিদিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আবু বকর বলেন, ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মরহুম মাওলানা আবু ইছহাক ইংরেজি ১৯২৮ সাল থেকে সৌদির সঙ্গে মিল রেখে ধর্মীয় উৎসব পালনের প্রচলন শুরু করেন।
চট্টগ্রাম : দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাত উপজেলার ৫০ গ্রামের বাসিন্দারা রোববার ঈদুল আজহা উদযাপন করবেন। তারা চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার জাহাঁগিরিয়া শাহ সুফি মমতাজিয়া দরবার শরিফ ও সাতকানিয়া মির্জাখিল দরবারের অনুসারী। উত্তর চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার দুই ইউনিয়নের শতাধিক পরিবারও রোববার ঈদ উদযাপন করবেন। সকাল ৮টায় চন্দনাইশ দরবারের ঈদগাহ মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। জামাত পরিচালনা করবেন দরবার শরিফের পীর মাওলানা হজরত শাহ সুফি সৈয়দ মোহাম্মদ আলী (মা. জি. আ.)।
চন্দনাইশ উপজেলার পশ্চিম এলাহাবাদ, উত্তর কাঞ্চননগর, জুনিগোনা, আব্বাস-পাড়া, মাঝেরপাড়া, নতুনপাড়া, দিঘিরপাড়া, কুন্দুপাড়া, কেশুয়া, বরকল, মোহাম্মদপুর, বরমা, হারালা, সাতবাড়িয়া, উত্তর হাশিমপুর, সৈয়দাবাদ, খুনিয়ারপাড়া; পটিয়ার হাইদগাঁও, ফকিরপাড়া, বাহুলী, মাঝেপাড়া, কালারপুল; বাঁশখালীর জলদী, গুনাগরি, কালীপুর, গণ্ডামারা, মিঞ্জিরিতলা, ছনুয়া, সাধনপুর; আনোয়ারার তৈলাদ্বীপ, বাথুয়া, বারখাইন; বোয়ালখালীর চরদ্বীপ, খরদ্বীপ; লোহাগাড়ার বড়হাতিয়া, আমিরাবাদ, চুনতি, পুঁটিবিলা, উত্তর সুখছড়ি, আধুনগর; সাতকানিয়ার মির্জাখিল, বাংলা-বাজার, মাইশামুড়া, খোয়াছপাড়া, বাজালিয়া, কাঞ্চনা, গাঠিয়াডাঙ্গা, পুরানগর, মলিয়ারায় রোববার ঈদ। এ ছাড়া সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড ও বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের শতাধিক পরিবার রোববার ঈদ উদযাপন করবে। তারা সবাই সাতকানিয়ার মির্জাখিল গ্রামের পীর হজরত মাওলানা মোখলেছুর রহমান জাহাঁগিরির (রহ.) মুরিদ।
পটুয়াখালী : জেলার বিভিন্ন উপজেলার ২৮ গ্রামের ২৫ হাজার মানুষ রোববার ঈদ উদযাপন করবেন। সদর উপজেলার বদরপুর ও ছোট বিঘাই, গলাচিপা উপজেলার সেনের হাওলা, পশুরিবুনিয়া, নিজ হাওলা ও কানকুনিপাড়া, বাউফল উপজেলার মদনপুরা, শাপলাখালী, রাজনগর, বগা, ধাউরাভাঙ্গা, সুরদী, চন্দ্রপাড়া, দ্বি-পাশা, কনকদিয়া সাবুপুরা, বামনিকাঠি, বানাজোড়া ও আমিরাবাদ এবং কলাপাড়া উপজেলার দক্ষিণ দেবপুর, পাটুয়া, মরিচবুনিয়া, নাইয়া পট্টি, নিশানবাড়িয়া, শাফাখালী, তেগাছিয়া, ছোনখোলা ও বাদুরতলী গ্রামে রোববার ঈদ। এসব গ্রামের মধ্যে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে বদরপুর দরবার শরিফের মসজিদে।
বদরপুর দরবার শরিফ মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি নাজমুল আলম আকন্দ জানান, সকাল সাড়ে ৯টায় ঈদের প্রধান নামাজ হবে এবং ইমামতি করবেন মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা শফিকুল ইসলাম।
প্রসঙ্গত, এসব এলাকার মুসল্লিরা সদর উপজেলার বদরপুর দরবার শরিফের পীর, চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার পীর এবং পটিয়ার এলাহাবাদ পীরের অনুসারী। তারা ১৯২৮ সাল থেকে প্রতি বছর এভাবে আগাম রোজা রাখা, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা উদযাপন করে আসছেন।
লক্ষ্মীপুর : জেলার রামগঞ্জ উপজেলার নোয়াগাঁও, জয়পুরা, বিঘা, বারো ঘরিয়া, হোটাটিয়া, শারশোই, কাঞ্চনপুর ও রায়পুর উপজেলার কলাকোপা গ্রামসহ ১০ গ্রামের প্রায় সহস্রাধিক মানুষ রোববার ঈদ উদযাপন করবেন। সকাল সাড়ে ১০টায় রামগঞ্জ উপজেলার নোয়াগাঁও বাজারের তালিমুন কোরআন নুরানি মাদ্রাসা মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
নোয়াগাঁও ঈদগাহ ময়দানের খতিব মাওলানা আমিনুল ইসলাম জানান, মাওলানা ইসহাক (রা.) অনুসারী হিসেবে এসব এলাকার মানুষ বিগত ৩৯ বছর যাবত সৌদির সঙ্গে মিল রেখে সব ধর্মীয় উৎসব পালন করে আসছে।
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.