শিখন ঘাটতি কি শুধু প্রাথমিকেই!
মো. জামিল বাসারঃ বিশ্ব মহামারি করোনার প্রভাব পড়েনি এমন সেক্টর নেই। সারা পৃথিবীতে সব ধরনের প্রতিষ্ঠানে করোনা নামক মহামারির প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে সারা পৃথিবীতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার রেকর্ড গড়েছে কোভিড-১৯ এর সময়কালে। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশে তো বটেই, সারা পৃথিবীর ইতিহাসে দীর্ঘ ১৮ মাস পরে ২০২১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীই নিজের রোল ও শাখা ভুলে গিয়েছিল।
সেই ধারাবাহিকতায় নিঃসন্দেহে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও শিখন ঘাটতির কবলে পড়েছিল। বিদ্যালয় খুলে দেওয়ার পর থেকেই শিখন ঘাটতি পূরণ করতে বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করে শিক্ষার্থীদের বাড়তি যত্ন নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে, যার সুফল আমরা গত বৃত্তি পরীক্ষায়ও দেখেছি। শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি পূরণ করতে গিয়ে ২০২১ সালের শীতকালীন অবকাশ যাপনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ২০২২ সালের রমজানের ছুটি কমিয়ে ২০ রমজান পর্যন্ত শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। পাঠকের জেনে রাখা দরকার, ২০২০ সালের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এখন ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী। ২০২০ সালের ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এখন ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ২০২০ সালের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এখন অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। করোনাকালীন প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরাই এখন মাধ্যমিকে পড়াশোনা করছে। তাহলে শিখন ঘাটতি মাধ্যমিকেই বেশি থাকার কথা; কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বরাবরের মতোই পুরো রমজান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অথচ কোমলমতি প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের ক্লাস পাঠদান চালিয়ে যেতে অধিদপ্তর অনড়। প্রশ্ন আসে-মাধ্যমিক, মাদ্রাসা, কলেজ, ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি কিভাবে পূরণ হবে? করোনাকালীন শিখন ঘাটতি যদি প্রকৃতপক্ষে পূরণ করতেই হয়, তাহলে মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠান ও আলিয়া মাদ্রাসাগুলো খুলে রেখে পাঠদান পরিচালনা করার প্রয়োজন ছিল।
কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, করোনাকালীন সব শিখন ঘাটতি প্রাথমিকেই হয়েছে। আর বারবার সেই শিখন ঘাটতি পূরণ করতে বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন ছুটি কর্তন করা হচ্ছে। করোনাকালীন শিখন ঘাটতি যদি পূরণ করতেই হয়, তাহলে এ রমজানে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রেখে পাঠদান চালিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, শিখন ঘাটতির কথা বলে পবিত্র মাহে রমজানে শুধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খোলা রাখা হয়েছে, যাকি না অত্যন্ত দুঃখজনক। যাহোক, সরকারি আদেশ মোতাবেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লাখ লাখ শিক্ষক মাহে রমজানে রোজা রেখেও ক্লাস পাঠদান চালিয়ে শিখন ঘাটতি পূরণে ইতিবাচক মনোভাব নিয়েই কাজ করে যাচ্ছে। কোমলমতি শিশুরা সুশিক্ষিত হয়ে আগামী দিনে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাবে, এ স্বপ্ন দেখেই প্রাথমিকের শিক্ষকরা কাজ করে যাচ্ছেন।
সহকারী শিক্ষক, বওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ধনবাড়ী, টাংগাইল
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৫/০৪/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়