ধুনটে বরখাস্তের পরও মাদরাসা সুপার স্বপদে বহাল
বগুড়াঃ জেলার ধুনট উপজেলায় গোসাইবাড়ী ইউনিয়নের চিথুলিয়া বালিকা দাখিল মাদরাসার সুপার ইকরামুল হককে ইতঃপূর্বে বরখাস্ত করা হলেও তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতার আশীর্বাদে এখনো স্বপদে রয়েছেন। তিনি নিয়মিত বেতন-ভাতাও উত্তোলন করছেন। এ ছাড়া অবৈধভাবে তার পছন্দের ব্যক্তিকে মাদরাসায় সহকারী সুপার পদে নিয়োগেরও তোড়জোড় চলছে। মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতরে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেয়া হলেও এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।
বরখাস্তকৃত সুপার ইকরামুল হকের অবৈধভাবে স্বপদে বহাল থাকার বিরুদ্ধে মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি জাহিদুল ইসলাম গত ১ এপ্রিল মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগপত্রে মাদরাসার ৮ শতাংশ জমি বিক্রি, ব্যাংকের টাকা তছরুপ ও ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে জাল সনদে লাইব্রেরিয়ান ও অফিস সহকারী নিয়োগসহ ইকরামুল হকের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা উল্লেখ করেন তিনি।
অভিযোগপত্রে তিনি আরো উল্লেখ করেন, মাদরাসা সুপার ইকরামুল হককে ২০২১ সালে ২৫ মার্চে ম্যানেজিং কমিটির সভায় সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। সেই সাথে মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির ওই সভায় মাদরাসার সহকারী সুপার গোলাম ফারুককে ভারপ্রাপ্ত সুপার হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। ইকরামুল হকের বরখাস্তের নোটিশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে শিক্ষক-কর্মচারী তালিকায় ইকরামুল হকের নামের পাশে লিখিত রয়েছে।
কিন্তু গত বছরের নভেম্বরে ভারপ্রাপ্ত সুপার গোলাম ফারুক চাকরি থেকে ইস্তফা দিলে ইতঃপূর্বে বরখাস্তকৃত সুপার ইকরামুল হক চাকরির সব তথ্য গোপন করে ধুনট উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতার দাপটে নতুন ম্যানেজিং কমিটি গঠন করেন এবং কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই তিনি স্বপদে পুনরায় বহাল হন। এরপর থেকে তিনি আবারো নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি শুরু করেন। গত বছর তিনি জালিয়াতির মাধ্যমে জাল সনদে রাজু আহমেদ নামের একজনকে লাইব্রেরিয়ান পদে নিয়োগ দিয়ে তার কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। এরপর মাদরাসার ৮ শতাংশ জমি বিক্রি করে দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে আরো নানা অভিযোগ রয়েছে। যেমন এনটিআরসি নিয়োগকৃত আইসিটি শিক্ষক মতিউর রহমান যোগদান করতে গেলে তাকে যোগদানে ও হাজিরা খাতায় স্বাক্ষরদানে বাধা দেয়া, তার কাছ থেকে ঘুষ দাবি করা, মাদরাসার তিনটি ব্যাংক হিসাব থেকে এক লাখ ৬৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ (অডিট কমিটির কাছে প্রমাণিত), অভিজ্ঞতার জাল সনদে সুপার পদে নিয়োগ গ্রহণ, নিজের বাবার পেনশনের টাকা নিতে প্রতিবন্ধী সেজে স্থানীয় গোসাইবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রতিবন্ধী সনদ সংগ্রহ ইত্যাদি নানা অভিযোগ রয়েছে।
মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালককে দেয়া গত ১ এপ্রিলের অভিযোগপত্রে এসব দুর্নীতির কথা জানানো হলেও ইকরামুল হকের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক অধিদফতর থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বর্তমানে বরখাস্তকৃত সুপার ইকরামুল হকের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির আরো দুটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এর একটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে বগুড়ার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে, আরেকটি মামলা রয়েছে সহকারী জজ আদালতে।
এনটিআরসি কর্তৃক নিয়োগকৃত আইসিটি শিক্ষক মতিউর রহমান বলেন, আমি নিয়মিত মাদরাসায় গেলেও আমাকে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর এবং ক্যাশ নিতে দেয়া হচ্ছে না। বিষয়টি আমি এনটিআরসিকে জানিয়েছি এবং মাদরাসায় আমার উপস্থিতির ছবিও পাঠিয়েছি।
এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হযরত আলী বলেন, আমি মাদরাসা পরিদর্শন করে সেই প্রতিবেদন দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠিয়েছি।
চিথুলিয়া বালিকা দাখিল মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, মাদরাসার বরখাস্তকৃত সুপার ইকরামুল হক কিভাবে চাকরি করেন, কিভাবে বেতন-ভাতা পান এবং শূন্যপদে কিভাবে নতুন নিয়োগ দিচ্ছেন- তা মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতরকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে অভিযোগপত্রে অনুরোধ করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত শিক্ষা অধিদফতর থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
বরখাস্তকৃত সুপার ইকরামুল হকের বক্তব্য জানতে কয়েক দফা মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তার পর মোবাইল ফোনে বার্তা পাঠিয়ে কথা বলতে চাইলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৯/০৫/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তা’য়