খালেদাই ক্ষমতার কাণ্ডারি
নিউজ ডেস্ক।।
এবার বিএনপিতে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন! রাজনৈতিক হিসাব শক্তভাবেই অঙ্কন করেছে। দেশ-বিদেশের প্রশ্ন ও চাহিদা আগেই ঠিক করেছে। ভোটের দেড় বছর আগেই মাঠে নেমে গেছে। দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা বিশ্রাম ঘুচিয়ে কর্মীদের নিয়ে হুঙ্কার দিচ্ছেন। মাঠের আমলেই নিজেদের ভবিষ্যৎ চূড়ান্ত করছেন শীর্ষরা।
শেষবেলায় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং সরকার পতনের আন্দোলনের দিকনির্দেশনা কে দেবেন তা এখনই ঠিক করেছেন। সকার গঠন হলে নেতৃত্বের চাবি কার হাতে থাকবে তা আগেই চূড়ান্ত করা হয়েছে। জোট ও ঐক্যের জট নিরসনও হচ্ছে সন্তোষে।
দলের নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলছে ,লম্বা একটা সময় তারেক রহমান ও খালেদা জিয়াকে নিয়ে উভয় শঙ্কটে পড়েছিল বিএনপি। খালেদা জিয়ার অনুসারীদের বড় একটি অংশ তারেক রহমানকে ভালোভাবে গ্রহণ করেনি। দীর্ঘ কারাবাসেও খালেদা জিয়ার মুক্তির ভূমিকা নিয়ে বিএনপি নীতি নির্ধারকের ওপর দৃশ্যত ক্ষোভ ছিল তৃণমূল নেতাদের।
অবশেষে দল বাঁচাতে, দেশ বাঁচাতে , শেখ হাসিনাকে সরাতে খালেদা জিয়ার প্রেসক্রিপশনই চূড়ান্তভাবে গ্রহণ করেছে বিএনপি। খালেদা জিয়ার দিকনির্দেশনায় আগামী নির্বাচনের আগে আন্দোলন এবং জিততে পারলে খালেদা জিয়াই হবেন প্রধানমন্ত্রী— এটি দলে সর্বসম্মতভাবে চূড়ান্ত হয়েছে।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরাম বলছে, নির্বাচন এলেই বিএনপিতে আ স ম আব্দুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, বি. চৌধুরী, ড. কামাল হোসেনদের জোটের গুরুত্ব বাড়ে। এবার দ্বাদশ নির্বাচনে বিএনপি ড. কামাল হোসেন ও বি. চৌধুরী থেকে দূরে থাকবে। রেজা কিবরিয়া ও মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ বিশেষ কয়েকজকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
সরকার গঠনের ক্ষেত্রে দেশের সুশিল সমাজের অংশ থেকে কয়েকজন বিশেষ নজরে থাকে। এবারো সেই তালিকা থেকে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও মানুষের জীবনের নিরাপত্তার জন্য ড. ইউনূসকে সম্মানিত করার জন্য একটা অংশ থেকে আবদার রয়েছে।
বিএনপি ড. ইউনূসকে সম্মানিত করার ইচ্ছা আছে। দু’বছর ড. ইউনূসকে ক্ষমতা দেয়ার জন্য বিশেষ শ্রেণি থেকে জোরালো দাবি করা হয়েছে। যাতে নির্বাচন পরবর্তী মানুষের নিরাপত্তা থাকে, দেশে আইনের যে ভঙ্গুর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা যেন মানুষের অধিকারের আলোকে নির্মিত হয়, মেরামত হয়।
তবে ড. ইউনূসকে ফুল পাওয়ার দেয়ার ক্ষেত্রে ঐকমত্য হয়নি বিএনপি। সম্মানিত করার জায়গায় সবাই ঐকমত্য হয়েছে। এতেই উভয়পক্ষের সন্তুষ্টি রয়েছে বলে জানা গেছে। ড. ইউনূস, রেজা কিবরিয়া, মাহমুদুর রহমান মান্না— সবাইকে নিয়ে অঙ্কিত পরিকল্পনায় বিএনপি হাঁটছে। সেই আলোকেই দলে এখন মাঠে ও মাঠের বাইরে কাজ চলছে।
প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত থাকা সূত্র বলছে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তারেক রহমান ও বিশেষ একটি গোষ্ঠীকে গুরুত্ব দিয়ে অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিল। যেমনভাবে একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময়ে হয়েছিল। খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে ড. কামাল হোসেনকে বিএনপির সংসারে এনে শেখ হাসিনার সাথে সংলাপে বসেছিল এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল।
ফখরুলের ওই ভূমিকার কারণে বিএনপি চূড়ান্তভাবে বিচ্ছিন্ন ও হারিয়ে যাওয়া অভিযোগ উঠে। এবারো ফখরুল এক ব্যক্তির নির্দেশে পুরোনো প্রেসক্রিপশন বাস্তবায়নে চেষ্টা করেছিলেন। খালেদা জিয়াকে চির মাইনাস দৃশ্যত রূপ দেখে সিনিয়র স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য শক্ত হয়ে বসেছিলেন যার কারণে খালেদা জিয়া ও জিয়াউর রহমানের আন্দোলনের ছকে ফেরত আসতে হয়েছে ফখরুলদের।
