শিক্ষকদের নিজের বই কিনতে বাধ্য করছেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা!
কিশোরগঞ্জঃ চাকরির সুবাদে প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতাসংক্রান্ত একটি বই লিখেছেন জেলারপাকুন্দিয়া উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তা সন্ধ্যা রানী সাহা। বইটি উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকদের কিনতে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে।
উপজেলাটিতে দুই শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কিন্ডারগার্টেন রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের সংখ্যা দেড় সহস্রাধিক। সবাইকে বইটি কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অনেক শিক্ষক। তবে তাঁরা নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি।
তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন সন্ধ্যা রানী সাহা। তিনি বলেন, ‘আমি কোনো শিক্ষককে বইটি কিনতে বাধ্য করিনি। বাজারে ও বইমেলায় আমার লেখা বই পাওয়া যাচ্ছে, হয়তো শিক্ষকেরা সেখান থেকেই বই পেয়েছেন। শিক্ষকেরা নিজেদের ইচ্ছায় নিতে চাইলে নিতে পারেন।’
সন্ধ্যা রানীর লেখা বইটির নাম ‘প্রাথমিক শিক্ষার আঙিনায়’। ২৪০ পৃষ্ঠার এই বইয়ের দাম ৫০০ টাকা। শিক্ষকদের দাবি, বইটির দাম সর্বোচ্চ ২০০ টাকা হতে পারে। শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশনা পেয়ে ৫০০ টাকা দিয়েই কিনতে হচ্ছে তাঁদের।
কিশোরগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পাকুন্দিয়া উপজেলায় মোট ১৯৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক রয়েছেন ১ হাজার ২১৭ জন। আর ৮৪টি কিন্ডারগার্টেনে শিক্ষক আছেন পাঁচ শতাধিক। ইতিমধ্যে উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের লোকজনকে দিয়ে বইটি উপজেলার সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কিন্ডারগার্টেনে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাকুন্দিয়া উপজেলার এক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সন্ধ্যা রানী সাহা একজন লোকের মাধ্যমে তাঁর স্কুলে শিক্ষকদের জন্য বই পাঠিয়েছেন।
কয়েক শিক্ষক জানিয়েছেন, প্রায় ১০ দিন ধরে বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কিন্ডারগার্টেনে শিক্ষকদের কাছে সন্ধ্যা রানী সাহার লেখা বইটি পাঠানো হচ্ছে। বই বিক্রির টাকা আদায়ের কোনো রসিদ দেওয়া হচ্ছে না। প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমেও টাকা আদায় করা হচ্ছে।
শিক্ষকদের অভিযোগ, জোরপূর্বক নিজের লেখা বই কিনতে বাধ্য করাই নয়, পাকুন্দিয়ায় যোগদানের পর থেকেই ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে সন্ধ্যা রানী অসংখ্য শিক্ষককে কারণে-অকারণে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। কারণ দর্শানো নোটিশ (শোকজ) দিয়েছেন। অনেকের বেতন-ভাতাও বন্ধ করে দিয়েছেন। ভয়ে শিক্ষকেরা মুখ খুলতে পারছেন না। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী অনেক শিক্ষক মৌখিকভাবে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে অভিযোগও দিয়েছেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে সন্ধ্যা রানীর জবাব, ‘অন্যায় করলে অবশ্যই শোকজ করব।’
সন্ধ্যা রানীর বিরুদ্ধে অনেক শিক্ষকের কাছ থেকে মৌখিক অভিযোগ পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকতা মজিব আলম। তিনি বলেন, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কোনো শিক্ষকদের বই কিনতে বাধ্য করতে পারেন না। এ অধিকার তাঁর নেই। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যান্য অভিযোগের বিষয়েও যাচাই–বাছাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বই কিনতে কেউ কাউকে বাধ্য করতে পারে না জানিয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, বিষয়টি দেখতে পাকুন্দিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে। প্রথম আলো
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৩/০৩/২০২৪