রংপুরঃ শুধু অ্যাকাডেমিক শিক্ষার মাধ্যমে বেকারত্ব দূরীকরণ সম্ভব নয়। নিজের মেধা, আত্মবিশ্বাস এবং কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে বেকারত্ব দূরীকরণ সম্ভব। উন্নয়নে রংপুর অঞ্চল পিছিয়ে থাকলেও এখানকার কিছু তরুণ এখন ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়ে এ অঞ্চলে নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে। উদ্যোক্তা হতে অনেক অর্থের প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন ইচ্ছাশক্তির। তরুণদের চাকরি না খুঁজে উদ্যোক্তা হওয়ার দিকে বেশি মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।
রবিবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে রংপুর নগরীর আরডিআরএস ভবনের বেগম রোকেয়া মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘আমিও জিততে চাই’ ক্যাম্পেইনে আলোচকরা এসব কথা বলেন। ক্যাম্পেইনে অংশ নেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একঝাঁক তরুণ শিক্ষার্থী, গণমাধ্যমকর্মী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
দিনব্যাপী এ ক্যাম্পেইনে নাগরিক সমস্যা নিয়ে ইন্টারেক্টিভ থিয়েটার পারফর্মেন্স শেষে কুইজ ও ভিডিও মেসেজ প্রতিযোগিতা এবং ক্যাম্পেইনের রিল প্রদর্শনী করা হয়। এ সময় অংশগ্রহণকারীরা তাদের নাগরিক অধিকারবিষয়ক দাবি, মতামত, প্রত্যাশা ও সমকালীন বিভিন্ন ইস্যুতে সমাধান ও সম্ভাবনা তুলে ধরেন। প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা। এরপর ছিল ‘যুব কর্মসংস্থান : প্রত্যাশা ও সুপারিশ’ শীর্ষক পলিসি ডায়ালগ।
কারমাইকেল কলেজের বিতর্ক পরিষদের সাবেক মুখ্য সমন্বয়ক জয় লালার সঞ্চালনায় প্যানেল ডিসকাশনে অংশ নিয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেট অ্যাসোসিয়েশনের (ব্রুডা) সভাপতি মো. সাব্বির আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও কর্মসংস্থানবান্ধব করা প্রয়োজন। ২০৩০ সালের লক্ষ্য হিসেবে তরুণদের চাকুরি না খুঁজে উদ্যোক্তা হওয়ার দিকে বেশি মনোযোগী হতে হবে।
নারীদের জন্য বাংলাদেশের কর্মক্ষেত্রগুলোর পরিবেশ এখনো পুরোপুরি অনুকূলে নেই দাবি করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সায়মাতুজ্জাহান মুন বলেন, সামাজিক এবং পারিবারিক চাপের কারণে নারীদের জন্য চাকরি করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। চাকরি ক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণ করার পাশাপাশি নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, যৌন হয়রানি বন্ধ করাসহ সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টিতে আরও গুরুত্বারোপ বাড়ানো উচিত।
রংপুর সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ড. মাগফুর হোসেন রিপন বলেন, চাকরি এবং কর্মসংস্থানকে দেশের গণ্ডিতে আটকে না রেখে নিজের কর্মক্ষেত্রকে আরও বিস্তৃত করতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ ব্যবহারের সুযোগ আর বিশ্বায়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাবার জন্য নিজেদের তৈরি করতে হবে। ইন্টারনেট এবং মুঠোফোন ব্যবহার করে নিজেদেরকে কাজের উপযোগী করে বিশ্ব-দরবারে উপস্থাপনে তরুণদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান। পাশাপাশি তিনি ইন্টারনেটের কল্যাণে পুরো পৃথিবীকে ‘বিশ্বগ্রাম’ উল্লেখ করে, নিজেদেরকে বিশ্বগ্রামের নাগরিক হিসেবে কর্মক্ষেত্রে যোগ্য করে গড়তে জোর দেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন রংপুর মহানগর সভাপতি অধ্যক্ষ খন্দকার ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, শুধু অ্যাকাডেমিক শিক্ষার মাধ্যমে বেকারত্ব দূরীকরণ সম্ভব নয়। নিজের মেধা, আত্মবিশ্বাস এবং কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে বেকারত্ব দূরীকরণ সম্ভব। উদ্যোক্তা হতে অনেক অর্থের প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন ইচ্ছাশক্তির। এমন উদাহরণ অনেক রয়েছে, যারা উদ্যোক্তা হিসেবে অন্যদের কাছে হিরো। শুধু সরকার, পরিবার বা সমাজের দিকে তাকিয়ে না থেকে নিজের ইচ্ছাশক্তিকে সাহসকে পরিণত করতে হবে ‘আমিও জিততে চাই’—এমন মানসিকতা অন্তরে জাগ্রত হলে সবকিছুই করা সম্ভব।
এ ছাড়া এ প্যানেল ডিসকাশনে নারী, শিশু, যুব, এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নাগরিক সেবা নিশ্চিত এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার পাশাপাশি টেকসই অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও স্থানীয় সম্প্রীতির বিষয়গুলো উঠে আসে। অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের মতামত ও সমাধান এবং সম্ভাবনার দিকগুলো তুলে ধরেন।
ইউএসএইডের অর্থায়নে ও ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল ‘আমিও জিততে চাই’ শিরোনামে এ ক্যাম্পেইনের আয়োজন করে। সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় সঙ্গীতের মধ্যদিয়ে ক্যাম্পেইনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এরপর স্বাগত বক্তব্য দেন ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের রংপুর অফিসের সিনিয়র রিজিওনাল ম্যানেজার মো. আলী ইজাদ।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/১৭/১১/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.