এইমাত্র পাওয়া

দেশে ১৭ হাজার শিশু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক।। ৯ বছর বয়স থেকে শরীরে ইনসুলিন তৈরি হচ্ছে না সুমাইয়া আক্তার নাদিয়ার। বর্তমানে তার বয়স ১২ বছর। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাদিয়ার মা সীমা বেগম বলেন, মেয়ে স্কুলে ঘন ঘন প্রশ্রাব করতে যেত, সে দুর্বলও ছিল। বিষয়টি তার শিক্ষকরা লক্ষ করেন।

আমাদের জানালে, আমরা প্রাইভেট হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষা করে জানতে পারি, আমার মেয়ের টাইপ-১ ডায়াবেটিস। গত তিন বছর ধরে সেগুনবাগিচা বারডেম-১ মা ও শিশু ডায়াবেটিক হাসপাতালে নিয়মিত ফলোআপে আসে নাদিয়া। নাদিয়ারা তিন ভাইবোন। তাদের কারো এই রোগ নেই। বাবা-মায়েরও নেই।

টাঙ্গাইল থেকে আসা জুঁই আক্তারের (১৩) ডায়াবেটিস শনাক্ত হয় আট বছর বয়সে, ২০২০ সালের ১৭ আগস্ট। তখন থেকে প্রতি ছয় মাস অন্তর আসেন এই হাসপাতালে ফলোআপে। জুঁইয়ের বাবা মো. আব্দুল জলিল বলেন, ‘মেয়ে ঘন ঘন প্রশ্রাব করত, প্রশ্রাবের স্থানে সাদা চালের আটার মতো পড়ে থাকত। চিকিৎসক দেখালে পরীক্ষানিরীক্ষার পর জানা যায়, মেয়ের টাইপ-১ ডায়াবেটিস। এখন মেয়ে নিজে নিজেই ইনসুলিন নিতে পারে, রক্ত পরীক্ষা করতে পারে।

ঐ হসপিটালের ডায়াবেটিক এডুকেটর মেহেরুন নেসা বলেন, আমরা শিখিয়ে দেই ইনসুলিন নেওয়া, ব্লাড টেস্ট করা, একজন শিশু রোগী কীভাবে নিয়ম করে খাবে, তারা কী খাবে। বেশি অসুস্থ হলে কোন নম্বরে কল দিতে, কার সঙ্গে কখন যোগাযোগ করবে—সেটাও বুঝিয়ে দেই। তিনি বলেন, আমরা এখানে এইচবিএ-ওয়ান সি-পরীক্ষা করে ইনসুলিন, সিরিঞ্জ, গ্লুকোমিটার দিয়ে থাকি বিনা মূল্যে।

সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডায়াবেটিস শুধু বড়দের অসুখ নয়, এখন এটি ছোটদেরও রোগ। বর্তমানে নগরায়ণের ফলে পরিবর্তিত জীবনযাপনের কারণে সারা বিশ্বেই ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

তবে বৃদ্ধির এই হার উন্নত দেশগুলোর তুলনায় অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশেও বেশি। আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিক ফেডারেশনের (আইডিএফ) তথ্যে জানা যায়, বাংলাদেশে ১৭ হাজারের বেশি শিশু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। সারা বিশ্বে ১ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি শিশু এই রোগে আক্রান্ত।

যদি কোনো শিশুর ঘন ঘন পিপাসা, বারবার প্রশ্রাব হয়, হঠাৎ ওজন কমে যায়, অতিরিক্ত ক্ষুধা পায়, শিশুর শারীরিক বৃদ্ধিতে সমস্যা হয়, দীর্ঘস্থায়ী ঘা, অস্বাভাবিক ক্লান্তি, শুষ্ক ত্বক, পা অবশ বোধ হওয়া বা ঝিমঝিম করা, মনোযোগ হ্রাস পাওয়া, উৎসাহ-উদ্দীপনা কমে যাওয়া, দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পাওয়া, ঘন ঘন বমি ও পেটের পীড়া—এসব লক্ষণ ডায়াবেটিসের। শিশুর এক বছর বয়সের পর থেকে যে কোনো সময়ই এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে বাবা-মা ও অভিভাবকদের দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। তবে নিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপনের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়েও রোগীরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন।

বারডেম জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটিতে সর্বোচ্চ ১৬ বছরের ডায়াবেটিস আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার। প্রতি বছর নতুন করে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা ৪০০ থেকে ৫০০ করে বাড়ছে।

স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের প্রধান এবং বাংলাদেশ ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান ইত্তেফাককে বলেন, টাইপ-১ ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের ইনসুলিন প্রডিউস সেল নষ্ট হয়ে যায়। এটি প্রতিরোধের পরীক্ষামূলক কিছু থাকলেও কার্যকর কোনো প্রক্রিয়া এখনো আবিষ্কার হয়নি।

টাইপ-১ ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় ইনসুলিন লাগবেই, ইনসুলিন তাদের জীবন, ইনসুলিন নিয়ে তারা স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে। এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আরও বলেন, মুটিয়ে যাওয়ার কারণে শিশুরা এখন টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে। এ সময় ৩০ বছরের আগে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হতো না, কিন্তু এখন ১৫-১৬ বছরেও টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে।

শিক্ষাবার্তা /এ/২৭/০২/২০২৫

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading