সভাপতি ও অধ্যক্ষের অনিয়মে চিতোষী ডিগ্রি কলেজের অচলাবস্থা
চাঁদপুরঃ জেলার শাহরাস্তি উপজেলার চিতোষী ডিগ্রি কলেজের সভাপতি ও অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। কলেজের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলাও চলমান আছে। এতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। অন্যদিকে ক্ষুণ্ন হচ্ছে কলেজের সুনাম। এসব কারণে গত আট মাস ধরে সভাপতি ও অধ্যক্ষের অপসারণ দাবি করে আসছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। সরেজমিন এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই কলেজের ৬৩ জন শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে ৬১ জনই সভাপতি ও অধ্যক্ষের ধারাবাহিক অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে তাদের অপসারণ দাবি করে প্রশাসনের কাছে একাধিক অনাস্থা দিয়েছেন। তারা উল্লেখ করেন, সভাপতি ও অধ্যক্ষ পরস্পর যোগসাজশে আর্থিক অনিয়ম, কলেজের তহবিল তছরুপ, নিয়োগে স্বেচ্ছাচারিতা, শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করে আসছেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর (অব) রফিকুল ইসলাম বীরউত্তমের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এলাকাবাসী। তবে এমপি বলেন, কলেজের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা চলমান আছে। আমার এ বিষয়ে কিছুই করার নেই। তবে কলেজটি যেহেতু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ই এর সমাধান দিতে পারে।
জানা যায়, ২০২২ সালের ১৭ ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম তালুকদার ও অধ্যক্ষ মো. আনোয়ার হোসেন ভুঁইয়া মার্কেন্টাইল ব্যাংক লি. চিতোষী শাখার কলেজ হিসাব নম্বর থেকে ১৬ লাখ ১২ হাজার টাকা উত্তোলন করেন। এ ছাড়াও অগ্রণী ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের হিসাব নম্বর থেকে আরও কয়েক লাখ টাকা উত্তোলন করেন। যার হিসাব আজ পর্যন্ত পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা পাননি। এমনকি তারা মার্কেন্টাইল ব্যাংক থেকে গত ঈদুল ফিতরের আগে ৬ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। ওই টাকার মধ্যে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা উৎসব ভাতা হিসেবে খরচ দেখালেও বাকি ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার হদিস নেই।
এদিকে দীর্ঘ বছর ধরে এ কলেজটি ছিল ডিগ্রি পরীক্ষার কেন্দ্র। কিন্তু প্রশাসনিক জটিলতার অভিযোগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি পরীক্ষার কেন্দ্র স্থগিত করে অন্যত্র নিয়ে যায়। আর এ জন্য কলেজের শিক্ষক-কর্মচারী-শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও এলাকাবাসী সভাপতি এবং অধ্যক্ষকে দায়ী করেন। তাই তারা গত ১২ জুলাই দুজনের অপসারণ চেয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করেন।
কলেজের উপাধ্যক্ষ কামরুল আহসান চৌধুরী বলেন, ১৯৮৭ সালে এলাকার ধনাঢ্য ব্যক্তি কর্নেল (অব) আনোয়ার উল আজিম কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর অবসরজনিত কারণে অধ্যক্ষর পদটি শূন্য হয়। পরে কামরুন্নাহারকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে বর্তমান সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম তালুকদার দায়িত্বে আসার পর থেকে কলেজটির অচলাবস্থার সূত্রপাত ঘটে।
কামরুল আহসান চৌধুরী আরও বলেন, ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি আমাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করা হয়। কিন্তু ২০২২ সালের ৮ জুলাই জাহাঙ্গীর আলম কোনো নোটিশ ছাড়াই বিধি লঙ্ঘন করে আমাকে ওই পদ থেকে সরিয়ে দেন। অবৈধভাবে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেন বর্তমান অধ্যক্ষ মো. আনোয়ার হোসেন ভুঁইয়াকে। এরপর থেকেই কলেজ পরিচালনায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।
এদিকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পরিপন্থী মনে করে কামরুল আহসান চৌধুরী হাইকোর্টে রিট করেন।
শিক্ষক প্রতিনিধি আনিছুর রহমান ভুঁইয়া বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিধি লঙ্ঘন করার পরিপ্রেক্ষিতে মাউশির কুমিল্লা অঞ্চলের পরিচালক নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশনা দেন। কিন্তু সভাপতি কোনো কিছুই তোয়াক্কা করেননি।
সহকারী অধ্যাপক মো. একরাম হোসেন বলেন, কলেজটি উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল। এখানে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফলাফলও ভালো। কিন্তু সভাপতি তার অনুগত লোককে অধ্যক্ষ নিয়োগ দিয়ে নানা অনিয়ম অব্যাহত রেখেছেন।
এ বিষয়ে সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম তালুকদারকে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।
কলেজ অধ্যক্ষ মো. আনোয়ার হোসেন ভুঁইয়া বলেন, আমি অভিযোগ করার মতো কোনো কাজ করিনি। আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে সেটা প্রমাণ করুক।
শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হুমায়ন রশিদ বলেন, আমি প্রথম ২০২২ সালের ১৩ ডিসেম্বর কুমিল্লা মাউশির আঞ্চলিক কর্মকর্তার পাঠানো চিঠি পাই। সেখানে অধ্যক্ষ নিয়োগের কার্যক্রম স্থগিত রাখতে বলা হয়। পরে বিভিন্ন অনিয়ম সম্পর্কে অভিযোগ পেয়ে তা তদন্ত করে পর পর দুবার প্রতিবেদন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দেই।
কলেজের প্রতিষ্ঠাতা আনোয়ার উল আজিম বলেন, আমি এ কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেছি ধ্বংসের জন্য নয়। যারাই এর পেছনে থেকে ধ্বংসের চেষ্টা চালাচ্ছেন লাভ হবে না। প্রতিষ্ঠানটি রক্ষায় ভালো ভূমিকা নেওয়ার জন্য আমি স্থানীয় এমপিকে অনুরোধ করছি।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৯/০৭/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়