ইউএনও-শিক্ষা কর্মকর্তাকে শোকজ
ফরিদপুরঃ জেলার বোয়ালমারীতে ‘বেআইনি, স্বেচ্ছাচারী এবং ন্যায়নীতি ও প্রচলিত আইনের পরিপন্থী’ কাজ করার অভিযোগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোশারেফ হোসেন এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন আদালত।
১৬ এপ্রিল শুনানি শেষে এ আদেশ দেন বোয়ালমারী সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে বিচারক বীনা দাস। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার আদালতের এ আদেশ হাতে পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন ইউএনও এবং উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। নোটিশ পাওয়ার ১০ দিনের মধ্যে ওই দুই কর্মকর্তাকে জবাব দিতে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন আদালত। এর আগে ১২ এপ্রিল উপজেলার রূপাপাত ইউনিয়নের বামনচন্দ্র উচ্চবিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি কামরুজ্জামান কাইয়ুম মোল্লা বাদী হয়ে চারজনকে বিবাদী করে ওই মামলা করেন। ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এ আদেশ দেন।
মামলার বিবাদীরা হলেন ইউএনও মোশারেফ হোসেন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও অগ্রণী ব্যাংকের বোয়ালমারী শাখার ব্যবস্থাপক।
মামলার এজাহারে ওই বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি কামরুজ্জামান কাইয়ুম মোল্লা অভিযোগ করে বলেন, তিনিসহ ১২ জন ওই বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির দায়িত্বে আছেন। এর মধ্যে ব্যবস্থাপনা কমিটির সঙ্গে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান শেখের মতবিরোধ দেখা দেয়। এ ছাড়া প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ঠিকমতো হিসাব না দেওয়া, সভা না ডাকা, শিক্ষকদের মধ্যে গ্রুপিং ও রাজনৈতিক বিভাজনসহ বিধিবহির্ভূত কাজ করার অভিযোগ ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রধান শিক্ষককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে জ্যেষ্ঠ শিক্ষক আবু সাইদকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবু সাইদ বিদ্যালয়ের ২০ জন শিক্ষকের প্রাপ্য ৪ লাখ ৮ হাজার ২২ টাকা বেতন বিল প্রস্তুত করে অগ্রণী ব্যাংকে জমা দেন। কিন্তু ব্যাংক অজানা কারণে শিক্ষকদের বেতন প্রদান করেনি। অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক জানান, ইউএনও ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার পক্ষ থেকে তাঁকে নিষেধ করায় তিনি টাকা দেননি। তবে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক আবার বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষর ছাড়াই শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনের বিল ছেড়ে দেন। এ ব্যাপারে ব্যাংক থেকে জানানো হয় ইউএনওর চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বেতনের টাকা দেওয়া হয়েছে।
ইউএনওর ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির ৮ সদস্য পদত্যাগ করায় বর্তমানে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের উদ্যোগে একটি অ্যাডহক কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। সে কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০২১ সালের ২৮ মার্চের ১৭ দশমিক ১০ ধারা অনুযায়ী অ্যাডহক কমিটির অবর্তমানে নিম্ন স্বাক্ষরকারী (ইউএনও) বেতন বিলে স্বাক্ষর করে ব্যাংকে পাঠানো এবং পরে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রেরণ করা হলো।
তবে মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির আটজন সদস্য পদত্যাগ করেছেন, এই কথা সত্য নয়। বর্তমান কমিটি বাতিল হয়নি কিংবা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ভেঙেও দেয়নি। এ ছাড়া কোনো অ্যাডহক কমিটিও গঠন করা হয়নি। ইউএনও বেতন বিলে যে স্বাক্ষর করেছেন তা এখতিয়ার বহির্ভূত ও বেআইনি। ইউএনওর এই কার্যক্রম বেআইনি, স্বেচ্ছাচারী এবং ন্যায়নীতি ও প্রচলিত আইনের পরিপন্থী হওয়ায় এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দাবি জানানো হয়েছে।
বাদীপক্ষের আইনজীবী মানিক মজুমদার বলেন, ১৬ এপ্রিল এ মামলার শুনানি হয়। শুনানি শেষে আদালত ১ ও ২ নম্বর বিবাদী যথাক্রমে ইউএনও ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে নোটিশ পাওয়ার ১০ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য আদেশ দিয়েছেন।
জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, আদালতের নির্দেশনা তিনি গতকাল হাতে পেয়েছেন। তাঁকে ১০ কর্মদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। তিনি ওই সময়ের মধ্যে জবাব দিয়ে দেবেন।
জানতে চাইলে বোয়ালমারীর ইউএনও মোশারেফ হোসেন বলেন, ‘আদালত শোকজ করেছেন। আমরা আমাদের বক্তব্য আদালতেই পেশ করব, কোন প্রক্রিয়ায় এবং কোন এখতিয়ারের ভিত্তিতে শিক্ষকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বেতন প্রদান ছাড়া শতবর্ষী ওই বিদ্যালয়ের আর্থিক আর কোনো কাজ করা হয়নি।’
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৯/০৪/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়