এইমাত্র পাওয়া

শিক্ষক একজন তবে চাকরি করেন কলেজের অধ্যক্ষ ও এমপিওভুক্ত উচ্চ বিদ্যালয়ে

বগুড়াঃ শিক্ষক একজন, তবে চাকরি করছেন একটি মহিলা কলেজে ও অন্যটি একটি এমপিওভুক্ত উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। মহিলা কলেজে অধ্যক্ষ ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। চাকরি বিধি অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি একইসঙ্গে দুটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে পারেন না।

এমন ঘটনা বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার জোড়গাছা মডেল মহিলা কলেজে। এই কলেজের অধ্যক্ষ জুলফিকার আলী রায়হান তথ্য পরিচয় গোপন করে গত প্রায় ৪ বছর ধরে শাজাহানপুর উপজেলার একটি বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে কর্মরত রয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জোড়াগাছা মহিলা মডেল কলেজ ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজও এমপিওভুক্ত হতে পারেনি। প্রতিষ্ঠাকালীন কলেজটির অধ্যক্ষ ছিলেন আশরাফুল ইসলাম। ২০১৩ সালে কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে সভাপতির সঙ্গে মনোমালিন্যের কারণে ২০১৫ সালে আশরাফুল ইসলামকে বরখাস্ত করে কমিটি। এরপর নিয়োগ কমিটির নিয়ম অনুসারে ওই বছরের ১ নভেম্বরে জুলফিকার আলী রায়হান অধ্যক্ষ হন। কিন্তু প্রভাষক থেকে সরাসরি অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পাওয়া বিধিবর্হিভুত হওয়ায় আশরাফুল ইসলাম বিষয়টি বিভিন্নভাবে প্রতিবাদ করেন। পরে বিষয়টি নিয়ে ২০১৭ সালের ২১ মার্চে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন করেছিলেন জুলফিকার আলী। ওই রিটে জেলা প্রশাসক, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও আশরাফুল ইসলামসহ ১০ জনকে বিবাদী করা হয়। রিট অনুসারে কলেজের অধ্যক্ষের পদটি স্থগিত রাখা হয়। সেই মোতাবেক ২০২২ সালের ৬ জুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পান জুয়েল হোসেন।

অবশ্য এর আগেই ২০২১ সালে জুলফিকার আলী শাজাহানপুর উপজেলার নগর শাহ মোজাম্মেল উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। নিয়োগ পেয়ে ওই বছরেই বিদ্যালয়ে যোগদান করেন এবং এখন পর্যন্ত সেখানেই চাকরি করে আসছেন। বর্তমানে আশরাফুল ইসলামও অন্য একটি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।

পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর আশরাফুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করে জুলফিকার আলী রায়হানকে অধ্যক্ষ করে বিজ্ঞপ্তি দেয় রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড।

কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা যায়, জুলফিকার আলী রায়হান চাকরি বিধিমালা লঙ্ঘন করে সারিয়াকান্দি ও শাজাহানপুর উপজেলার দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই পদ ধরে রেখেছেন। তিনি শাজাহানপুরের নগর শাহ মোজাম্মেল উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস নেন। তবে অনিয়মিত জোড়গাছা মহিলা কলেজটিতে।

নগর শাহ মোজাম্মেল হক উচ্চ বিদ্যালয়ে চাকরির বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রধান শিক্ষক মো.জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জুলফিকার স্যার আমাদের বিদ্যালয়ে সম্ভবত ২০২১ সালে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। উনি অন্য কোন কলেজে আছে কিনা এটা আমার সঠিক জানা নাই। এখানে উনি নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসেন ও নিয়মিত পাঠদান করান। বিশেষ কোন কারনে, বিদ্যালয়ে না আসতে পারলে উনি লিখিত দরখাস্তের মাধ্যমে ছুটি নেন আমার কাছে থেকে। ছুটি বা চিকিৎসা জনিত কোন কারন ছারা বিদ্যালয় আসেনি এরকম আমার জানা নাই।

জোড়গাছা মডেল মহিলা কলেজে সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, কলেজে অধ্যক্ষের কক্ষের সামনে নেমপ্লেট দেয়া আছে। সেখানে জুলফিকার আলী রায়হানের নাম উল্লেখ করা। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জুয়েল হোসেনের মাধ্যমে সব কাজ সম্পাদন করেন জুলফিকার আলী।

কলেজে শিক্ষক হিসেবে আছেন ১৬ জন। আর কর্মচারীর পদে চাকরি করছেন ১৪ জন। গত শিক্ষাবর্ষে কলেজে ছাত্রী ভর্তি হয় ৬৭ জন। এ বছরে ভর্তি হয়েছে ১৭ জন ছাত্রী। কিন্তু এমপিওভুক্ত না হওয়ায় কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা কোনো বেতন পান না। শিক্ষার্থী ও স্থানীয় ফান্ড থেকে যা অর্থ আসে তা দিয়েই খরচ মেটানো হয়।

জুয়েল হোসেন বলেন, আমি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। আমি নিজে কিছু করি না। কলেজের যাবতীয় খরচাদির বিষয় জুলফিকার আলী দেখেন। উনি আমাকে টাকা দিয়ে নির্দেশনা দেন। সেই অনুযায়ী কাজ করি।

দুই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন জুলফিকার আলী রায়হান নিজেও। তিনি বলেন, জোড়াগাছা মহিলা কলেজ এমপিওভুক্ত না হওয়ায় এখান থেকে কোনো বেতন পাই না। উল্টো এই কলেজ চালাতে অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে। বলা যায় একেবারে সর্বশান্ত হয়ে গেছি।

অন্য প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেয়ার কারণ হিসেবে জুলফিকার বলেন, এখন পর্যন্ত জায়গা-জমি বিক্রি করে প্রচুর টাকা কলেজের পিছনে খরচ করেছি। আশায় আছি এই কলেজটি এমপিও ভুক্ত হবে। একারনে আপাতত বিদ্যালয়ে চাকরি করে সংসার চালাচ্ছি। কলেজ এমপিও ভুক্ত হলেই বিদ্যালয়ের চাকরিটা ছেড়ে দিব।

তবে এমন ঘটনার কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন সারিয়াকান্দি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সরোওয়ার ইউসুফ জামাল। বললেন, আমি তো জানি না এ বিষয়ে আপনার কাছে থেকে শুনলাম। আমি খোঁজ খবর নিচ্ছি নিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ওই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হযরত আলী বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষক জুলফিকার আলী যেহেতু কলেজে বেতন পাননা একারনেই হয়তো বিদ্যালয়ে চাকরী করছেন।কলেজ এমপিও ভুক্ত হলে তখন বিদ্যালয়ের চাকরী ছেরে দিয়ে কলেজে যোগদান করবে। কারন কলেজের অধ্যক্ষের পদ একটি সম্মানজনক পদ। তবে কেউ যদি অভিযোগ তখন তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত করা হবে।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/১১/১১/২০২৪


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.