জাতীয়করণ: শিক্ষক আত্তীকরণে কচ্ছপগতি
ঢাকাঃ ২০১৬ সালে বেসরকারি কলেজ জাতীয়করণ শুরু করে সরকার; দুই দফায় ৩৩৩টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা হয়। এরপর প্রায় আট বছর পেরিয়ে গেলেও মাত্র ২৩টি কলেজের শিক্ষক-কর্মচারী সরকারি বেতন-ভাতা তুলতে পারছেন। ৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী সরকারি সুযোগসুবিধা পাচ্ছেন। অবশিষ্ট ৯৩ শতাংশের আত্তীকরণ কার্যক্রম এ পর্যন্ত সম্পন্ন হয়নি। এ সময়ের মধ্যে চার হাজারেরও বেশি শিক্ষক-কর্মচারী অবসরে চলে গেছেন সরকারি সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত অবস্থাতেই। শুধু তাই নয়। তাদের শূন্যস্থান পূরণে নতুন করে নিয়োগও রয়েছে বন্ধ। ফলে পাঠদান সংকটে বঞ্চিত শিক্ষার্থীরাও।
আত্তীকরণ সম্পন্ন হতে আর কতদিন লাগতে পারে?- এ প্রশ্নেরও উত্তর নেই সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে। এদিকে আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারের নেওয়া এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না হলে চাকরি হারানোর ঝুঁকি রয়েছে বলে আশঙ্কা করছেন ভুক্তভোগীরা। তাদের অভিযোগ, রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলেও প্রশাসনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আত্তীকরণ প্রক্রিয়ায় এত দীর্ঘসূত্রতা।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি স্কুল-কলেজবিহীন প্রতিটি উপজেলায় একটি করে স্কুল ও একটি করে কলেজ সরকারি করার ঘোষণা দেওয়ার পর ২০১৬ সালের জুন মাসে ৩০২টি কলেজ সরকারিকরণের জন্য বাছাই করা হয়। এরপর আরও ৩১টি কলেজ বাছাই করা হয়।
জাতীয়করণকৃত শিক্ষকদের সংগঠন সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতির (সকশিস) তথ্যানুযায়ী, দফায় দফায় যাচাই-বাছাইয়ের পর নানা ধাপ পেরিয়ে এখন পর্যন্ত ১৬১টি কলেজ সচিব কমিটিতে অনুমোদন পেয়েছে। অধিকতর তদন্তের জন্য রাখা হয়েছে ১৩৪টি কলেজ। চূড়ান্ত নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে ৮৩টি কলেজের। আরও ১২টি নিয়োগের প্রক্রিয়াধীন। মাত্র ২৩টি কলেজের শিক্ষক-কর্মচারী পুরোপুরি সরকারি বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। ৪টি কলেজের কাগজপত্র হিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ে প্রক্রিয়াধীন। চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত এ অগ্রগতি। দীর্ঘসূত্রতার জন্য ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক-কর্মচারীরা জাতীয়করণের সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
শিক্ষক-কর্মচারীদের আত্তীকরণে এত সময় লাগছে কেন?- এমন প্রশ্নে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্যমতে প্রায় ১৮ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর নিয়োগ থেকে শুরু করে এমপিও, একাডেমিক যোগ্যতাসহ সবকিছু পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখতে হয়েছে। এই বিশাল কর্মযজ্ঞে স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা সময় লেগেছে। কাজ শেষ করতে এখনো
নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না আর কত সময় লাগবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একক সিদ্ধান্তে সব চূড়ান্ত হয়নি। অর্থ মন্ত্রণালয় এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়েরও সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এ জন্য সময় লাগছে।
দ্রুততার সঙ্গে আত্তীকরণ করা গেলে শিক্ষক সংকট দূর হয়ে যাবে বলে জানান মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা। বলেন, জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর পদ সৃষ্টি হয়ে গেলে প্রয়োজনে বদলির মাধ্যমে যেসব কলেজে শিক্ষক-স্বল্পতা রয়েছে, তা দূর করা হবে।
সকশিস সভাপতি জহুরুল ইসলাম বলেন, স্থানীয়ভাবে ভালো মানের কলেজগুলোকেই সরকার জাতীয়করণ করেছে। এখনো যাদের আত্তীকরণ করা হয়নি, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে তাদের আত্তীকরণ করা না হলে চাকরি ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এক্ষেত্রে আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে আত্তীকরণ সম্পন্ন করতে হবে বলে মনে করেন সকশিস সভাপতি। তিনি বলেন, অযাচিত যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে কালক্ষেপণ করা যাবে না। সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেসরকারি আমলে প্রাপ্ত বেতন গ্রেডসহ পদমর্যাদা বহাল রাখতে হবে। আত্তীকরণে শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়নের কম্পোজিশন ও রিক্রুটসমেন্ট রুলস ৩০ জুনের মধ্যে প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করতে হবে।
শিক্ষকদের এ দাবির বিষয়ে শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে যখন সরকার এতগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করছে- তবে কেন এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের সরকারি সুযোগসুবিধা পেতে সাত-আট বছর লাগবে? এর পেছনে কারা দায়ী? সরকারকে তাদের চিহ্নিত করতে হবে। উদ্যোগের ত্রুটি দেখছি না, বাস্তবায়নের যথাযথ মনিটরিংয়ের অভাব রয়েছে। ফলে সরকারের উদ্দেশ্যের সুফল পৌঁছায়নি শ্রেণিকক্ষে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২১/০৫/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তা’য়