শিক্ষকের ‘অপমানে’ আত্মহত্যাচেষ্টা, মধ্যরাতে ঢাবিতে বিক্ষোভ
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খানের শাস্তির দাবিতে উপাচার্য ভবন ঘেরাও করেছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় তাদের বিভিন্ন ধরনের প্রতিবাদী স্লোগান দিতে দেখা যায়। শুক্রবার (৩ মার্চ) মধ্যরাত ১টার দিকে তারা সেখানে অবস্থান নেন।
ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তার বিভাগের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে অপর এক নারী শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ‘কুৎসা’ রটানোর অভিযোগে ক্লাসে সবার সামনে ‘অপমান’ করেছেন তিনি। এদিকে অপমানের শিকার হয়ে ওই শিক্ষার্থী ঘুমের ওষুধ খেয়ে ফেসবুকে আত্মহত্যার ঘোষণা দেয়। ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার পর তাকে কোথায়ও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা থেকে তিনি নিখোঁজ হয়েছেন বলে জানান তার বন্ধুরা।
পরে অনেক খোঁজাখুঁজির পর অচেতন অবস্থায় ওই শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করা হয়। রাত পৌনে ২টার দিকে আহত অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হল থেকে তাকে উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম। সহকারী প্রক্টর ড. মোহাম্মদ শাহীন খান জানিয়েছেন, তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভবনের জড়ো হয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে শুরু করেন তারা। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে শিক্ষার্থী নির্যাতন, নিপীড়ন, মানসিক শাস্তি দেওয়ার জন্য শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে শোনা যায়। অপমানের শিকার শিক্ষার্থী নাম এহসান ধ্রুব বলে জানা গেছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। এ ছাড়াও তিনি হলে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
এহসানের বন্ধুরা জানায়, তিনি খুব ভালো ছেলে। তিনি খুব সুন্দর ছবি তুলেন। সেই সুবাদে তার অনেক রাজনৈতিক মানুষের সঙ্গে সম্পর্কও রয়েছে। তিনি হল ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে উপ-প্রশিক্ষণ সম্পাদক পদ পেয়েছিলেন। কয়েকদিন আগে বিভাগের একটি ট্যুরে সুন্দরবন যায় তার সহপাঠীরা। সেখানে এক মেয়ে বন্ধুর কিছু কার্যক্রম নিয়ে ‘কুৎসা’ রটানোর অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। কিন্তু এহসান সেই ট্যুরেই যাননি। পরে গতকাল বৃহস্পতিবার শ্রেণিকক্ষে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে তাকে সন্দেহ করেন অধ্যাপক তানজিমউদ্দিন খান। এ সময় এহসানকে তিনি খারাপ, বখাটে ছেলে বলে অভিহিত করেন। ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত থাকায় তাকে নারী নিপীড়ক খারাপ ছেলেদের দলের অন্তর্ভুক্ত বলেও অপমান করেন। এক পর্যায়ে এহসান ক্লাসে কান্না শুরু করেন। কিন্তু এতেও ওই অধ্যাপক তাকে কোনো ছাড় দেননি। পরে রাতে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে নিখোঁজ হন তিনি।
এহসান ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সালাম জানবেন। আমার খুব ইচ্ছা ছিল আপনার সাথে দেখা করার। আপনার একটা ছবি তোলার। পূরণ হলো না। জীবনের সব ইচ্ছা পূরণ হয় না। কি আর করা। কিন্তু আপনার কাছে আমি আমার সাথে হওয়া অন্যায়ের বিচার দিয়ে গেলাম।’ তিনি ওই পোস্টে আরো লিখেছেন, ‘প্রিয় তানজিম স্যার, আপনার পরে আমার আর কোনো রাগ নেই। ভালো থাকবেন।’
এহসান পোস্টে লিখেছেন, ‘বাবা মা, ক্ষমা করে দিও। ভেবেছিলাম দোকান ঘুরে ঘুরে দুই একটা করে কিনবো। এক দোকানেই দুই পাতা বিক্রি করল। সন্দেহ হচ্ছে ঔষধে ভেজাল আছে। যদি ভেজাল না থেকে থাকে তাহলে এন্ড অব দ্যা জার্নি।’
অভিযোগের বিষয়ে অধ্যাপক ড. তানজীমউদ্দিন খানের কাছে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ করার কারণে এহসানকে অপমান করার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি। এসব অভিযোগের সত্যতা নেই বলেও দাবি করেছেন তিনি।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৩/০৩/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়