'মাধ্যমিক শিক্ষকদের জন্য সুষ্ঠু বদলি নীতিমালা থাকা বাঞ্ছনীয়'
মোঃ ওমর ফারুকঃ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের একটি প্রাণের দাবি ছিল - একটি সুষ্ঠু ও সুসামঞ্জস্যপূর্ণ বদলি নীতিমালা প্রণয়ন ও তার সঠিক বাস্তবায়ন! এ দিকে এ দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে মাঠে সোচ্চার এনটিআরসিএ'র মাধ্যমে মাধ্যমিক পর্যায়ে নিয়োগপ্রাপ্ত বেসরকারি মাধ্যমিকগণও! তাঁদের কারো দাবিকে অগ্রাহ্য করার সুযোগ নেই!
আমরা আশ্চর্য হই এই দেখে যে, চাকরির শেষ সময়ে এসে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সমূহে কর্মরত একজন নারী শিক্ষককে খোদ নারী দিবসেই (গত ২০২২ সালের ৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবসে) তাঁর পরিবার থেকে শত শত মাইল দূরে বিভাগ পরিবর্তন করে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় অথবা দ্বীপ এলাকায় বদলি করা হয়েছে!
আবার, কারো কারো বয়োবৃদ্ধ পিতা-মাতা জীবন সায়াহ্নে উপস্থিত, এমন শিক্ষককে ও ২০০ কিলোমিটার দূরের জেলাতে বদলি করা হয়েছে! একইভাবে, অবিবাহিত একজন নারী শিক্ষককেও শত শত মাইল দূরের বিদ্যালয়ে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নিয়োগে দেওয়া হয়েছে!
অন্যদিকে, স্বামী-স্ত্রী উভয়ে সরকারি কর্মকর্তা হলে বদলীর যে সাধারণ নীতিমালা রয়েছে তা না মেনে স্ত্রীকে ১৫০ থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে বা কোনো ক্ষেত্রে অত্যন্ত রিমোট এরিয়ার জেলাতে ও এমনকি দ্বীপ এলাকায় বদলি করা হয়েছে! যা একেবারেই অমানবিক!
একইভাবে ২০২২ সালে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সমূহে নিয়োগপ্রাপ্ত সহকর্মীদের অনেককেই দ্বিতীয়বারের মতো (নিয়োগের মাত্র এক দুমাসের ব্যবধানে!) যে দূরবর্তী বদলি করা হয়েছে (সমন্বয়ে বদলির কারণে) এবং তার ফলে যে দুর্ভোগের শিকার তিনি বা তাঁরা হয়েছেন; তা বর্ণনাতীত! এখন পরবর্তী ব্যাচের নিয়োগ ও পদায়নের পূর্বে তাদেরকে তাদের নিজ জেলা বা পার্শ্ববর্তী জেলায় আবেদনের প্রেক্ষিতে বদলির বিষয়টি মানবিক কারণে বিবেচনায় নেয়া উচিৎ। অবশ্য সরকারি বা বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে যেকোনো নতুন ব্যাচকে যেকোন স্থানে পদায়ন দিলে তাদের জন্য সেটি সহনীয় হবে হয়তো; তারা মেনেও নিবেন কিন্তু তুলনামূলক অগ্রজদের দূরবর্তী স্থানে ফেলে রেখে নতুনদের প্রাইজ পোস্টিং বা নিজ জেলায় পোস্টিং(!) এটি কতটা প্রহসন মূলক, এ বিষয়টিও কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় নেয়া উচিত বৈ কি!
সরকারি মাধ্যমিকে কর্মরত সাধারণ শিক্ষকদের সমন্বয় বদলি জনিত কারণে যে দুর্ভোগ তৈরি হয়েছে, তা' দ্রুত সমাধান করতে ব্যর্থ হলে তাদের যে মানসিক অস্থিরতা রয়েছে তার মধ্যে থেকে তিনি তার পেশাগত ক্ষেত্রে কতটা আন্তরিকতা দেখাতে পারবেন সে প্রশ্ন অবান্তর নয়!
শিক্ষাবান্ধব বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী , মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, মাননীয় শিক্ষা উপমন্ত্রী এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকদের দাবি- অবিলম্বে সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকদের জন্য একটি সুষ্ঠু বদলি নীতিমালা প্রণয়ন ও দ্রুত বাস্তবায়ন, একইভাবে বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সমূহে কর্মরত সম্মানিত শিক্ষকদের মধ্যে যারা দূরবর্তী স্থানে নিয়োগ পেয়েছেন তাঁদের সম্ভব সকলকে স্বাধীনতা দিবসের এই মাসে এই মুহূর্তে এই দু'টি একটি সুষ্ঠু ও সুসামঞ্জস্যপূর্ণ বদলী নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে বদলীর সু ব্যবস্থা চালু করলে মাধ্যমিক শিক্ষকগণ আপনাদেরকে আজীবন কৃতজ্ঞতা ভরে স্মরণ করবে!
আশার দিক, ২০২৪ সালের মার্চ মাসের ৪ তারিখে একটি খসড়া বদলি নীতিমালা প্রণয়নের লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী মহোদয়ের সভাপতিত্বে ইতোমধ্যে একটি সফল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে! যেখানে শিক্ষা সচিব মহোদয় সহ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মহোদয়, কলেজ ও মাধ্যমিক এর পরিচালকদ্বয় এবং মাউশির উপপরিচালক (মাধ্যমিক) ও ঢাকার উপপরিচালক মহোদয় সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষকদের আশা, কাল বিলম্ব না করে অনতিবিলম্বে সরকারি মাধ্যমিক তথা মাউশির বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখায় কর্মরত শিক্ষক কর্মকর্তা এবং বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সমূহে কর্মরত সম্মানিত শিক্ষকদের জন্য (যারা এনটিআরসিএ'র মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত) একটি সুস্থ ও সুস্বামঞ্জস্যপূর্ণ বদলি নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে।
লেখক: সহকারী শিক্ষক (বাংলা), সরকারি করোনেশন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় খুলনা ও সদস্য, কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি
বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি (বাসমাশিস)