নিবন্ধন সনদ জাল প্রমাণিত তবুও বহাল তবিয়তে শিক্ষক!
নিজস্ব প্রতিবেদক, বান্দরবানঃ জেলার লামা উপজেলার ফাইতং উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (শরীর চর্চা) মো. নুরুল আমিনের বিরুদ্ধে শিক্ষক নিবন্ধনের জাল সনদে এক যুগ ধরে শিক্ষকতা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নুরুল আমিন ২০০৯ সালের ৭ জুলাই উপজেলার লামামুখ উচ্চ বিদ্যালয়ের শরীর চর্চা শিক্ষক পদে নিয়োগ পান। এরপর ২০১২ সালে তিনি বদলি হয়ে ফাইতং উচ্চ বিদ্যালয়ে শরীর চর্চা শিক্ষক পদে যোগ দেন। ২০১১ সালের দিকে এমপিওভুক্ত হন এ শিক্ষক। বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হওয়ার পর বিভিন্ন কাগজপত্র যাচাই করতে গিয়ে শিক্ষক নুরুল আমিনের শিক্ষক নিবন্ধন সনদটি যার রোল নম্বর ৩১১৭০২৫৬ নিয়ে সন্দেহ হয় বিদ্যালয়টির তৎকালীন পরিচালনা কমিটির। এ কারণে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার সনদের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য এনটিআরসিএ'র কাছে পাঠায়। যাচাই শেষে ২০১৪ সালের ৪ এপ্রিল এনটিআরসিএর উপপরিচালক (শিক্ষা তত্ত্ব ও শিক্ষা মান) মাধব চন্দ্র রুদ্র স্বাক্ষরিত চিঠিতে জানিয়ে দেওয়া হয়- শরীর চর্চা পদের সহকারী শিক্ষক নুরুল আমিনের নিবন্ধন সনদটি ভুয়া।
সনদ যাচাই-বাছাই করে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) ওই শিক্ষকের নিবন্ধন সনদটি জাল বলে জানানোর ৮ বছরেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সনদ জালিয়াতির বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয়টির তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শহিদুল্লাহ মিন্টু জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ করলে বান্দরবান জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সরিৎ কুমার চাকমা ১৬ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে বিদ্যালয়টিতে সরেজমিনে তদন্ত করেন। তদন্ত শেষে ১০ এপ্রিল ২০২২ তারিখে তদন্ত রিপোর্ট দেন তিনি। তদন্তে রিপোর্টে শিক্ষা কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, অভিযুক্ত শিক্ষক নরুল আমিন ইনডেক্সধারী হওয়ায় বিগত ১৬ এপ্রিল ২০১২ তারিখে ফাইতং উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়োগদানের সময় তার এনটিআরসিএ সনদ সঠিকভাবে যাচাই করা হয়নি। অভিযুক্ত শিক্ষক ইতোপূর্বে লামামুখ উচ্চ বিদ্যালয়ে ভুয়া এনটিআরসিএ সনদ নিয়ে এমপিওভুক্ত হন। কাজেই তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সঠিক মর্মে প্রতীয়মাণ হওয়ায় বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০২১ এর ১৮.১(৫)নং ধারা অনুযায়ী অভিযুক্ত শিক্ষক নুরুল আমিনের এমপিও (বেতন ভাতাদি) বাতিলকরণের জন্য সুপারিশ করা হল।
আরও পড়ুনঃ অনিয়মে একাই একশো ফাইতং উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জসিম
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশের আলোকে চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) থেকে সহকারী শিক্ষক (শরীর চর্চা) মো. নুরুল আমিনকে শোকজ করা হয় এবং পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দেওয়ার কথা বলা হয়। শোকজ নোটিশে মাউশি উল্লেখ করে, বর্ণিত অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় এবং তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশের আলোকে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০২১ এর ১৮.১(৫)নং ধারা অনুযায়ী অভিযুক্ত শিক্ষক নুরুল আমিনের এমপিও (বেতন ভাতাদি) কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়।
২০১৪ সালের ৪ এপ্রিল এনটিআরসিএ কর্তৃক জাল সনদ প্রমাণিত, ২০২২ সালে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কর্তৃক তদন্ত প্রতিবেদনে জাল সনদ প্রমাণিত এবং তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের কাছেও নিবন্ধন সনদটি জাল বলে প্রমাণিত হয়। এত স্বত্বেও বহাল তবীয়তে রয়েছেন শিক্ষক নুরুল আমিন। বাতিল হয়নি তার এমপিও।
মাউশি সূত্রে জানা গেছে, বিষয়টি এমপিও সভায় তোলা হবে এবং ঐ শিক্ষককে তলব করা হবে। সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
জানতে চাইলে অভিযোগকারী ও ফাইতং উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সভাপতি শহিদুল্লা মিন্টু বলেন, বিষয়টি দুঃখ ও হতাশাজনক। সনদ জালিয়াতি প্রমাণিত হবার পরেও কিভাবে সে এখনও বহাল তবিয়তে আছে বলতে পারছি না। কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি দেখার জন্য অনুরোধ করি যেন দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
এ বিষয়ে ফাইতং উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এহসান উল্লা এর আগে শিক্ষাবার্তা’কে বলেছিলেন, অভিযোগগুলো নিয়ে বিভিন্ন টানা হেচরা হয়েছে। একাধিকবার শিক্ষা কর্মকর্তা এসেছন। এই বিষয়ে প্রধান শিক্ষক ভালো বলতে পারবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফাইতং উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জসিম উদ্দিনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। ।
বান্দরবান জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুরিৎ কুমার চাকমা জানান, আমি আমার কাজ শেষ করেছি। অধিকতর তদন্তের দরকার পরলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তদন্ত করতে পারেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাধ্যমিক) সহকারী পরিচালক কাওছার আহমেদ বলেন, বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে অচিরেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৫/০৪/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়