দলের সব চাইতে সিনিয়র সদস্য ড. খোন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়— সবাই খালেদা জিয়া ও তৃণমূলের পক্ষে থাকায় বিশেষ উদ্দেশে বাস্তবায়ন হয়নি। খালেদা জিয়ার ওপর দেশের সাধারণ মানুষ, নেতাকর্মীদের কাছে বিতর্কমুক্ত জনপ্রিয়তা, দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অবস্থানের ফসল ঘরে তুলতে শেষ বেলায় ঐকমত্য হওয়া গেছে। খালেদা জিয়া ছাড়া এখন নতুনভাবে কিছু চিন্তা করলে সব কিছুই বিএনপিকে হারাতে হবে। খালেদা জিয়া রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর সময়ে প্রয়োজনে সব কিছুই করা যাবে বলে মত দেয়া হয়েছে।
তারেক রহমান আজ হোক কাল হোক এ দেশের নেতৃত্ব দেবেন। দেশে ফিরে আসবেন। তার আগে অবশ্যই খালেদা জিয়াকে আরেকবার প্রধানমন্ত্রী বানাতে হবে এবং কালের দুঃসময়ে খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা ছাড়া কোনোভাবেই ক্ষমতায় আসা সম্ভব নয়। এমন পরিস্থিতে তারেক রহমানকে বাংলাদেশের রাজনীতি ও রাষ্ট্রক্ষমতায় আনতে হলেও খালেদা জিয়াকে আগে প্রধানমন্ত্রী বানাতে হবে। যৌক্তিক দাবি ও দলের বড় অংশের চাপে সেটিই এখন চূড়ান্ত।
দলের জোটের, ঐক্যের এবং বিশেষ শ্রেণিকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। তবে গত নির্বাচনে যারা তথ্য ফাঁসের নাটের গুরু ছিল তাদেরকে বিশেষ নজরে রাখা হয়েছে। যদি এবারো বিশ্বাসঘাতকতা করা হয় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আগে দলে তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দলের বড় একটি অংশ থেকে ধারণা করা হচ্ছে রোগাক্রান্ত শ্রেণির চিকিৎসা করা হচ্ছে , এবার অন্তত নিজেদের অবস্থানের জন্য হলেও সবাই বিএনপির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। খালেদা জিয়াকে শেষ বেলায় সম্মান দিতে সবাই ঐকমত্য থাকবে। দল টিকলেই সবার ব্যবসা ও অবস্থানসহ সব কিছুই টিকবে। অন্যথায় দেউলিয়া দেশের সাথে নিজের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারও হারাতে হবে। সে জন্য দলের সবাই এবার এ সরকারকে হঠাতে এক থাকবে বলে মনে করছেন বিএনপির নীতিনির্ধাররা।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির এক সদস্য আমার সংবাদকে জানান, দল থেকে আগামী নেতৃত্বের জন্য বার্তা দেয়া হয়েছে। মাঠে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। খালেদা জিয়ার সাথে বিএনপির রাজনীতি দেশের অবস্থান অনেক কিছুই নির্ভর করছে। অল্প কিছু সময়ের জন্য হলেও খালেদা জিয়ার রাষ্ট্রীয় নেতৃত্ব অনেক বেশি প্রয়োজন। কেন্দ্র থেকে এমনই বার্তা দেয়া হয়েছে।
খালেদা জিয়ার নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন আমার সংবাদকে বলেছেন, ‘এই সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচনে যাবো না। তবে বিএনপি আগামীতে যে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবে, সেই নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। সেই নির্বাচনে আমাদের সাথে যারা থাকবেন, তাদের নিয়ে সরকার গঠন করব। সেই সরকারের প্রধানমন্ত্রী হবেন খালেদা জিয়া। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন, রাজপথে থাকতে হবে। সরকারকে হঠাতে প্রোগ্রাম হবে এবং কর্মসূচি আসবে। আমাদের মাঠে থাকতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা যে নির্বাচন চাই সেটা হলো, আগে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ বাতিল করতে হবে। এরপর নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে। সেই সরকার যে নির্বাচন কমিশন গঠন করবে সেই কমিশনের সাথে আমরা সংলাপ করব।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আমার সংবাদকে বলেছেন, ‘জনগণের নেত্রী খালেদা জিয়াকে জনগণের সামনে আসতে না দেয়া এবং তিনি যেন রাজনীতিতে সক্রিয় হতে না পারেন সে জন্য ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করছে আওয়ামী লীগ। আমরা বিশ্বাস করি, ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত ব্যর্থ হবে এবং খালেদা জিয়া আবার জনগণকে সাথে নিয়ে ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট দানবীয় শক্তিকে পরাজিত করে নেতৃত্ব দেবেন। খালেদা জিয়া আমাদের সেই অনুপ্রেরণা দিয়েছেন।’