এইমাত্র পাওয়া

আয়নাঘর: নির্মম বন্দি এক সপ্তাহের গল্প

আয়না ঘর কেমন ছিল জানি না। শুনেছি বহু ভয়ংকর। কিন্তু নিমর্ম এক সপ্তাহ একাই আমি আয়না ঘরে ছিলাম। (২৪-৩০) অক্টোবর ২০২২ 3ZERO CLUB Chattogram Circle Seminar. সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসাবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়েছেন নোবেলজয়ী, বিশেষ অতিথি ফারুক-ই-আজম বীরপ্রতিক, সভাপতির দায়িত্ব ছিল আমার। ক্লাবের ১২৫জন সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, সাংবাদিক, সুধীজনসহ ১৫০জন উপস্থিত হয়েছেন।

সমস্যাটা হল আমরা যখন ২৪ নভেম্বর বিষয়টি ফেইজবুকে প্রচার শুরু করলাম। নেমে আসল আয়না ঘর। একাই সেই আয়না ঘরে আমি। ব্যতিক্রম হল আমার অফিস আয়নাঘর। দলে দলে নানা পর্যায়ের লোকজন।

কী প্রোগ্রাম, কেন প্রোগ্রাম, কারা থাকবে!! ঠিক তাদের মত, বিশ্রী ভাবে? সুদ খোর, রক্ত চোষার সাথে আমার কী, কেন থাকবে, এটি একটি গোপন মিটিং। কার্যত আমি ছিলাম বন্দি।

কাউকে বলিনি। কেন? জানাজানি হলে আরো বিপদ। সপ্তাহব্যাপি রাত কাটিয়েছি না ঘুমিয়ে, সকাল থেকে চাপে। কী অসহ্য সেই ব্যবহার। আহ। সকাল ১০টা থেকে প্রতিদিন এই অত্যাচার চলছে সমানে।

নতুন চাপ শুরু হল, জিয়া স্মৃতি যাদুঘরের কর্মকর্তার কাছ থেকে। হল হয়ত বুকিং ক্যানসেল করতে হবে। আমি বললাম যদি আমার বুকিং ক্যানসেল করেন এখনই বলেন আমি মামলা করব। তিনি বললেন, স্যার আমাদের বিপদে ফেলবেন না। প্রশাসন বলছে, হল কেন ভাড়া দিলেন? এটি গোপন মিটিং। আমি আমার অবস্থানে অনড় থাকলাম।

২৯ অক্টোবর ২০২২ দুপুর ২টায় হলে চলে গেলাম। ইউনূস সেন্টারে তখনই সজীব ভাইকে বিষয়টি অবহিত করলাম। তিনি নিজের জীবনে এমন ঘটনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন। নোমান ভাইকে জানালাম, তিনি বললেন, আমার কাছেও ফোন এসেছে।

ফারুক-ই-আজম বীরপ্রতীক আজকে যখন লিখছি তখন তিনি আমেরিকায়-বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা মনোনীত। ২.৫০মিনিটে তিনি আমাকে ফোন দিলেন, বললেন কামাল প্রোগ্রাম ঠিক আছে? জি ভাইয়া। তবে, প্রশাসনের লোকজন হল ঘেরাও করে বসে আছে। জানতে চাইলেন তুমি কোথায়? আমি বললাম আমি হলে। তিনি সহসা চলে এলেন। ভাইয়া কঠিন সময়ে এমন সাহস যোগান যা যুদ্ধে বিজয়ী হতে সহায়তা করে।

এটি গোপন মিটিং। ট্যাগ লাগালেন।

আমার দৃঢ়তার কাছে সকল চাপ নিমিষেই শেষ। আমরা তিনটায় প্রোগ্রাম শুরু করলাম।

৪টায় স্যার জয়েন করলেন। বললেন কামাল আমি এসেছি। ফারুক ভাইকে দেখে বললেন, বীরপ্রতীকও আছেন?

ছবি গুলো ভালোভাবে দেখুন। অন্তত ১৫টি ক্যামরায় সরাসরি লাইভ কাদের যেন দেখালেন। টার্গেট নোবেলজয়ী আর আমি।

স্যারের বক্তব্যের আগে আমি ঘোষণায় বললাম, স্যার এখানে প্রশাসনের নানাস্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত রয়েছেন। স্যার বিষয়টি উপলব্দি করলেন।

প্রোগ্রাম শেষ, সবাই চলে গেলাম। কিন্তু চাপ প্রয়োগ বন্ধ হয়নি। সরাসরি নিষেধ স্যারের সাথে আমার সর্ম্পক কী? আমি কী কী করছি ইত্যাদি। আমাকে কড়া সর্তক করলেন ৩০ অক্টোবর।

এবার শুরু সাইবার হামলা, যুদ্ধ। এমন একটি স্বাধীন দেশে আমরা। অথচ ৫ আগষ্ট ২০২৪ থেকে কতজন কতভাবে বর্তমান অবস্থা নিয়ে লিখছেন। বহু জ্ঞানপাপীকেও দেখছি। উনাদের কলম তখন কী করেছিল? এমন দেশতো চাইনি। এমন নিকৃষ্ট পরিবেশ তো চাইনি।

কতটা অত্যাচার করেছেন মনে পড়ে? কতভাবে মিথ্যাচার করেছেন, এই সরকার চলে গেলে ১০লক্ষ লোক মারা যাবে? কতজন মারা গেল? যারা মারা গেছে তারা ব্যক্তিগত আক্রমনে গেছে, যেইসব হিন্দু ভাই মারা গেছে তারা রাজনৈতিক কারণেই গেছে, হিন্দু বলে যায়নি।

তখন, এখন সকল নৈরাজ্য-হত্যার প্রতিবাদ, ঘৃণা। বেশি সাধু না সেজে কি কি অপকর্ম করেছেন তার অনুশোচনা করুন। নিজেকে শোধরান। চলবে—–

লেখা-ডক্টর মুহাম্মদ কামাল উদ্দিন

শিক্ষাবিদ ও নজরুল গবেষক


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.