ঢাকাঃ সমৃদ্ধ গবেষণা পোক্ত করে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়। পাঠ্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি গবেষণার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় নতুন জ্ঞান সৃষ্টির মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে।
বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠ্যক্রম গুরুত্ব পেলেও গবেষণা সেভাবে মূল্যায়িত হচ্ছে না। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ও (জবি) এর ব্যতিক্রম নয়। প্রতিষ্ঠানটিতে অবকাঠামোর ঘাটতি রয়েছে। তবে ভয়াবহ তথ্য হলো– গবেষণায় শিক্ষকদের আগ্রহ নেই। বছর বছর বাজেট বাড়লেও বাড়ছে না গবেষণার মান ও পরিমাণ। অবশ্য শিক্ষকরা এ জন্য বাজেট স্বল্পতাকে দায়ী করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সেল সূত্র ও বার্ষিক বাজেট বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত ৬ বছর আনুপাতিক হারে বরাদ্দ বাড়লেও বৃদ্ধি পায়নি গবেষণার পরিমাণ। ২০২১-২২ অর্থবছরে বিশেষসহ ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ সময় শিক্ষকদের গবেষণা কার্যক্রমে ১৮৭টি প্রস্তাব জমা পড়ে। ১৭৫ প্রস্তাব অনুমোদন পেলেও গবেষণাপত্র জমা হয় ১২৮টি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দের বিপরীতে গবেষণা প্রস্তাব জমা পড়ে ১৬৫টি। ১৪৫ প্রস্তাব অনুমোদন পেলেও শেষ পর্যন্ত মাত্র ৩৯টি গবেষণাপত্র জমা পড়ে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিশেষ ছাড়াই নিয়মিত খাতে বরাদ্দ বেড়ে ২ কোটি ৫০ লাখ হয়েছে। ৭০০ শিক্ষকের বিপরীতে প্রস্তাবনা জমা পড়েছে ১৯৮টি। বাছাই করে এখনও অনুমোদন দেয়নি কর্তৃপক্ষ।
এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে গবেষণায় বরাদ্দ ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা; গবেষণা ছিল ১৪৩। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ কোটি ৭০ লাখ বরাদ্দের বিপরীতে গবেষণা ১৩৩। ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৪৭টি গবেষণাপত্র অনুমোদন হয়।
শিক্ষকদের একাংশের অভিযোগ, একটি বড় প্রকল্পের গবেষণা কার্যক্রমের জন্য সুযোগ-সুবিধা ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করতে পারে না প্রশাসন। এ জন্য শিক্ষকরা তেমন আগ্রহ দেখান না। তবে জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা জানান, অর্থ স্বল্পতা নয়, গবেষণাতে শিক্ষকদের অনাগ্রহ বেশি। গবেষণা অন্তঃপ্রাণ শিক্ষক নেই বললেই চলে। ফলে শিক্ষার্থীদেরও এ বিষয়ে আগ্রহ নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক জাকারিয়া মিয়া বলেন, ‘এখন গবেষণায় শিক্ষকদের আগ্রহ খুব কম। তা ছাড়া আর্থিক স্বল্পতা, গবেষণাগার, যন্ত্রপাতি, ল্যাবসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের ঘাটতি রয়েছে। সমৃদ্ধ গবেষণার জন্য কেন্দ্রীয় গবেষণাগার দরকার; বিভাগীয় গবেষণাগারও উন্নত করতে হবে। নানা কর্মসূচির মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আগ্রহী করে তুলতে হবে।’
জানা গেছে, মাত্র দুটি কক্ষে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কার্যক্রম। তার এক কক্ষে একটি করে টেবিল, আলমিরা, ফাইল ক্যাবিনেট ও কম্পিউটার এবং চারটি চেয়ার রয়েছে। অন্য কক্ষ খালি। দীর্ঘদিন কারও পা না পড়ায় ধুলোবালির স্তর জমেছে। এসব দেখভাল করেন একজন অফিস সহকারী।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ১৮ বছর গেলেও হয়নি একটি কেন্দ্রীয় গবেষণাগার। শিক্ষার্থীদের জন্য ল্যাব বা ছোটখাটো গবেষণা বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা গেলেও বিশ্লেষণধর্মী গবেষণার জন্য যেতে হয় বাইরের ল্যাবে। ফলে বরাদ্দের বড় অঙ্ক চলে যায় অন্যের পকেটে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ পরিচালক মহসীন রেজা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিকমানের অনেক গবেষক আছেন। সীমিত সম্পদ ব্যবহার করেও তারা বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে নিয়ে গেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ২০০ শিক্ষকের গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে সায়েন্টিফিক ইনডেক্সড জার্নালে। কিন্তু মানসম্পন্ন গবেষণা বাড়াতে আরও অর্থ প্রয়োজন। ইউজিসির সহায়তা পেলে জবির শিক্ষকরা সমাজে প্রভাব রাখার মতো গবেষণা উপহার দিতে পারবেন।
জানতে চাইলে গবেষণা সেলের পরিচালক অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, নানা সংকটের মধ্যেও গবেষণা খাতে আমাদের কিছু অর্জন রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি, এ কার্যক্রম আরও উন্নত ও সমৃদ্ধ করতে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, আগে কী হয়েছে, তা নিয়ে ভাবতে চাই না। গবেষণার সংখ্যা ও মান বাড়াতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা উচ্চমাত্রায় পৌঁছাবে।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/১৮/০৪/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.