।। মামুনুল ইসলাম।।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তদন্তে নিয়োগ অবৈধ প্রমাণিত হলেও বহাল তবিয়তে আছেন পটুয়াখালীর বাউফলের বিলবিলাসের আব্দুর রহমান সরদার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খাইরুল আলম। শুধু তাই নয়, প্রধান শিক্ষক তার অবৈধ নিয়োগকে বৈধ করতে পছন্দের লোক দিয়ে গোপনেই নির্বাচিত করেছেন বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ। শিক্ষা মন্ত্রণালয় হয়ে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ালেও নিরুত্তাপ বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ ও জেলা-উপজেলা শিক্ষা অফিস। এদিকে প্রধান শিক্ষক ও গোপনে পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচন, প্রধান শিক্ষক অরোপিত অতিরিক্ত বেতন-ভাতা আদায়কে কেন্দ্র করে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে শিক্ষক, অবিভাবক ও এলাকাবাসী।
পটুয়াখালীর বাউফলের আবদুর রশিদ সরদার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলে পদের বিপরীতে ২৭ জন প্রার্থী অবেদন করেন। ২০২১ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ২৭ জনের পরিবর্তে মাত্র পাঁচজন প্রার্থীকে উপস্থিত দেখিয়ে পরে নিয়োগ দেওয়া হয় খায়রুল আলমকে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার সত্ত্বেও পটুয়াখালী জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে গোপনেই তড়িঘড়ি করে সম্পন্ন করা হয় এ নিয়োগ পরীক্ষার কার্যক্রম। অবৈধ এ নিয়োগ বাতিল চেয়ে ২০২১ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগের সচিব বরাবর অভিযোগ করেন আটজন আবেদকারী। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উপ-পরিচালক বরিশালের তদন্তে নিয়োগে অনিয়ম প্রমাণিত হলে বিদ্যালয়ের সভাপতিকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের নির্দেশ দেয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর।
বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এ নির্দেশ পালন না করে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন। হাইকোর্ট মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের এ নির্দেশ স্থগিত করে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করলে সুপ্রিম কোর্ট পূর্বের আদেশ স্থগিত করে।
শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের অভিযোগ, সরকারি বেতন চালু না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের থেকে অতিরিক্ত বেতন, নামে বেনামে ফি আদায় করে নিজ বেতন গ্রহণ করছেন প্রধান শিক্ষক খায়রুল আলম।
বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. সেলিম রাজা বলেন, সুপ্রিম কের্টের আদেশের পর প্রধান শিক্ষক খায়রুল আলম তার পদে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন। কিন্তু তিনি ক্ষমতার দাপটে নিয়মিত বিদ্যালয় পরিচালনাসহ যাবতীয় কাজ করে যাচ্ছেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশ মানছে না সভাপতি। এ আদেশ অমান্য করায় সভাপতির পদ বাতিলের নিয়ম থাকলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। তিনি আরও বলেন, প্রতিবাদ করায় আমার বিদ্যালয়ের ভাতা বন্ধ করে দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক।
প্রধান শিক্ষক খায়রুল আলম তার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়ায় প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ ও বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হয়েছে। দুষ্ট কিছু লোক ধূম্রজাল সৃষ্টি করে ঘোলাপানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছেন।
প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলের বিষয়টি তার জানা নেই উল্লেখ করে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মনিরুজ্জামান বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়ায় নির্বাচন সম্পন্ন করা হয়েছে। কোনো প্রার্থী না থাকায় ভোটগ্রহণ হয়নি।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. মজিবুর রহমান বলেন, প্রধান শিক্ষকের বিষয়ে হাইকোর্টে মামলা চলমান রয়েছে। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির বিষয়ে অভিযোগ উঠেছে। দুটি বিষয়েই সংশ্লিষ্টদের লিখিত বক্তব্য চাওয়া হয়েছে। তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.