এইমাত্র পাওয়া

শিক্ষার ৩ স্তরে আসছে ব্যাপক পরিবর্তন

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

সনদ বা সার্টিফিকেটসর্বস্ব শিক্ষাব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে প্রাথমিক মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন আনার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। শিক্ষণ ও শিক্ষাদান এবং শিক্ষার্থীর আত্মস্থকরণ প্রক্রিয়ায়ও পরিবর্তন আনার কথা বলা হচ্ছে। পরীক্ষা গ্রহণপ্রক্রিয়া ও খাতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আনার সুপারিশ করা হয়েছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সাথে সঙ্গতি এবং শ্রমবাজারের চাহিদা বিবেচনায় রেখে সাজানো হবে পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক। কারিগরি শিক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে ঢেলে সাজানো হবে পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের কোনো পরীক্ষা না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ তিন শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নপদ্ধতি কী হবে, তা নিয়ে কাজ চলছে। প্রাথমিকে প্রতিটি ক্লাসে শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন একটি করে ইংরেজি শব্দ আত্মস্থ করা শুরু করেছে। তাদের জন্য গণিত অলিম্পিয়াড চালু হচ্ছে। বছরান্তে এর সুফল পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিকের সচিব আকরাম-আল-হোসেন। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার মূল্যায়ন মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের ফল মূল্যায়নের সাথে সঙ্গতি রেখেই করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

প্রাক-প্রাথমিকের সময়কাল এক বছর থেকে বাড়িয়ে দু’বছর করার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও তিনি জানান। তবে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা বাতিল করার জন্য শিক্ষাবিদসহ সর্বস্তরের দাবি ও সুপারিশ থাকলেও এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সাথে সঙ্গতি এবং শ্রমবাজারের চাহিদা বিবেচনায় রেখে সাজানো হবে পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক। এ ব্যাপারে দেশীয় উদ্যোক্তাদের চাহিদাকে বিবেচনায় রেখে মূলত পাঠ্যক্রম বিন্যাস করার কথা বলেছেন শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্টরা। গুরুত্ব দেয়া হবে আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারকেও। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপীয় শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী মাধ্যমিক ও কারিগরি শিক্ষায় পরিবর্তন আনার কথা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডাধ দীপু মনি। একই সাথে মধ্যপ্রাচ্যে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে মাদরাসা শিক্ষায় আমূল পরিবর্তন আনবে সরকার।

শ্রমবাজারে ভবিষ্যৎ কী ধরনের চাহিদা ও পরিবর্তন হবে সেটি বিবেচনায় নিয়ে পাঠ্যক্রমে পরিবর্তন করা হবে। দেশের কারিগরি শিক্ষার সিলেবাস ‘নিড বেইজ’ বা ‘চাহিদাভিত্তিক’ করার কাজ শুরু হয়েছে। দেশের প্রতিটি বিভাগে ও জেলায় কী ধরনের শ্রমচাহিদা রয়েছে তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে পাঠদান করার জন্য প্রতিটি জেলায় একটি করে কারিগরি বিদ্যালয় স্থাপনের কাজ শেষপর্যায়ে রয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং আন্তঃশিক্ষা বোর্ড মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের ৩০ লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর পাবলিক পরীক্ষা গ্রহণ, পরীক্ষার সময়কাল এবং ফল মূল্যায়ন পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া নিয়ে নানা ধরনের সমস্যা মোকাবেলায় বেশ কিছু সুপারিশ নিয়ে কাজ করছে।

এ ব্যাপারে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক নয়া দিগন্তকে বলেন, নবম ও দশম শ্রেণী দু’বছরের প্রস্তুতিতে শিক্ষার্থীরা এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেয়। একইভাবে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর শেষে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ ক্ষেত্রে নবম শ্রেণীর পর এবং দশম শ্রেণীর পর আলাদাভাবে মূল্যায়ন পরীক্ষা নেয়া যেতে পারে। এইচএসসি পরীক্ষায়ও আলাদাভাবে মূল্যায়ন পরীক্ষা নেয়া যেতে পারে। শ্রেণিভিত্তিক মূল্যায়নের মাধ্যমে পাবলিক পরীক্ষায় পরীক্ষার সংখ্যা এবং বিষয় কমানো হতে পারে। প্রশ্নের নিরাপত্তায় প্রশ্নব্যাংক করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

জানা গেছে, আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পাবলিক পরীক্ষার সময় কমানো এবং ফলাফল মূল্যায়নের যে পদ্ধতি বর্তমানে চালু রয়েছে, তার পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে সরকারের কাছে। এ সুপারিশ অনুমোদিত হলে জেএসসি, এসএসসি এবং এইচএসসি ও সমমানের পাবলিক পরীক্ষাগুলোর ফলাফলে জিপিএর পরিবর্তে অন্য কোনো পদ্ধতি চালু হবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের ফলাফল নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে গেলে নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে স্বীকার করেন আন্তঃশিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক। তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সাথে সঙ্গতি রেখেই ফলাফলের মূল্যায়ন নির্ধারণ করতে হবে। এ ব্যাপারে সুপারিশ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে আসন্ন জেএসসি পরীক্ষা থেকেই মূল্যায়ন প্রক্রিয়া ও পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হবে।

টানা তৃতীয় দফায় আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতা গ্রহণর পর নতুন শিক্ষামন্ত্রী ও উপমন্ত্রী দায়িত্ব নিয়েই শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব পরিবর্তন রাতারাতি হবে না। কারিকুলাম পরিবর্তন হবে ধাপে ধাপে। এখনও মাঠপর্যায়ের কাজও শেষ হয়নি। পরিকল্পিত পরিবর্তন আনতে আরো কয়েক বছর লেগে যাবে। সুত্র নয়াদিগন্ত


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading