মহিষখোচা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট চরমে
লালমনিরহাটঃ জেলার আদিতমারীতে মহিষখোচা দক্ষিণপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৪ শিক্ষকের জায়গায় পাঁচ শিক্ষক দিয়ে চলছে পাঠদান। ফলে শিক্ষক সংকটে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান কার্যক্রম। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, দ্রুত এই শিক্ষক সংকট দূর করে পাঠদান কার্যক্রমকে বেগবান করতে হবে।
জানা গেছে, তি¯ত্মা চরাঞ্চলের ছেলেমেয়েদের শিক্ষার কথা বিবেচনা করে ১৯৪০ সালে মহিষখোচা দক্ষিণপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়, যা কালক্রমে জাতীয়করণ করা হলে শিক্ষার দিক থেকে এগিয়ে যায় অবহেলিত এ জনপদটি। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রচেষ্টায় বিদ্যালয়টি একসময় জেলার শীর্ষস্থান দখল করে। ২০০৩ সালে বিদ্যালয়টির ৮ শিক্ষার্থী প্রাথমিকে বৃত্তি অর্জন করে সাফল্যে আরো একধাপ এগিয়ে যায়। এরপর বিরতিহীন প্রতি বছর বৃত্তি অর্জন করে আসছিল বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা।
২০১১ সালে সরকারিভাবে উপজেলাপ্রতি একটি করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিম্নমাধ্যমিক চালুর সিদ্ধাšত্ম নেয় সরকার। সেই পাইলট প্রকল্পেও আদিতমারী উপজেলার একমাত্র বিদ্যালয় হিসেবে মহিষখোচা দক্ষিণপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিম্নমাধ্যমিক চালু করা হয়। এভাবে বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে প্রাক-প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যšত্ম পাঠদান চালু রয়েছে। নিম্নমাধ্যমিক চালুর সময় প্রাথমিকের ৮টি ও নিম্নমাধ্যমিকের প্রতি শ্রেণিতে ২ জন করে ৬ জন শিক্ষক পদ সৃষ্টি করা হয়। কিন্তু তা কাগজ-কলমে থাকলেও অতিরিক্ত শিক্ষক পদায়ন দেওয়া হয়নি। যার ফলে শিক্ষক সংকটে জৌলুস হারাতে বসেছে একসময়ের সেরা এ বিদ্যাপিঠটি।
২০২০ থেকে টানা ৩ বছর বিদ্যালয়টির কোনো শিক্ষার্থী বৃত্তি অর্জন করতে পারেনি। নেই শ্রেণিভিত্তিক শিক্ষক। ফলে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। যার কারণে অভিভাবকেরাও সšত্মানদের এ বিদ্যালয় থেকে সরিয়ে নিচ্ছেন। এর ফলে কমে আসছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। পর্যাপ্ত একাডেমিক ভবন থাকলেও শিক্ষক সংকটে নিম্নমুখী হচ্ছে বিদ্যালয়টির সুনাম। বর্তমানে প্রাক-প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা মাত্র ৩১২ জন।
বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির রহিমা, ৭ম শ্রেণির জান্নাতি, ৬ষ্ঠ শ্রেণির সিহাব ও ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী তাসলিমা জানান, একজন শিক্ষক এক সঙ্গে ৩টি ক্লাস নেন। একটিতে লিখতে দিয়ে অন্যটিতে যান। এভাবে এখন আগের মতো আর পড়াশোনা হয় না। তারা দ্রুত প্রয়োজনীয় শিক্ষক পদায়নের দাবি জানান।
বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক জিয়াউর রহমান বলেন, ‘১৪ জনের ক্লাসে ৫ জনে সামলানো বেশ কষ্টকর। ক্লাসে মনোযোগী করানো তো দূরের কথা শিক্ষকরাই মনোযোগী হতে পারেন না পাশের ক্লাসের হট্টগোলে। তাই বাধ্য হয়ে একজন শিক্ষককে কৌশলে একাধারে ৩টি ক্লাস সামলাতে হয়। এভাবে তো পড়ালেখা করানো সম্ভব নয়।
প্রধান শিক্ষক মমতাজ বেগম বলেন, ‘প্রয়োজনীয় শিক্ষক চেয়ে কয়েক দফায় আবেদন করেও কোনো কাজ হয়নি। বরং এ বিদ্যালয়ের শিক্ষককে প্রেষণে পাঠানোর আদেশ আসে। শুধু শিক্ষক সংকটের কারণে পাঠদানে ব্যাহত হওয়ায় বিদ্যালয়টির মান নিম্নমুখী হচ্ছে। দ্রুত শিক্ষক পদায়নের দাবি জানান তিনি।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এনএম শরীফুল ইসলাম খন্দকার জানান, জেলা শিক্ষা অফিস থেকে প্রেষণের আদেশ পাঠালে আমাদের কিছু করার থাকে না। অন্য কোনো শিক্ষক ওই বিদ্যালয়ে যেতে আগ্রহী থাকলে তাকে পাঠানো যেত। কিন্তু কেউ আগ্রহ দেখায়নি। আমারও বদলির আদেশ হয়েছে। নতুন কর্মকর্তা এলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৮/০৭/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়