পরীক্ষা সকালে, ক্লাস হয় না কলেজে
ঢাকাঃ দীর্ঘদিন ধরেই সরকারি ও বেসরকারি কলেজগুলোতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগুলো দুপুরের সময় অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এসব পরীক্ষার কারণে কলেজগুলোর উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের সকালের ক্লাসে কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি পরীক্ষা সকালে নেওয়া হচ্ছে। এ কারণে পরীক্ষার দিনগুলোতে বন্ধ রাখা হচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিকের শ্রেণি কার্যক্রম। ক্রমান্বয়ে অন্য পরীক্ষাগুলোও সকালে আনার শঙ্কায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এটি স্থায়ী হলে এসএসসি ও এইচএসসির মতো আরও এক মাস ক্লাসবঞ্চিত হবে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকরা জানান, এর ফলে সিলেবাস শেষ করা যাবে না। ঠিক সময়ে নেওয়া যাবে না পরীক্ষাও। ফলে সংকটে পড়বে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র হওয়ার কারণে এমনিতেই সরকারি বা বেসরকারি কলেজে শ্রেণি কার্যক্রম দুই মাসের মতো বন্ধ থাকে। এ ছাড়া সকালে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করে পরে পরীক্ষার হলে পর্যবেক্ষকের দায়িত্বও পালন করতে হচ্ছে শিক্ষকদের। এতদিন ডিগ্রি, অনার্স ও মাস্টার্স পরীক্ষা দুপুরে নেওয়ায় উচ্চ মাধ্যমিক, ডিগ্রি ও অনার্সের পাঠদান কার্যক্রম সকালে চলত। সম্প্রতি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা সকালে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ২০২১ সালের সংশোধিত রুটিন অনুযায়ী, গত ১২ জুলাই থেকে ওই পরীক্ষা শুরু হয়েছে। চলবে আগামী ৩০ আগস্ট পর্যন্ত।
শিক্ষকরা বলছেন, সরকারি কলেজগুলোক বহুমুখী এবং বহুমাত্রিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। একই সঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিক, ডিগ্রি এবং সম্মান শ্রেণির পাঠদান করতে হয়। পাশাপাশি শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষক সংকটের মতো সমস্যাও আছে। নির্দিষ্ট পরীক্ষাকেন্দ্র না থাকায় শ্রেণিকক্ষকে হল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এজন্য শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হচ্ছে দিনের পর দিন। একই অবস্থা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বেসরকারি কলেজের কেন্দ্রগুলোতেও।
তারা বলেন, ডিগ্রি পরীক্ষার শিডিউলের কারণে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা। কারণ, মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী, ২০২৪ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা আগামী বছর জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তার আগে, ডিগ্রি পরীক্ষা উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কার্যক্রম এক মাস বন্ধ থাকার উপক্রম হয়েছে। আবার আগস্ট থেকে চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হলে আরও এক মাস বন্ধ থাকবে এসব কলেজ। এরপর আগামী ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি পরীক্ষা হলে তখনো এক মাস বন্ধ থাকবে কলেজগুলো। এসব কারণে সর্বোচ্চ তিন মাস পর্যন্ত শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকতে পারে। এদিকে, পরীক্ষার কারণে পাঠদান বাধাগ্রস্ত হওয়ায় অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। ভাবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি এড়াতে পরীক্ষার জন্য আলাদা সেন্টার তৈরির পাশাপাশি পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানান শিক্ষকরা।
তারা আরও বলেন, নিয়মিত ক্লাস নিয়েও অনেক সময় সিলেবাস শেষ করা যায় না। সেখানে ক্লাস বন্ধ রাখলে এটি শিক্ষার্থীদের জন্য ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’। এসএসসি ও এইচএসসির জন্য দুই মাস ক্লাস এমনিতেই বন্ধ থাকে। এখন ডিগ্রি পরীক্ষার জন্য আরও এক মাস বন্ধ রাখতে হবে। এতে করে বছরের তিন মাসই ক্লাসের বাইরে থাকবে শিক্ষার্থীরা। তার ওপর দুদিন সাপ্তাহিক ছুটিসহ অন্য সরকারি ছুটি তো আছেই।
ফেনীর সরকারি জিয়া মহিলা কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রভাষক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বলেন, করোনা-পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। তারওপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় যদি দুই বেলাতেই পরীক্ষার শিডিউল রাখে, তাহলে পাঠদান কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে। এক্ষেত্রে পরীক্ষা ও পাঠদান কার্যক্রম সমানভাবে চালিয়ে নিতে যৌক্তিক সমন্বয় সাধন করতে হবে।
নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের প্রভাষক মনিরুল মামুন বলেন, সরকারি কলেজগুলোতে শিক্ষক ও অবকাঠামো সংকটে নিয়মিত পাঠদানেই বিঘ্ন ঘটে। এরই মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি পরীক্ষা সকালে হলে পড়াশোনার পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি পাঠদান ব্যাহত হবে। শিক্ষকরা লাভবান হলেও শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (কলেজ) আবদুন নূর মুহম্মদ আল ফিরোজ ও সচিব সোলেমান খান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। দুজনেরই ভাষ্য, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ের ব্যাখ্যা দিতে পারবে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, বিষয়টি আসলে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির জন্য করা হয়েছে এমন নয়। শিক্ষকরা জানিয়েছেন, দুপুরে নামাজের সময় বা খাবার সময় একসঙ্গে অনেকে পরীক্ষার হলে থাকতে পারেন না। আবার সকালে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিয়ে পরীক্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত টানা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবস্থান করা কষ্টকর।
তিনি বলেন, যেহেতু স্বতন্ত্র পরীক্ষার হল নেই, সে কারণে যেভাবেই পরীক্ষা হবে, সমস্যা থাকেই। এরই মধ্যে সাড়ে ৭ হাজার ক্লাস অনলাইনে আপলোড করা হয়েছে। এরপরও যদি দেখি অনলাইনে যথেষ্ট পরিমাণ ক্লাস নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, তখন আবার হয়তো রিভিউ করতে হবে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৮/০৭/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়