গত বছর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক মাস আগে ২৩০ অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে সুপারনিউমারারি (সংখ্যাতিরিক্ত) পদোন্নতি দিয়ে পুলিশ সুপার করা হয়েছিল। কিন্তু পদোন্নতির প্রায় এক বছর হতে চললেও তাদের পদায়ন করা যায়নি। এখনো পদোন্নতিপ্রাপ্তরা আগের পদেই (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার) দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে তাদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা বিরাজ করছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, শূন্যপদ না থাকায় ওই ২৩০ কর্মকর্তাকে পদায়ন করা যাচ্ছে না। নতুন পদ সৃষ্টি না করে তাদের নিয়মিত পুলিশ সুপার হিসেবে পদায়ন সম্ভব নয়। এমন প্রেক্ষাপটে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে বিদ্যমান ২৩০ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদ বিলুপ্ত করে এসপি পদ সৃষ্টির একটি প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, সুপারনিউমারারি পদোন্নতির ফলে পুলিশের কর্মকর্তাদের কর্মস্পৃহা, উৎসাহ ও উদ্দীপনা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। আবার দীর্ঘদিন পদায়ন না হওয়ায় তাদের কারও কারও ভেতর হতাশা কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, সরকারের উল্লেখযোগ্য আর্থিক সংশ্লেষ ছাড়াই ২৩০ জন সুপারনিউমারারি পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপারকে নিয়মিত পদে পদায়ন সম্ভব। পদোন্নতি পাওয়া এসপিদের পদায়ন করা না গেলে এই র্যাঙ্কের নিচের কর্মকর্তাদের পদোন্নতির বিষয়টিও ঝুলে যাবে।
এসপি হিসেবে সুপারনিউমারারি পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের ২৫ ব্যাচের অনেক কর্মকর্তা এরই মধ্যে উপসচিব হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত পদে যোগদান করেছেন। কিন্তু বিসিএস (পুলিশ) ২৫ ব্যাচের কোনো কর্মকর্তা এখন পর্যন্ত সমমান র্যাঙ্ক এসপি পদে যোগদান করতে পারেননি। তাই বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা না হলে পদোন্নতিপ্রাপ্তদের মনোবল ভেঙে যেতে পারে।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ২০২৫ সাল পর্যন্ত অবসর এবং পদোন্নতিজনিত কারণে ১৩০টি এসপি পদ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে পদোন্নতি পাওয়া সব কর্মকর্তাকে এসপি পদে পদায়ন করা সম্ভব নয়। নতুন পদ সৃষ্টি ছাড়া পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের আগামী ৮-১০ বছরেও নিয়মিত পদে পদায়ন করা সম্ভব হবে না। বর্তমানে বিসিএস ২৫ ব্যাচসহ বিভিন্ন ব্যাচের ২২০ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সন্তোষজনক চাকরিকাল অতিক্রম করার পরও শূন্যপদ না থাকায় তাদের পদোন্নতি হচ্ছে না। এতে বিসিএস (পুলিশ) কর্মকর্তাদের কর্মস্পৃহা ও মনোবল হ্রাস পেতে পারে।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, সুপারনিউমারারি হিসেবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত ২৩০ জন বিসিএস (পুলিশ) কর্মকর্তার দ্রুততম সময়ের মধ্যে পদায়নে নতুন পদ সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে সরকারের আর্থিক সংশ্লেষের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পুলিশের যেসব ইউনিটে এসপি পদের প্রয়োজনীয়তা এবং কর্মক্ষেত্র রয়েছে, সেসব ইউনিট থেকে ২৩০টি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদ বিলুপ্তি করে এসপি পদ সৃষ্টি করা যেতে পারে। এটিই সবচেয়ে সহজ সমাধান মনে করে পুলিশ সদর দপ্তর। এর আগে ২০১৮ সালে ২৫৩ জন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার পদ বিলুপ্তি করে ২৫৩টি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদ সৃষ্টি করা হয়। এ ক্ষেত্রে পদোন্নতিপ্রাপ্ত সুপারনিউমারারি এসপিরা পদের গ্রেড অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাওয়ার কারণে এ জাতীয় পদ সৃষ্টি করা হলে উল্লেখযোগ্য আর্থিক সংশ্লেষ ছাড়াই নিয়মিত পদে পদায়ন করা যাবে। এতে তাদের মনোবল বৃদ্ধি পাবে। তারা পুলিশি কার্যক্রমে আরও বেশি মনোনিবেশ করতে পারবেন।
প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, পুলিশ সদর দপ্তরে মঞ্জুরিকৃত অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের পদ রয়েছে ১০৭টি। এর মধ্যে ২২টি পদ বিলুপ্ত করে ২০টি এসপি পদ সৃষ্টি করে সুপারনিউমারারি এসপিদের পদায়ন করা যাবে। পুলিশের বিশেষ শাখায় (এসবি) ৪৪ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদ রয়েছে। এর মধ্যে ১০টি পদ বিলুপ্ত করে ১৮টি এসপি পদ সৃষ্টির সুপারিশ করা হয়েছে। সিআইডিতে ১২টি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদ বিলুপ্ত করে ৩০টি এসপি, পুলিশ একাডেমিতে (বিপিএ) ৪টি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদ বিলুপ্ত করে দুটি এসপি পদ সৃষ্টি করা যেতে পারে। এ ছাড়া পুলিশ স্টাফ কলেজে ৩টি, টিঅ্যান্ডআইএমতে ৪টি, রেলওয়ে পুলিশে দুটি, হাইওয়ে পুলিশে একটি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশে দুটি, এপিবিএন সদর দপ্তরে দুটি, এইইউতে ৪টি, ডিএমপিতে ১৫টি, সিএমপিতে ৫টি, কেএমপিতে দুটি, বিএমপিতে ৪টি, এসএমপিতে ৪টি, জিএমপিতে ৬টি, রংপুর মেট্রোতে ৪টি, ঢাকা রেঞ্জ অফিসে দুটি, চট্টগ্রাম রেঞ্জ অফিসে ৩টি, খুলনা রেঞ্জ অফিসে দুটি, রাজশাহী রেঞ্জ অফিসে দুটি, রংপুর রেঞ্জ অফিসে দুটি, বরিশাল রেঞ্জ অফিসে দুটি, সিলেট রেঞ্জ অফিসে দুটি, ময়মনসিংহ রেঞ্জ অফিসে দুটি, পিবিআইতে ৩৯টি, নৌ পুলিশে ৪টি, ট্যুরিস্ট পুলিশে ৬টি এসপি পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করা হয়েছে। টাঙ্গাইল, নোয়াখালী, খুলনা ও রংপুর পিটিসিতে একটি করে ৪টি এসপি পদ সৃষ্টি করা যেতে পারে। চট্টগ্রাম, গাজীপুর, জামালপুর, নেত্রকোনা, শেরপুর, মাদারীপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, নোয়াখালী, কক্সবাজার, বান্দরবান, সিলেট, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, বরিশাল ও পিরোজপুরের ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের প্রতিটিতে একটি করে ২৯টি এবং দশম এপিবিএন খাগড়াছড়ির ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে একটি এসপি পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করা হয়েছে।
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.