প্রিয় অধ্যক্ষ'কে হারিয়ে শোকাহত পুরো কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
ব্রাহ্মণবাড়িয়াঃ শিক্ষার্থীরা যেখানে আনন্দ হৈ চৈ করে মাতিয়ে রাখতো পুরো কলেজ, সেখানে সব কিছু যেন স্তব্ধ হয়ে আছে। তাদের মাঝে নেই কোনো আনন্দ কোলাহল। সবাই চোখে বিষন্নতার ছাপ। শোকে কাতর হয়ে আছে শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা। কলেজ থেকে শুরু করে পাড়া মহল্লায় একই অবস্থা। এমন দৃশ্য দেখা যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর শহরের জাহানারা হক মহিলা কলেজে।
এ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ শাহজাহান মিয়া জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়। তিনি মঙ্গলবার সকালে সাড়ে ৬ টায় পৌর শহরের কলেজপাড়া নিজ বাসায় মারা যান। প্রাণ প্রিয় শিক্ষককে হারিয়ে সবাই শোকাহত। অসময়ে চলে যাওয়া তার এই শূন্যতা এখন কাঁদাচ্ছে সবাইকে।
অধ্যক্ষ শাহজাহান মিয়া পৌর শহরের কলেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তার গ্রামের বাড়ি উপজেলা মনিয়ন্দ ইউনিয়নে। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও নাতি-নাতনিসহ বহু আত্মীয় স্বজন রেখে গেছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস রোগে ভোগছিলেন। তার ছোট ছেলে শামশিয়ার জাহান মিথুন তার পিতার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
মোহাম্মদ শাহজাহান মিয়া আখাউড়া শহীদ স্মৃতি সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও আখাউড়ার কিশলয় কিন্ডার গার্টেনের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। শহীদ স্মৃতি কলেজ থেকে অবসরে চলে আসায় এরপর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে তিনি জাহানারা হক মহিলা কলেজে যোগ দেন।
এদিকে মুহূর্তের মধ্যে তার মৃত্যুর খবরটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষক শিক্ষার্থী অভিভাবকসহ এলাকার লোকজনের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে।
দুপুর ২টায় শহীদ স্মৃতি কলেজ মাঠে তার মরদেহ আনা হয়। সেখানে শিক্ষক, ছাত্র, অভিভাবক, জনপ্রতিনিধি, তার বন্ধু বান্ধনসহ এলাকার লোকজন স্বত:স্ফুর্তভাবে জানাজায় অংশ নিয়ে তাকে শেষ বিদায় জানায়। প্রথম জানাজা শেষে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামের বাড়ি মনিয়ন্দে। এরপর বাদ আছর দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক করস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
জাহানারা হক মহিলা কলেজেরে শিক্ষার্থী রুনা আক্তার বলেন, ‘আসলে স্যার ছিলেন একজন প্রকৃত মানুষ গড়ার কারিগর। তার হাতের ছোঁয়ায় এলাকায় শিক্ষার আলোর প্রসার ঘটছে। স্যারের মৃত্যুতে আমরা একজন গুণী শিক্ষককে হরালাম। আমরা মেনে নিতে পারছি না আমাদের প্রিয় স্যার আর নেই। স্যারের মৃত্যুতে যে ক্ষতি হয়েছে তা পুরণ করার মতো নয়।’
আখাউড়া টেকনিকেল আলিম মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা নাসির উদ্দিন বলেন, ‘নিসন্দেহে স্যার একজন আদর্শ ও ভালো শিক্ষক ছিলেন। স্যারের একটা ভালো গুণ হলো তিনি অতি সহজে সবাইকে আপন করে নিতেন। আমরা একজন গুণি শিক্ষককে হারিয়েছি।
অভিভাবক মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘কোনো সমস্যা নিয়ে কলেজে আসলেই স্যার এসে বলতেন কোনো সমস্য হয়েছে কি না। চিন্তা করবেন না। আমিতো আছি। স্যারের কাছে সব সময় ভরসা পেতাম। স্যার যে আমাদের মাঝে নেই এটা ভাবতে খুবই কষ্ট হচ্ছে।’
অধ্যাপক আরিফ রাব্বানী বলেন, ‘শিক্ষা ক্ষেত্রে স্যার ছিলেন একজন অতন্দ্র প্রহরী। স্যারের এ চিরবিদায়ে আমরা কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা হারালাম একজন গুণী ব্যক্তিকে। আমরা হারালাম প্রকৃত একজন মানুষ গড়ার কারিগরকে। স্যার ছিলেন একজন গুণী আদর্শ শিক্ষক। কর্তব্যে পালনে তিনি কখনো অবহেলা করেন নি। শিক্ষার মান উন্নয়নে তার অবদান বলে শেষ করা যাবে না।’
আখাউড়া শহীদ স্মৃতি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ওয়াহেদ সারওয়ার বলেন, ‘শাহজাহান স্যার ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক এবং আলোকিত মানুষ তৈরি করার কারিগর। কিভাবে শিক্ষার্থীদেরকে পাঠদানে মনোযোগী করা যায় সব সময় উৎসাহ দিতেন। তিনি সময়কে খুবই গুরুত্ব দিতেন। শ্রেণিকক্ষে মনযোগ সহকারে সুন্দর করে পাঠদান করাতেন। এভাবে আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন তা কখনো কল্পনাও করতে পারিনি। তার মৃত্যু আমাদের সবাইকে কাঁদিয়েছে। স্যারের দিক-নির্দেশনামূলক কথাগুলো যেনো এখনো কানে বাজে।’
এদিকে মুহাম্মদ শাহজাহান মিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, আখাউড়া পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাকজিল খলিফা কাজল, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আবুল কাশেম, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোহাম্মদ আলী চৌধুরী। শোকবার্তায় তারা মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৪/০২/২০২৪