নিজস্ব প্রতিবেদক :
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষে বি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার টাকা বণ্টনে বৈষম্যের অভিযোগ করেছে সংশ্লিষ্ট ইউনিটে কাজ করা কর্মচারীরা । ভর্তি পরীক্ষায় মোট আয়ের উদ্ধৃত থেকে আনুপাতিক হারে কম টাকা পেয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে তারা। এ জন্য তারা ওই ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কমিটির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রাপ্ত টাকা থেকে কর্মচারীদের ৩ হাজার টাকা করে দেয়া হলেও অতিরিক্ত পারিশ্রমিক ঠিকভাবে বণ্টন করা হয়নি। ওই ইউনিটে মোট কর্মচারী ছিল ১৪ জন। তাদের মধ্যে ১২ জন জানিয়েছেন টাকা কম দেয়ার কারণে তারা অতিরিক্ত পারিশ্রমিকের অর্থ গ্রহণ করেননি।
বি ইউনিটে কাজ করা কয়েকজন কর্মচারী জানান, ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম চলাকালীন কর্মরত শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য তারা খাবার এনে ও পরিবেশন করলেও নিজেরা খাবার না পাওয়া, অফিস সময়ের বাইরেও কাজ করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। আর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক বি ইউনিটের জন্য বরাদ্দকৃত যে ড্রাইভার ছিল তারও সঠিক পারিশ্রমিক দেয়া হয়নি।
কর্মচারীদের দেয়া তথ্যমতে, ভর্তি পরীক্ষায় এ ইউনিটের কর্মচারীরা জনপ্রতি সর্বোচ্চ ২২ হাজার, সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকা; সি ইউনিটের কর্মচারীরা জনপ্রতি সর্বোচ্চ ১২ হাজার, সর্বনিম্ন ৭ হাজার ৯ শত টাকা পেয়েছেন। অথচ বি ইউনিটের কর্মচারীরা জনপ্রতি মাত্র ৩ হাজার টাকা পেয়েছেন। কেউ কেউ আরও কম পেয়েছেন বলে অভিযোগ আছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী বলেন, `আমরা ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী, মাস শেষে অল্প বেতন পাই। আমাদের মত মানুষের টাকা তারা কীভাবে কম দেন? তার ওপর আমাদের সবসময়ই দেরি করে টাকা দেয়া হয়। আমরা এর প্রতিকার চাই।`
এ বিষয়ে কর্মচারী সমিতির সভাপতি দিপক চন্দ্র মজুমদার বলেন, `ভর্তি পরীক্ষায় বি-ইউনিটের চেয়ে সি-ইউনিটে ফরম কম বিক্রি হয়েছে। সেক্ষেত্রে সি-ইউনিটের কর্মচারীদের চেয়ে আমাদের বেশি পারিশ্রমিক পাওয়ার কথা, কিন্তু আমরা তা পাইনি। সি-ইউনিটের কর্মচারীরা সর্বনিম্ন যে পারিশ্রমিক পেয়েছেন (৭ হাজার ৯ শত) আমরা অন্ততপক্ষে সে অনুযায়ী যেন পাই বার বার সেই দাবি জানিয়েও কোনো সুরাহা হয়নি। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে অনেকবার গেলেও তিনি আমাদের আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই দেননি।`
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বি-ইউনিট ভর্তি পরীক্ষার আহ্বায়ক কলা ও মানবিক অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জি. এম. মনিরুজ্জামান বলেন, `আমি ভর্তি পরীক্ষার নিরাপত্তার স্বার্থে সবাইকে দিয়ে সব কাজ করাইনি, যতটা পারি নিজেরাই করেছি। তারপরও যেসব কাজ অন্যদের দিয়ে করানো যায় সেসব করিয়েছি। কর্মচারীদের কাজের জন্য মূল্য নির্ধারণ করা আছে। যাকে দিয়ে যতটুকু কাজ করানো হয়েছি আমি তাকে ততটাই দিয়েছি।`
ভর্তি পরীক্ষার টাকায় কর্মচারীদের দিয়ে নিজেদের জন্য খাবার আনিয়েও তাদেরকে কেন খাবার দেয়া হয়নি- জানতে চাইলে তিনি বলেন, `অনেক কাজ ও চাপের কারণে সব সময় সবকিছু মাথায় থাকে না, আর আমি কর্মচারীদেরকে বলে দিয়েছি কখনও খাবার না পেলে জানাতে, টাকা দিয়ে দিব। খাবার না পাওয়ার কথা কেউ আমাকে জানায়নি। আর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক যে ড্রাইভার বরাদ্দ ছিল তাকে দিয়ে তেমন কোথাও যাওয়া হয়নি। তাই তার যতটুকু পাওয়া উচিত, ততটুকুই দিয়েছি।`
কর্মচারীরা তাদের ন্যায্য পারিশ্রমিক পায়নি কেন-জানতে চাইলে অর্থ বণ্টন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. জাকির ছায়াদউল্লাহ খান বলেন, `আমি শুধু টাকা বণ্টন করেছি। কে, কত পাবে সেসব ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক জানেন। আমি এসব কিছু জানি না, এসব আমার কাজের মধ্যে ছিল না।`
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, `দু`পক্ষের প্রতিনিধিদের আমার অফিসে ডেকে এনে এর একটা সমাধান করার চেষ্টা করেছি। এবার যা হওয়ার হয়ে গেছে, আগামীতে যেন এরকম না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে বলেছি।`
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.