সেশনজটের ভয়াবহ ঝড় সামাল দিতে হইবে
নিউজ ডেস্ক।।
একসময়ে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ভয়াবহ সেশনজটের কথা শুনা যাইত। বিশেষ করিয়া আশির দশকে বিভিন্ন আন্দোলনের কারণে প্রায়শই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হইয়া যাইত। সেই সময় চার বত্সরের উচ্চশিক্ষা শেষ করিতে বহু ক্ষেত্রে দ্বিগুণ সময় লাগিয়া যাইত। তাহার পর নব্বইয়ের দশকের পর হইতে সেশনজট ক্রমশ কমিতে শুরু করে। একপর্যায়ে বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই সেশনজটের কাঁটা প্রায় সম্পূর্ণ দূর হইয়া যায়; কিন্তু এইবার করোনা ভাইরাস আসিয়া সকল কিছু পুনরায় ওলটপালট করিয়া দিল। সেশনজটের ভয়াবহ ইতিহাস নূতন করিয়া ফিরিয়া আসিল।
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা শৃঙ্খলিত ইটের সারির মতো। ইহার একটির মধ্যে সমস্যা তৈরি হইলে তাহার প্রভাব অন্যটির উপর পড়িতে বাধ্য। করোনা এইবার সেই ইটের সারিতে প্রবল ধাক্কা দিয়াছে। ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি পরীক্ষা সৌভাগ্যবশত সম্পন্ন করা সম্ভব হইয়াছিল বটে। তবে প্যাঁচে পড়িয়া গিয়াছে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। পহেলা এপ্রিল হইতে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা একযোগে শুরু হইবার কথা ছিল। কিন্তু তাহার পূর্বেই করোনা আসিয়া সাধারণ ছুটির ফাঁদ তৈরি করিল। মনে রাখিতে হইবে, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক—এই দুই পরীক্ষা আমাদের সমস্ত শিক্ষাপঞ্জির প্রধান দুইটি স্তম্ভ। মাধ্যমিক পরীক্ষা তথা এসএসসির পরপরই কলেজে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। আবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা তথা এইচএসসির ফল প্রকাশের পর শুরু হয় উচ্চশিক্ষায় ভর্তির কার্যক্রম। এখন স্কুল কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় একযোগে বন্ধ থাকিবার কারণে পুরা শিক্ষাব্যবস্থায় ভয়াবহ সেশনজট দেখা দিতে যাইতেছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হইবার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হইবে। কিন্তু এই বিশ্বের কেহই জানে না, করোনা পরিস্থিতি কবে নাগাদ স্বাভাবিক হইবে। বরং দিনদিন বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি খারাপ হইতে অতি খারাপের দিকে ধাবিত হইতেছে। এমনিতেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সিলেবাস শেষ করা সম্ভব হয় নাই। ফলে করোনা মহামারির কারণে ভবিষ্যতে পাঁচটি পাবলিক পরীক্ষা আয়োজন করা অনিশ্চিত হইয়া পড়িয়াছে। চলতি বত্সরের নভেম্বরে নির্ধারিত পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির সমাপনী বা পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা এবং আগামী বত্সরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা কবে কীভাবে নেওয়া হইবে—তাহা বলিবার মতো অবস্থা এখন নাই।
যদিও জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) হইতে শিক্ষাবর্ষ দুই মাস বাড়াইয়া সিলেবাস শেষ করিয়া বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হইয়াছে। সেই অনুযায়ী আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলতি বত্সরের পাঠ্যবইয়ের উপর পাঠদান চলিতে পারে। সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করিয়া সীমিত আকারে মূল্যায়ন বা পরীক্ষার ব্যবস্থা করিবার কথাও বলিয়াছেন অনেকে। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কোথাও কোথাও আংশিক ও পুরোপুরি অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চলিতেছে। অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিজেদের তাগিদেই অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করিতেছে বটে; কিন্তু এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব না হইলে তাহারা নূতন শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী কোথা হইতে পাইবেন? সুতরাং ইহা স্পষ্ট যে, একটি সম্মিলিত সেশনজটে পড়িতে যাইতেছে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা। এই জটিল সমস্যার সমাধান করিতে সংশ্লিষ্ট চিন্তাবিদদের বিশেষ পথ বাহির করিতেই হইবে।সুত্র ইত্তেফাক