যে দুই জেলায় বাড়ছে ঝরে পড়া শিক্ষার্থী
শিক্ষাবার্তা ডেস্ক, ঢাকাঃ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। নীলফামারী ও ঠাকুরগাঁও জেলার দুটি উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থার অত্যন্ত নাজুক অবস্থা দেখা গেছে। জনবলসহ শিক্ষা উপকরণ ও অবকাঠামো সংকটে মানসম্মত শিক্ষা থেকে শিশুরা বঞ্চিত হচ্ছে। শিক্ষকের অভাবে বিদ্যালয়গুলোতে প্রতিদিনের পাঠদান হচ্ছে না। পাশাপাশি খেলার মাঠ ও গ্রন্থাগার নেই। ডিজিটাল শিক্ষা কার্যক্রম ব্যবস্থাও অপ্রতুল। পাঠদানে শিক্ষকদের আন্তরিকতা অভাবসহ নানা কারণে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার বাড়ছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি নিয়েও নানা জটিলতা রয়েছে।
সরকারি প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমের বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে জুনে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা এবং নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় পৃথক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) উদ্যোগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ এবং উন্নয়ন সংস্থা ইএসডিওর সহযোগিতায় এ সংলাপের আয়োজন করা হয়। সিপিডির প্রবন্ধে উঠে এসেছে, ডিমলা উপজেলার ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিটিতে শিক্ষার্থীদের গড়সংখ্যা ১৬২। এতে ছাত্রী গড়ে ৮৬ জন ও ছাত্র গড়ে ৭৬ জন। শিক্ষকের সংখ্যা গড়ে ছয়জন। ২৫ শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক। ১০টি বিদ্যালয়ের পাঁচটিতে কেবল তিনটি করে শ্রেণিকক্ষ আছে। আর তিনটি বিদ্যালয়ে পাঁচটি করে শ্রেণিকক্ষ আছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
শ্রেণিকক্ষ সংকটে এসব বিদ্যালয়ের দুই শিফটে ক্লাস করানো হয়। ৪০ শতাংশ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের (ছেলে-মেয়ে) পৃথক বাথরুম নেই। মেয়েদের স্যানিটেশনের ব্যবস্থা নেই। কমনরুমের ব্যবস্থা নেই। বাধ্যতামূলক গ্রন্থাগার থাকার কথা থাকলেও প্রায় ৯০ শতাংশ বিদ্যালয়ে নেই। থাকলেও ব্যবহার হয় না। ১০ শতাংশের বেশি বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ, বিশুদ্ধ পানি ও হাত ধোয়ার ব্যবস্থা নেই। রাস্তাঘাট শিক্ষার্থী চলাচলের উপযোগী হয়ে ওঠেনি। বিশেষ করে বর্ষাকালে শিক্ষার্থীরা বেশি সমস্যায় পড়ে। নীলফামারীতে প্রাথমিকে ঝরে পড়ার হার জাতীয় হারের চেয়ে বেশি। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক। এসব বিদ্যালয়ে ডিজিটালের ছোঁয়া লাগেনি। কয়েকটি বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যবস্থা থাকলেও দক্ষ জনবলের অভাবে তা সঠিকভাবে হচ্ছে না।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিটিতে শিক্ষার্থীদের গড়সংখ্যা ১৯৬ জন। ছাত্রী গড়ে ১০৯ জন ও ছাত্র গড়ে ৯৫ জন। শিক্ষকের সংখ্যা গড়ে ছয়জন। ৩২ শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক। দুটিতে কেবল দুই থেকে তিনটি করে শ্রেণিকক্ষ আছে। তিনটি বিদ্যালয়ে পাঁচটি করে শ্রেণিকক্ষ আছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। ১০ শতাংশ বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ নেই। ৭০ শতাংশ বিদ্যালয়ে গ্রন্থাগার নেই। দক্ষ জনবল না থাকায় মাল্টিমিডিয়া ও ল্যাপটপে মাধ্যমে আধুনিক শিক্ষার কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের বাথরুম ব্যবস্থা নেই। ঠাকুরগাঁওয়ের আদিবাসী ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শিশুরা পড়াশোনার পরিবর্তে উপার্জনভিত্তিক কাজে যুক্ত।
অভিভাবক ও স্থানীয়দের অভিযোগ-প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষকস্বল্পতায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল করতে পারছে না। শিক্ষকরা নির্ধারিত সময়ে ক্লাসে আসেন না। প্রয়োজনীয় সংখ্যক ক্লাসও নেন না। ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী বিদ্যালয়েই প্রাইভেট পড়ে। শিক্ষকদের অভিযোগ, অনেক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। প্রশাসনিক কাজের দায়িত্ব সহকারী শিক্ষকদের নিতে হয়। এ বাড়তি চাপে অনেক সময় ক্লাসে পাঠদানে প্রয়োজনীয় সময় ও মনোযোগ দিতে পারেন না। তারা আরও বলেন, অনেক বিদ্যালয়ে অফিস সহকারী নেই। এ দায়িত্ব শিক্ষকদেরই পালন করতে হয়। এমনকি প্রতিটি শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার করার দায়িত্বও তাদের পালন করতে হয়। তাদের অভিযোগ, এ অঞ্চলের অভিভাবকরা সন্তানদের পড়াশোনার ব্যাপারে খুবই উদাসীন।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয় হলো পরবর্তী শিক্ষাজীবনের ভিত্তি। এ ভিত্তি নড়বড়ে হলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ রুদ্ধ হয়ে পড়ে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুলগুলোতে শিক্ষকস্বল্পতা সবচেয়ে বেশি। এ কারণে গ্রাম এলাকায় শিক্ষকদের বিশেষ প্রণোদনা দেওয়া দরকার। প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রাথমিকের শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষক ও অভিভাবক উভয়কে এগিয়ে আসতে হবে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৪/০৮/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়