নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ শিক্ষার মান বাড়াতে শিক্ষক ছাত্রের অনুপাতকে একটা ‘যৌক্তিক সীমায়’ নিয়ে আসার তাগিদ দিয়ে অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেছেন, ‘যথেষ্ট সংখ্যক শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দিয়ে বিদ্যালয় গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষা সর্বজনীন হতে হবে, এজন্য এটা জাতীয়করণ করতে হবে। অর্থনৈতিক পরিবর্তন না এনে শিক্ষায় পরিবর্তন আনা যাবে না।’
শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকাল ৩টায় সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী শিক্ষা ভাবনা নিয়ে ‘কেমন শিক্ষাব্যবস্থা চাই’ শিরোনামে একটি সংলাপে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, বর্তমানে শিক্ষা আমাদের মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত নয়, রাষ্ট্র শিক্ষার অধিকার পূরণ করতে বাধ্য নয়। কতটুকু শিক্ষা হলে একজন মানুষ কর্মজীবনের জন্য যোগ্য হবে। কমপক্ষে ১২ বছর স্কুলে যাওয়া বাধ্যতামূলক শিক্ষা হিসেবে পৃথিবীর সব দেশেই স্বীকৃত। এটুকু শিক্ষা যদি অবৈতনিক না হয়, তাহলে এটাকে অধিকার হিসেবে বলা যাবে না। শিক্ষার উদ্দেশ্য কেবল চাকরি হওয়া ঠিক না। জাতিসংঘ ঘোষিত ১৯৪৮ সালের মানবাধিকারের নীতি অনুসারে পেশাগত এবং উচ্চশিক্ষায় মেধার প্রশ্ন তোলা যাবে না, শিক্ষার সুযোগ সবার থাকতে হবে। বলা হয়েছে জাতীয় আয়ের সর্বোচ্চ ৬ ভাগ খরচ করতে হবে। শিক্ষক- ছাত্রের অনুপাত একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদের সঞ্চালনায় সংলাপে আরও বক্তব্য দেন অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন, ড. সামিনা লুৎফা নিত্রা, রাখাল রাহা, অধ্যাপক নাভিন মুর্শিদ ও শামীম জামান প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী।
অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন বলেন, পাঠ্যবইয়ে কী করে ক্ষমতাসীনদের রাজনীতি ঢোকানো যায়, এটার প্রকৃষ্ট উদাহরণ বাংলাদেশ। বাংলাদেশের শিক্ষার যে প্রধান ধারা আছে এগুলোর কোনও মিলনস্থল নাই। ইংরেজি মিডিয়াম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত ধনীদের স্বার্থেই হয়েছে। বাংলা ভাষা অত্যন্ত রিচ, আমি আর কোনও ভাষায় এমন দেখি না। গত ৫৩ বছরে বাংলাকে আমরা প্রতিষ্ঠিত করতে পারি নাই।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে যে পরিমাণ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে, সেগুলোতে শিক্ষক সাপ্লাই দেওয়ার আয়োজন নাই। যে শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে চার জায়গায় পড়ায়, সে কি শখের বসে পড়ায়? শিক্ষকতার পেশাকে বাংলাদেশে আকর্ষণীয় করা যায়নি। শিক্ষার উন্নয়ন না ঘটিয়ে দেশের প্রকৃত উন্নয়ন ঘটানো যাবে না। উন্নয়ন করতে হলে উন্নত মানুষ গড়ে তুলতে হবে। একজন সচিবের পাচকের বেতন ১৫ হাজার। অথচ যে মানুষটি আপনার সন্তানকে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে তার টিফিন খরচ সাড়ে ছয় টাকা। এরচেয়ে বড় দুর্ভোগের কী হতে পারে? নতুন সরকারের কাছে আমি দেখতে চাই, আসন্ন বাজেটে একটা ভালো বরাদ্দ থাকবে। আমি দেখতে চাই, সরকার একটা কার্যকর শিক্ষা কমিশন গড়ে তুলবে।
সংলাপে অংশ নিয়ে সামিনা লুৎফা বলেন, শিশুমন খুবই জটিল জিনিস। শিক্ষাক্রম বারবার পরিবর্তন করলে ভালো ফল বয়ে আনবে না। আগস্ট থেকে আমি রাখাল রাহা, কামরুল হাসান মামুন স্যার আগস্ট থেকে পাঠ্যবই নিয়ে কাজ করা শুরু করি। এর ফলাফল আপনারা জানেন। ২০১২ সালের কারিকুলামের কোনও প্রাকটিক্যাল ছিল না। ২০২১ সালেরটা পুরোই প্রাকটিক্যাল। দুটোকে কো-অর্ডিনেট করে ভালো কারিকুলাম করা সম্ভব। শিক্ষা একটা জটিল কাজ। এটাকে একটা চাকরি হিসেবে দেখলে চলে না।
লেখক ও গবেষক রাখাল রাহা বলেন, আমি কোনও স্বপ্নের শিক্ষা ব্যবস্থা বাংলাদেশে চাই না। স্বপ্নের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার চিত্র বাংলাদেশে বিরাজ করছে না। মৃত শিক্ষা ব্যবস্থাকে বাঁচানোর চেষ্টা করাটা আশু কর্তব্য।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/১৪/১২/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.