এইমাত্র পাওয়া

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সামনে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে হা-ম-লা, নারীসহ আহত ১০

গাজীপুরঃ গাজীপুরে অবস্থিত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে ‘অন ক্যাম্পাস অনার্স প্রোগ্রাম’ বন্ধের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠি প্রত্যাহারের দাবিতে আজ মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) সকাল ৭টা থেকে মূল ক্যাম্পাসে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। তারা দাবি করেন, সুনির্দিষ্ট ও সুশৃঙ্খলভাবে প্রতি সেশনের ভর্তিসহ শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখতে হবে।

শিক্ষার্থীদের অবরোধ চলাকালে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে, শিক্ষার্থীরা গেট খুলে তাদের প্রবেশের সুযোগ দেয়। তবে, এর পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি বাধে, যার ফলে প্রায় নারীসহ ১০ জন শিক্ষার্থী আহত হন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বলে তাদের অভিযোগ।

অবরোধ চলাকালে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, ট্রেজারার এবং প্রক্টরের উপস্থিতিতে ৯ সদস্যের একটি শিক্ষার্থী প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উপাচার্য ১০ দিনের সময় চেয়ে একটি সমাধান কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, অন ক্যাম্পাস অনার্স প্রোগ্রাম পরিচালনায় কোনো আইনগত বাধা নেই এবং ইউজিসিও তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছে। তাই ১০ দিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান করা হবে।

শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, দাবির বিষয়ে আশ্বাস পেলেও, ১০ দিনের মধ্যে কোনো সিদ্ধান্ত না হলে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। বৈঠক শেষে শিক্ষার্থীরা ১০ দিনের জন্য তাদের আন্দোলন স্থগিত করেন।

এর আগে, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে অন ক্যাম্পাস অনার্স প্রোগ্রাম চালু হয়। আইন, বিবিএ, নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড সায়েন্স এবং ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট—এই চারটি বিভাগে ১৬০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হন। কিন্তু ২০২৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ইউজিসি এক অফিস আদেশের মাধ্যমে প্রোগ্রামটি বন্ধের নির্দেশ দেয়।

এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০২৪ সালের ২৩ মে এক চিঠির মাধ্যমে পুনরায় প্রোগ্রাম বন্ধের নির্দেশনা দেয় এবং শিক্ষার্থীদের পাশ্ববর্তী কলেজে স্থানান্তরের নির্দেশনা দেয়। তবে, ১৩ আগস্ট ইউজিসি পুনরায় সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ক্যাম্পাসে শিক্ষাকার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়।

২০২৪ সালে নতুন উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেন প্রফেসর ড. এ এস এম আমানুল্লাহ। তিনি শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন এবং ক্লাস কার্যক্রম অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দেন। তবে, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরও অন ক্যাম্পাস অনার্স প্রোগ্রাম নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো স্পষ্ট নির্দেশনা আসেনি।

শিক্ষার্থীরা জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠি প্রত্যাহার এবং তৃতীয় ব্যাচের ভর্তি নিশ্চিত করার বিষয়ে প্রশাসনের নিশ্চুপতা তাদের হতাশ করেছে। তাই আজ মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে অবরোধ কর্মসূচি পালন করে এবং স্পষ্ট জবাবদিহিতার দাবি জানান। তারা জানিয়েছেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো বিবেচনাধীন রয়েছে এবং ১০ দিনের মধ্যে একটি সমাধান আসবে। প্রশাসন শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু সমাধানের আশ্বাস দিলেও, শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংশয় রয়ে গেছে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মাসুদ রানা জানায়, শিক্ষার্থীদের ওপর কোন হামলা হয়নি। তবে গেটের ভিতর ঢুকার সময় কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাক্কাধাক্কি হয়। এই বিষয়ে তাদের কোন লিখিত অভিযোগ করে নি। করলে আমরা বিবেচনা করে দেখবো।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/২১/০১/২০২৫


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.