ঢাকাঃ ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার পরও চাকরি পেলেন না ৯৯ জন প্রার্থী। সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপনে বাদ পড়েছেন তাঁরা। দেশে এর আগেও বিসিএসের নিয়োগ প্রজ্ঞাপন থেকে বাদ পড়ার দৃষ্টান্ত রয়েছে। তবে এবার বাদ পড়েছেন রেকর্ডসংখ্যক, যা গত পাঁচ বিসিএসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
জানা যায়, ৪৩তম বিসিএস থেকে ২ হাজার ১৬৩ জনকে ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর সুপারিশ করে পিএসসি। এর প্রায় ১০ মাস পর ১৫ অক্টোবর ৪৩তম বিসিএসের প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এতে নিয়োগ পেয়েছেন ২ হাজার ৬৪ জন।
ভুক্তভোগী প্রার্থীদের অভিযোগ, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতো পুলিশ বা গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে অনেক প্রার্থীকে বাদ দিয়েছে। এতে বঞ্চিত হয়েছেন প্রকৃত মেধাবীরা। তাঁরা আরও বলেন, একজন প্রার্থী দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে (প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা) পিএসসির চূড়ান্ত সুপারিশ পায়। এরপর কাউকে বাদ দেওয়াটা অন্যায়।
বক্তব্য জানতে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদারকে কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। এর আগে এক সাক্ষাৎকারে আলী ইমাম মজুমদার বলেছিলেন, ‘ফৌজদারি অপরাধ ছাড়া একজনকেও আটকে দেওয়া ঠিক নয়। এটি অন্যায়, এটি অনৈতিক চর্চা। এ সংস্কৃতি বন্ধ করা উচিত।’
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পিএসসির সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার পরও ৪১তম বিসিএসের প্রজ্ঞাপন থেকে বাদ পড়েছিলেন ৬৭, ৪০তম থেকে ৩৪, ৩৮তম থেকে ৭৫, ৩৭তম থেকে ৬১ এবং ৩৬তম থেকে ৩৮ জন।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ১৪ আগস্ট পিএসসি থেকে নিয়োগের সুপারিশ পেয়েও প্রজ্ঞাপনে নাম না আসা ২৫৯ চাকরিপ্রার্থীকে নিয়োগ দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এসব প্রার্থী গত ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে যোগ দিয়েছেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, পিএসসি নিয়োগের সুপারিশ করে তালিকা পাঠায় জনপ্রশাসনে। এরপর এ তালিকা ধরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পুলিশের কাছ থেকে প্রতিবেদন নেয়। পুলিশ প্রতিবেদনে প্রার্থীর বিরুদ্ধে মামলা থাকলে বা নেতিবাচক কিছু পাওয়া গেলে তাঁরা বাদ পড়েন। তবে গত কয়েক বছর পুলিশ ছাড়াও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা থেকেও প্রতিবেদন নেওয়া হয়েছিল।
সূত্র আরও বলছে, প্রতিবেদন নেতিবাচক হলে প্রার্থীরা জনপ্রশাসনে আবেদন করতে পারেন। পরে ইতিবাচক প্রতিবেদন পাওয়া গেলে তাঁরা নিয়োগ পান। অনেকে হাইকোর্টে মামলাও করেন এবং রায় পেলে চাকরি পেয়ে যান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, নিয়ম অনুযায়ী, এবারও পুলিশ ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রজ্ঞাপন চূড়ান্ত করা হয়েছে। গোপনীয় প্রতিবেদনে যাঁদের বিষয়ে নেতিবাচক মন্তব্য এসেছে, তাঁরাই বাদ পড়েছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রার্থীরা কেন বাদ পড়েছেন, তা প্রতিবেদনে বলা আছে। প্রতিবেদনটি গোপনীয়। এটি প্রকাশযোগ্য নয়। তবে সুপারিশের পর গেজেট থেকে বাদ পড়া কোনো প্রার্থী যদি আবেদন করেন, তাহলে তাঁর বিষয়টি পুনরায় চেক করে দেখা হবে।’
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েও বিসিএসের চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপন থেকে বাদ দেওয়ার ঘটনায় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
সুপারিশপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বাদ দেওয়ার বিরোধিতা করে সাংবাদিক ও উন্নয়নকর্মী শরিফুল হাসান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘৪৩তম বিসিএসে নিয়োগের গেজেট প্রকাশ হলেও ৯৯ জনের নাম নেই। এ যেন রাজনৈতিক রং খোঁজার পুরোনো সেই অপচর্চা, যেটা ভীষণ দুর্ভাগ্যজনক! অতীতে অনেকবার লিখেছি, লাখ লাখ প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে যখন কেউ বিসিএস ক্যাডার হন, তখন তাঁর রাজনৈতিক তালাশ করা অপরাধ।’
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/১৯/১০/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.