নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়াঃ জেলার নন্দীগ্রাম মনসুর হোসেন ডিগ্রি কলেজে একাদশ শ্রেণির ভর্তিতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে রসিদের মাধ্যমে অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষা বিভাগের নীতিমালা তোয়াক্কা না করে কলেজে নোটিশ টাঙিয়ে প্রকাশ্যেই অনিয়ম করছেন কলেজের অধ্যক্ষ।
এসব অতিরিক্ত টাকা দিতে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের অভিভাবক হিমশিম খাচ্ছেন। এছাড়াও পোশাকের টাকা নেয়া হলেও কাপড় নিম্নমানের দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সেশন চার্জসহ ভর্তি ফি সাধারণ শাখায় সর্বসাকুল্যে ১৫০০ টাকার স্থলে দুই হাজার টাকা ও কারিগরি শাখায় ১ হাজার টাকার স্থলে নেওয়া হচ্ছে ২ হাজার টাকা। এমনকি কলেজ ড্রেস বাবদ টাকা গ্রহণ করে শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত টেইলার্সে পাঠানো হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার কলেজে গিয়ে নানা অজুহাতে নিয়মবহির্ভূত ভর্তি ফি ২ হাজার টাকার নোটিশ টাঙানো থাকতে দেখা যায়। ওই কলেজের অধ্যক্ষ মাহবুবুর রশীদ স্বাক্ষরিত নোটিশে বোর্ড নির্ধারিত ফি ১৫০০ টাকা, উন্নয়ন ফি ৩০০ টাকা, রেড ক্রিসেন্ট ফি ৪০ টাকা, ভর্তি ফরম ১০০ টাকা, বার্ষিক ক্রীড়া মঞ্জুরী ফি ৩০ টাকা ও বিবিধ ৩০ টাকা আদায় করা হচ্ছে।
তবে নীতিমালার সঙ্গে এই ফি আদায়ের কোনো মিল নেই। সকল চার্জসহ ভর্তি ফি ব্যাপারে শিক্ষা বিভাগ স্পষ্ট নীতিমালা দিলেও তোয়াক্কা করেননি কলেজ অধ্যক্ষ।
জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব স্বাক্ষরিত গত ১৫ মে একটি নীতিমালায় বলা হয়, একাদশ শ্রেণির ভর্তিতে নীতিমালার কোনোরূপ ব্যাত্যয় ঘটানো হলে বেসরকারি কলেজ/সমমানের প্রতিষ্ঠানের পাঠদানের ক্ষেত্রে অনুমতি বা স্বীকৃতি বাতিলসহ কলেজটির এমপিওভুক্তি বাতিল করা হবে এবং প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গত ২৬ মে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের উপ-সচিব আনিসুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ভর্তি নীতিমালা অনুমোদন চিঠিতে বলা হয়, মফস্বল/পৌর (উপজেলা) এলাকায় সেশন চার্জসহ ভর্তি ফি সর্বসাকুল্যে ১ হাজার টাকার বেশি হবে না। অন্য একটি চিঠিতে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে মানবিক, বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিভাগের একাদশ শ্রেণির ভর্তিতে বাংলা-ইংরেজি ভার্সনে ১৫০০ টাকা নির্ধারিত করা হয়েছে।
ভর্তি হওয়া এক শিক্ষার্থী জানায়, মানবিক বিভাগে ভর্তির জন্য কলেজের রসিদের মাধ্যমে ২ হাজার টাকা জমা দিয়েছেন। বাধ্যতামূলক সব শিক্ষার্থীকে অতিরিক্ত ফি দিতে হচ্ছে।
কারিগরি শাখায় ভর্তি হওয়া কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, তাদের কাছ থেকেও কলেজের রসিদের মাধ্যমে ২ হাজার করে নেয়া হয়েছে।
অভিভাবকরা জানান, আমরা স্বল্প আয়ের মানুষ। এতো টাকা দিয়ে কলেজে ভর্তি করা তো অসম্ভব। ভর্তির টাকা না হয় ধার কর্জ করে দিলাম। সারা বছর তো আরো কত খাতে কত টাকা চাইবে সেগুলো কেমন করে দেব। সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে খরচ কমাচ্ছে, আর এ কলেজে বেড়ে যাচ্ছে। তাহলে আমরা সাধারণ মানুষরা ছেলে মেয়েদের কোথায় কীভাবে লেখাপড়া করাবো।
এছাড়া কলেজ ড্রেস (প্যান্ট-শার্ট) বাবদ ১২০০ টাকা জমা নিয়ে অধ্যক্ষ তার নির্ধারিত টেইলার্সে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। সেখানে কাপড়ের মান ভালো না।
কয়েকজন নারী শিক্ষার্থী জানান, বোরকা অথবা স্যালোয়ার কামিজ বাবদ ৯৫০ টাকা নিচ্ছেন কলেজের অধ্যক্ষ। যারা বোরকা নিচ্ছে তাদেরকে হিজাব দেওয়া হচ্ছে না। খুবই নিম্নমানের কাপড় দিয়ে অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছে।
এ ব্যাপারে নন্দীগ্রাম মনসুর হোসেন ডিগ্রি কলেজ অধ্যক্ষ মাহবুবুর রশীদ বলেন, ভর্তিনীতি মালা মেনেই সব বিভাগে ভর্তি ফি ও সেশন চার্জসহ কয়েকটি খাত মিলিয়ে রসিদের মাধ্যমে ২ হাজার টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। পোষাকের জন্য যে টাকা দিচ্ছে সেই মানের কাপড় দিচ্ছে টেইলারিং হাউজ। ভালো মানের কাপড়ের টাকা বেশি পড়বে।
নন্দীগ্রাম উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির জানান, কলেজে ভর্তির জন্য অতিরিক্ত টাকা নিতে পারবে না। আমাদেরকে জানালে সেই কলেজের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এ/৩১/৭/২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.