নিজস্ব প্রতিবেদক।।
সরকারি হিসাবের জন্য নির্মিত ‘আইবাস ডাবল প্লাস সফটওয়্যারে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারে (ইএফটি)’ তথ্য হালনাগাদ প্রক্রিয়ায় জটিলতার কারণে বেতন-ভাতা প্রাপ্তি নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। এ কারণে তারা গত জানুয়ারি মাসের বেতন পেয়েছেন চলতি মার্চ মাসে।
এদিকে শিক্ষকদের বেতন না পাওয়ার কষ্টের মাঝে নতুন আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে ইএফটি তথ্য সংশোধন। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভুলে সার্ভারে উঠেছে ভুল তথ্য, আবার তা সংশোধনে বিলম্বের কারণও মাউশির গাফিলতি। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষকরা সঠিক তথ্য দিলেও মাউশির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তা সার্ভারে তুলতে গিয়ে ভুল করেছেন। এ কারণে ইএফটির তথ্যের সঙ্গে এমপিওর তথ্য, এনআইডির তথ্য ও ব্যাংকের তথ্যে গরমিল থেকে গেছে, অভিযোগ শিক্ষকদের।
গত এক মাসের বেশি সময় ধরে বেতনের অপেক্ষায় থাকা শিক্ষকরা আর্থিক সংকটে পড়েন। বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী ফোরামের নেতারা বলছেন, রোজার মাস চলছে। এ অবস্থায় সামান্য বেতন পাওয়া শিক্ষকরা কষ্টে দিন পার করেছেন। এ প্রসঙ্গে মাউশি কর্মকর্তারা জানান, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে অনেকের এমপিওর তথ্য, এনআইডির তথ্য ও ব্যাংকের তথ্যের মিল নেই। এ ছাড়া এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে অনেকের এমপিও শিটের নামের সঙ্গে এনআইডির নামের ডট (.), হাইফেন (-), কমা (,) বা আক্ষরিক অমিল আছে অথবা ব্যাংক হিসাবের নাম আংশিক ভুল আছে কিংবা জন্ম তারিখ ভিন্ন। এসব কারণে একটু বিড়ম্বনা হচ্ছে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন পাঠাতে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) এডুকেশন ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (ইএমআইএস) সেলের একটি সূত্র জানিয়েছে, অনেক শিক্ষকের জাতীয় পরিচয়পত্রে যে নাম দেওয়া আছে, এমপিও শিটে সেই নাম নেই; আবার কারও কারও নামের শুরুতে মোহাম্মদ থাকলেও তিনি মো. লিখেছেন। এ ছাড়া জন্ম তারিখ ভুল দেওয়া, নামের বানান ভুল করা, দ্বৈত এমপিওসহ আরও কিছু কারণে শিক্ষক-কর্মচারীরা ইএফটিতে বেতন পাননি।
জানতে চাইলে ইএমআইএস সেলের সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট খন্দকার আজিজুর রহমান বলেন, বেশকিছু কারণে শিক্ষকরা বাদ পড়েছেন। দ্বিতীয় ধাপের মেসেজ পাঠানোর প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর প্রতিষ্ঠান প্রধানদের তথ্য সংশোধনের সুযোগ দেওয়া হবে। এ ছাড়া কী কারণে শিক্ষকরা বেতনের মেসেজ পাননি, সেটিও জানিয়ে দেওয়া হবে।
ইএমআইএস সেল জানিয়েছে, যেসব শিক্ষক-কর্মচারী ইএফটিতে বেতনের মেসেজ পাননি তাদের অপেক্ষা করতে হবে। দ্বিতীয় ধাপে বেতন পাঠানোর কাজ শেষ হলে তৃতীয় ধাপে মেসেজ পাঠানো হবে। তবে এর আগে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের ড্যাশবোর্ডে প্রবেশের এক্সেস ওপেন করে দেওয়া হবে।
প্রাথমিকভাবে বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজের ২০৯ জন শিক্ষক-কর্মচারীর অক্টোবর মাসের এমপিও ইএফটিতে ছাড় হয়। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে বেসরকারি স্কুল ও কলেজে কর্মরত ২ লাখ ৮৯ হাজার এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন-ভাতার সরকারি অংশ বা এমপিও ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার সিস্টেমে (ইএফটি) ছাড় শুরু করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। দ্বিতীয় ধাপে ৬৭ হাজার, তৃতীয় ধাপে ৮৪ হাজার এবং চতুর্থ ধাপে ৮ হাজার ২০০-এর বেশি শিক্ষক-কর্মচারী ইএফটিতে ডিসেম্বর মাসের বেতন পেয়েছেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের ইএমআইএস সেলের একটি সূত্র জানিয়েছে, পঞ্চম ধাপে ৮ হাজার ৮৮৭ জন ইএফটির মাধ্যমে বেতন পাবেন। তাদের তালিকা এরই মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আইবাস সফটওয়্যারে আপলোড হয়েছে। এখান থেকে তথ্য যাচাই শেষে তালিকা মাউশিতে জমা হবে। মাউশিতে তথ্য আসার পর এই শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ছাড়ের অনুমতি চেয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হবে। প্রস্তাব অনুমোদনের পর তা চিফ অ্যাকাউন্টস অফিসারের কার্যালয়ে যাবে। এরপর শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতন-ভাতা ব্যাংক থেকে তুলতে পারবেন।
দ্রুত বেতন ছাড় না হলে শিক্ষাভবন ঘেরাওয়ের হুশিয়ারি ফেব্রুয়ারির বকেয়া বেতন এক সপ্তাহের মধ্যে ছাড় দেওয়া অন্যথা শিক্ষা ভবন ঘেরাওয়ের হুশিয়ারি দিয়েছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী ফোরাম (বাবেশিকফো) কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ মো. মাইন উদ্দিন আমাদের সময়কে বলেন, ইএফটির জন্য আমাদের শিক্ষকরা সব তথ্য যথা সময়ে শিক্ষা অফিসে পাঠিয়েছেন। কিন্তু শিক্ষা অফিস থেকে যথাযথ তথ্য আপলোড না দেওয়ায় শিক্ষকরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। আমরা দ্রুত এ সমস্যার নিরসন চাই। নতুবা শিক্ষক-কর্মচারীরা পরিবার-পরিজন নিয়ে রাজপথে অবস্থান করবেন।
প্রসঙ্গত, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার বা ইএফটির মাধ্যমে বেতন-ভাতা পান। তবে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা সরকারি কোষাগার থেকে ছাড় হলেও তা রাষ্ট্রায়ত্ত আটটি ব্যাংকের মাধ্যমে ‘অ্যানালগ’ পদ্ধতিতে দেওয়া হতো। এ প্রক্রিয়ায় টাকা পেতে শিক্ষকদের নানা ভোগান্তিতে পড়তে হতো। অনেক সময় পরের মাসের ১০ তারিখের পরও আগের মাসের বেতন-ভাতা পেতেন শিক্ষকরা। শিক্ষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবসে ইএফটিতে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেওয়ার ঘোষণা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শিক্ষাবার্তা /এ/০৯/০৩/২০২৫
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.